আছে, ছবির পেছনেই, বলল রবিন।
কাল সকালেই জানা যাবে, নিশ্চিত হতে পারছে না যেন কিশোর। এখন চল, খেয়ে নিই। তুমি খেয়ে বাড়ি চলে যাও, আমাকে কিছু জিনিসপত্র গোছাতে হবে। রত্নদানো ধরতে দরকার হবে। মুসা এলে তাকে নিয়ে মিস ভারনিয়ার। বাড়িতে চলে যাব। কি হল না হল সকালে ফোনে জানাব তোমাকে। ফোনের কাছাকাছি থেক। আমি ফোন করলে পরে বোরিসকে নিয়ে আমাদের আনতে। যেয়ো।
ঠিক আছে, মাথা কাত করল রবিন। আচ্ছা, সত্যিই কি রত্নদানো আছে? নাকি ওসব মহিলার অতিকল্পনা? হয়ত ববের কথাই ঠিক, নিশিডাকে পায় তাকে।
অসম্ভব নয়। ঘুমের ঘোরে অদ্ভুত সব কাণ্ড করে বসে মানুষ। এক ভদ্রলোকের কথা জানি, কয়েকটা মুক্তো নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকত। খালি ভাবত, গেল বুঝি চুরি হয়ে। শেষে, এক রাতে উঠে সেফ থেকে মুক্তোগুলো বের করে লুকিয়ে রাখল আরেক জায়গায়, ঘুমের ঘোরে। সকালে উঠে সেফে ওগুলো না দেখে চেঁচামেচি শুরু করে দিল। রাতে নিজেই যে সরিয়েছে, কিছুতেই মনে করতে পারল না। আরেক রাতে ঘুমের ঘোরেই মুক্তোগুলো বের করে এনে সেফে আগের জায়গায়। রেখে দিল আবার। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, মিস ভারনিয়াও তেমন কিছু করে থাকতে পারেন। আজ রাতেই সেটা বুঝব। যদি সত্যিই, রবিনের দিকে চেয়ে হাসল গোয়েন্দাপ্রধান, রত্নদানো আসে, তিন গোয়েন্দার ফাঁদে ধরা পড়তেই হবে তাকে।
.
০৯.
খুব ব্যস্ত রত্নদানোরা, গাঁইতি দিয়ে সমানে মাটি কুপিয়ে চলেছে, সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় রয়েছে খুদে মানুষগুলো, আবছা দেখতে পাচ্ছে রবিন। দ্রুত মনস্থির করে নিয়ে পা টিপে টিপে ওদের দিকে এগোল সে। কেবলই মনে হচ্ছে, ইস, মুসা আর কিশোর যদি থাকত সঙ্গে! সুড়ঙ্গের বেশি গভীরে যেতে সাহস হচ্ছে না তার, কিন্তু এতখানি এসে ফিরেও যেতে চাইছে না।
বুকের ভেতরে জোরে জোরে লাফাচ্ছে হৃৎপিণ্ডটা, রবিনের ভয় হচ্ছে, রত্নদানোদের কানে চলে যাবে ধুকপুক শব্দ। কিন্তু থামল না সে। হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে লাগল। রত্নদানোরা তার দিকে পেছন করে মাটি খোঁড়ায় ব্যস্ত।
শুকনো সুড়ঙ্গ, গাঁইতির ঘায়ে ধুলো উড়ছে, নাকে মুখে ঢুকে যাচ্ছে। হাঁচি পেল রবিনের। চেপেচুপে রাখার চেষ্টা করল, পারল না, হ্যাচচো করে উঠল।
ধীরগতি ছায়াছবির মত যেন ধীরে ধীরে ঘুরল সবকটা রত্নদানো, কোপ মারার। ভঙ্গিতে তুলে ধরেছে গাঁইতি।
ছোটার চেষ্টা করল রবিন। কিন্তু আঠা দিয়ে তার হাত-পা মাটিতে সেঁটে দেয়া হয়েছে যেন, এক চুল নড়াতে পারল না। চেঁচানর চেষ্টা করল, কিন্তু আওয়াজ বেরোল না গলা দিয়ে।
লাল টকটকে চোখ মেলে নীরবে চেয়ে আছে রত্নদানোরা। এই সময়ে রবিনের কানে এল একটা শব্দ। গায়ে মোলায়েম স্পর্শ। আবার ছুটে পালানর চেষ্টা করল। সে, এবারেও ব্যর্থ হল।
কাঁধ চেপে ধরল শক্ত আঙুল, জোরে ঝাঁকুনি দিল। ডাক শোনা গেল, রবিন! এই, রবিন! এমন করছিস কেন?
ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে গেল রত্নদানোরা। মিলিয়ে গেল সুড়ঙ্গ। নড়েচড়ে উঠল রবিন, চেঁচাল, ছেড়ে দাও! আমাকে ছেড়ে দাও!
এই, রবিন, ওঠ, চোখ মেল!
আস্তে করে চোখ মেলল রবিন। পাশে দাঁড়িয়ে তার মা।
দুঃস্বপ্ন দেখছিলি? মা বললেন। ঘুমের মধ্যে এমন সব শব্দ করছিলি, যেন গলা টিপে ধরেছে কেউ। ওঠ, বারান্দায় খানিক হেঁটে আয়।
হ্যাঁ, মা, একটা খুব খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম। জাগিয়ে দিয়ে ভাল করেছ। মা, কিশোর ফোন করেছিল?
কিশোর? এত রাতে ও ফোন করতে যাবে কেন? যা, বারান্দা থেকে হেঁটে এসে শুয়ে পড়। রাতদুপুর এখন।
হাঁটতে হবে না।
তাহলে আবার তো দুঃস্বপ্ন দেখবি।
দেখব না, পাশ ফিরে কোলবালিশটা টেনে নিল রবিন।
মুসা আর কিশোরের কথা ভাবল, ওরা এখন কি করছে?
.
লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলীর দিকে ছুটে চলেছে ট্রাক। বোরিস চালাচ্ছে। পাশে বসেছে কিশোর আর মুসা।
রত্নদানো ধরার জন্যে কি কি যন্ত্রপাতি এনেছে, মুসাকে এক এক করে দেখাচ্ছে কিশোর। এই যে ক্যামেরা, স্পেশাল ক্যামেরা, দশ সেকেণ্ডেই ছবি তৈরি হয়ে যায়। ভাঙা অবস্থায় কিনেছিলাম একটা ছেলের কাছ থেকে, টুকটাক যন্ত্র লাগিয়ে সারিয়ে নিয়েছি। চমৎকার কাজ দেয় এখন। এই যে, ফ্ল্যাশগানও রয়েছে। রত্নদানো এলেই টুক করে ছবি তুলে নেব আগে। ক্যামেরাটা রেখে ব্যাগ থেকে দুজোড়া দস্তানা বের করল। ওগুলোর তালুর কাছে চামড়া লাগানো। দানো ব্যাটাদের আঁকড়ে ধরার জন্যে, পিছলে ছুটে যেতে পারবে না। ব্যাটাদের হাতে লম্বা চোখা নখ থাকার কথা, খামছি দিলেও এই দস্তানার জন্যে লাগাতে পারবে না।
সেরেছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসার। রত্নদানো আসবে, ধরেই নিয়েছ মনে হচ্ছে?
আগে থেকেই তৈরি থাকা ভাল। টর্চ এনেছি, আর এই যে দড়ি, নাইলনের, ভীষণ শক্ত। দানো ব্যাটাদের ধরে বাঁধলে ছিঁড়তে পারবে না।
দড়ি আর দস্তানা রেখে একটা ওয়াকি-টকি বের করল কিশোর। রেঞ্জ কম। যন্ত্রটার, কিন্তু দরকারের সময় খুব কাজে লাগে। যোগাযোগ রাখায় খুব সুবিধে। ওটা রেখে টেপ-রেকর্ডার বের করে দেখাল মুসাকে। রত্নদানোরা কোনরকম শব্দ। করলে, সেটা রেকর্ড করবে।
যন্ত্রপাতির ব্যাগটার দিকে চেয়ে আপনমনেই মাথা নাড়ল কিশোর। সবই এনেছি। আর কিছু বাকি নেই। ও হ্যাঁ, মুসা, চক এনেছ?