মুসা, গোয়েন্দা সহকারীর দিকে চেয়ে বলল নথি। ওকে ভোটে হারাতে পারব আমরা, কি বল?
নিশ্চয় পারব! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। পাথর দেখে কি হবে? জানিই তো ক রঙের হবে পাথরগুলো, কেমন হবে। ওগুলো দেখে কি করব?
মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে দেখলে…
…দেখলে কি হবে? কিশোরকে থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইল রবিন। বড় দেখাবে, এই তো?
ক্রিকেট বল, নাহয় ফুটবলের মতই দেখাল, হাতের আঙুল ওপরের দিকে বাঁকা করে নাড়ল মুসা। আমাদের কি? হ্যাঁ, একটাই কাজ করা যেতে পারে ওই পাথর দিয়ে, গুলতিতে লাগিয়ে ছুঁড়ে পাখি মারা যেতে পারে।…আরে হা হা, এই তো আবিষ্কার করে ফেলেছি, কি করে চুরি করা যায়! গুলতির সাহায্যে হারটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারলেই হল! বাইরে চোরের সঙ্গী বড় ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, লুফে নেবে ঝুড়িতে! তারপর ছুটে পালাবে! বা বা, এই তো একটা উপায় বের করে ফেলেছি! পানির মত সহজ কাজ!
চমৎকার বুদ্ধি! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
কয়েক মুহূর্ত চিন্তায় মগ্ন রইল কিশোর। তারপর মাথা নাড়ল ধীরে ধীরে। মোটেই চমঙ্কার নয়। দুটো ফাঁক রয়েছে। ঝুড়িতে নিল যে, সে হয়ত পালাতে পারবে, কিন্তু যে ছুঁড়ল, সে ঘরেই থেকে যাবে তখনও, ধরা পড়বে গার্ডের হাতে। আরেকটা দুর্বলতা হল, মুসা আর রবিনের দিকে একবার করে তাকাল গোয়েন্দাপ্রধান। পিটারসন মিউজিয়মের যে ঘরে রাখা হয়েছে রেইনবো জুয়েলস, ওই ঘর থেকে জানালা দিয়ে ছোঁড়া যাবে না জিনিসটা। কারণ… নাটকীয়ভাবে চুপ করল সে।
কারণ? সামনে ঝুঁকল মুসা।
হ্যাঁ, কেন ছেঁড়া যাবে না? মুসার পর পরই প্রশ্ন করল রবিন।
কারণ, পিটারসন মিউজিয়মে কোন জানালাই নেই, মুচকে হাসল কিশোর। চল রওনা হয়ে যাই, দেরি না করে।
.
০২.
ঘন্টাখানেক পর ছোট পাহাড়টার গোড়ায় এসে পৌঁছল তিন গোয়েন্দা। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে পিটারসন মিউজিয়ম। গ্রিফিথ পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা পথ চলে গেছে উপত্যকা ধরে। এখান দিয়ে প্রায়ই পার্কে পিকনিক করতে যায় লোকে, বিশেষ করে ছেলেমেয়েরাই বেশি যায়। বিরাট বাড়িটার দুদিকে দুটো শাখা যেন ঠেলে বেরিয়েছে, দুটোরই ছাতের জায়গায় রয়েছে বিশাল দুটো গম্বুজ। বাড়ির সামনে-পেছনের ঢাল সবুজ ঘাসে ছাওয়া। ঘুরে ঘুরে একটা পথ উঠে গেছে বাড়ির পেছনে, আরেকটা পথ নেমে এসেছে; একটা ওঠার, আরেকটা নামার জন্যে।
মোটর কার আর স্টেশন ওয়াগনের সারি ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে মিউজিয়মের দিকে। পথের একপাশ ধরে উঠতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা। ঠাসাঠাসি করে গাড়ি রাখা হয়েছে পার্কিং লট-এ, আরও এসে ঢুকছে। ঢোকার সময় তো ঢুকেছে, বেরোনর সময় বুঝবে ঠেলা, ভাবল কিশোর। চারদিকে ভিড়, বেশির ভাগই বাচ্চা ছেলেমেয়ে। নীল ইউনিফর্ম পরা কাব স্কাউটরা বিশৃঙ্খলভাবে ছোটাছুটি করছে এদিক-ওদিক, সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে তাদের ডেন মাদার (পরিচালিকা)। গার্ল স্কাউটের ছোটাছুটি বিশেষ করছে না, কিন্তু তাদের কলরবে কান ঝালাপালা। কে যে কি বলছে, বোঝার উপায় নেই। বাচ্চা ব্রাউনিদের কাছাকাছিই রয়েছে কয়েকজন লম্বা বয়স্কাউট, বেল্টে গোঁজা ছোট্ট কুঠার, হাতে ক্যানভাসের ব্যাগ।
জায়গাটা ভালমত দেখে নেয়া দরকার, সহকারীদেরকে বলল কিশোর। আগে মিউজিয়মের বাইরেটা দেখব।
বাড়ির পেছনে এক চক্কর দিল তিনজনে। একসময় অনেক জানালা ছিল, কিন্তু এখন বেশির ভাগই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইট গেঁথে। নিচের তলা আর গম্বুজওয়ালা ঘরগুলোতে একটা জানালাও নেই, সব বুজিয়ে দেয়া হয়েছে। গুলতির সাহায্যে কেন অলঙ্কার চুরি করা যাবে না, বুঝতে পারছে এখন রবিন আর মুসা। জানালাই নেই, ছুঁড়বে কোন পথ দিয়ে? গম্বুজওয়ালা একটা ঘরের দিকে এতই মনোযোগ তার, ডেন মাদারের সঙ্গে কয়েকজন কাব স্কাউটকে দেখতেই পেল না, পড়ল গিয়ে একজনের গায়ে। আউউ!..ইসস, সরি!
ঘাসের ওপর চিত হয়ে পড়েছে একটা ছেলে, রবিনের ধাক্কা খেয়ে। লজ্জিত হাসি হাসল ছেলেটা, ঝিক করে উঠল একটা সোনার দাঁত। হাত ধরে টেনে তাকে। উঠতে সাহায্য করল রবিন। আরেকবার দুঃখ প্রকাশ করল। ডেন মাদারের সঙ্গে অনেকখানি এগিয়ে গেছে অন্য স্কাউটেরা, তাদেরকে ধরতে ছুটল ছেলেটা।
আরে আরে, দেখ! হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিলোর।
কি! ভুরু কুঁচকাল মুসা, ঠোঁট বাঁকাল। কি দেখব! বাড়ির পেছনটা ছাড়া তো আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না!
তারগুলো দেখতে পাচ্ছ না? ওই, ওই যে? পোল থেকে নেমে এসেছে, ইলেকট্রিক তার। সবগুলোকে এক করে পাকিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে একটা গর্তের ভেতর দিয়ে! ওই তো, বাড়িটার এক কোণে! সহজেই কেটে ফেলা যায়!
তোমার যা কথা! বলল রবিন। কে কাটতে যাবে?
রত্নচোরেরা। তবে ওগুলো কাটলে বড় জোর আলো নেবাতে পারবে, অ্যালার্ম সিস্টেম অকেজো হবে না। সে যা-ই হোক, এটা একটা দুর্বলতা!
বাড়ির সামনে-পেছনে ঘোরা শেষ করল তিন গোয়েন্দা। সামনে দিয়ে ভেতরে ঢোকার গেটের দিকে এগোল। ওরা ইউনিফর্ম পরে আসেনি, কাজেই টিকেট কিনতে হল। পঁচিশ সেন্ট করে হাফ টিকেটের দাম।
গেট পেরিয়ে প্যাসেজে এসে ঢুকল তিনজনে।
তীর চিহ্ন ধরে এগিয়ে যাও, পথের নির্দেশ দিল একজন গার্ড।
ডান শাখার বিশাল এক হলঘরে এসে ঢুকল তিনজনে। গম্বুজওয়ালা এই ঘরটা প্রায় তিন-তলার সমান উঁচু। দেয়ালের মাঝামাঝি উচ্চতায় অর্ধেকটা ঘিরে রয়েছে। ব্যালকনি। বন্ধ নির্দেশিকা ঝুলছে ওখানে।