কপাল ভাল, শুঁটকির পাল্লায় পড়নি, হেসে বলল রবিন।
শুঁটকি? মিরো অবাক।
একটা ছেলে, আমাদের দেখতে পারে না, প্রসঙ্গটা চাপা দিয়ে দিল কিশোর। হ্যাঁ, মিরো, গোল্ডেন বেল্ট খুঁজে পাওয়া গেছে?
না, কিশোর-স্যান, হতাশভাবে মাথা নাড়ল মিরো। এত খুঁজল পুলিশ আর আমাদের গার্ডরা, লাভ হল না। খুব মুষড়ে পড়েছে বাবা। তার নাকের ডগা দিয়ে বেল্ট চুরি করে নিয়ে গেল চোর, কিছুই করতে পারল না, এই দুঃখেই কাতর হয়ে পড়েছে। বেল্টটা না পাওয়া গেলে তার চাকরি থাকবে না, লজ্জা তো আছেই।
কিছু একটা বলা দরকার, কিন্তু কথা খুঁজে পেল না রবিন।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে হঠাৎ বলল, যা যা জেনেছ, সব খুলে বল তো মিরো।
নতুন তেমন কিছুই জানার নেই, খবরের কাগজে প্রায় সবই জেনেছে কিশোর। আবার সে-সবই শুনল মিরোর মুখে। কোন্ পথে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোল্ডেন বেল্ট, জানা যায়নি। রেইনবোঁ জুয়েলস না নিয়ে কেন বেল্টটা নিল, এটাও একটা বড় রহস্য। পুরানো কথা সব।
আমার ধারণা, গার্ডদের কেউই চুরি করেছে, বলল রবিন।
মনে হয় না, মাথা নাড়ল মিরো। অনেক বেছে, দেখে শুনে তবে নেয়া হয়েছে গার্ড। প্রত্যেকেই বিশ্বাসী। তবু সবার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলেছে বাবা। কাউকেই সন্দেহ হয়নি তার।
আচ্ছা, মিস্টার মার্চের খবর কি? জিজ্ঞেস করল কিশোর। তার সম্পর্কে কি জেনেছে পুলিশ।
মিরো জানাল, পুলিশের দৃঢ় ধারণা ছিল, বেল্ট চুরির সঙ্গে মার্চও জড়িত। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা। প্রশ্ন, তাহলে মিউজিয়মে সেই অভিনয় কেন করল মার্চ? স্রেফ টাকার জন্যে। চুরির আগের দিন নাকি ফোনে এক মহিলা যোগাযোগ করেছে তার সঙ্গে (মহিলাকে চেনে না অভিনেতা, দেখেনি), বলেছে ছোট্ট একটা অভিনয়ের জন্যে পঞ্চাশ ডলার দেয়া হবে মার্চকে। লোভ দেখিয়েছে, এতে টাকা তো পাবেই অভিনেতা, তার নামও ছড়িয়ে পড়বে হলিউডে। পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে তার নাম ছাপা হবে। এরপর নাকি একটা ছবি করবে। মহিলার স্বামী, ছবির নাম হবে দ্য গ্রেট মিউজিয়ম রবারি। সেই ছবিতে অভিনয়ের। সুযোগ দেয়া হবে মার্চকে। ব্যস, মজে গেল অভিনেতা। রাজি হয়ে গেল মিউজিয়মে। ছোট্ট অভিনয়টুকু করতে। সেদিনই ডাকে তার কাছে এল ছোট্ট একটা প্যাকেট, তাতে একটা নকল পাথর, আর একটা খামে পঞ্চাশ ডলার।
যা ভেবেছি, বলল কিশোর। বেল্ট চুরির সঙ্গে জড়িত নয় টোড মার্চ। কি। করে কোন্ পথে বেল্টটা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এখনও বুঝতে পারছে না পুলিশ, না?
না, পারছে না।
যদি বলি, বেল্টটা এখনও মিউজিয়মেই রয়েছে, বোম ফাটাল যেন কিশোর।
মিউজিয়মে! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
কিন্তু মিউজিয়মের তো কোথাও খোঁজা বাদ নেই! প্রতিবাদ করল মিরো। বেল্ট লুকানর আর জায়গা কোথায়, কিশোর-স্যান?
আজ আরেকটা কেস নিয়ে কাজ করতে করতে হঠাৎ বুঝে গেলাম কোথায় আছে গোল্ডেন বেল্ট। আমার ধারণা— নাটকীয়ভাবে চুপ করল কিশোর।
রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে রবিন আর মিরো।
রবিন, কিশোর বলল। মিস ভারনিয়ার বাড়িতে যে ছবিটা পড়ে গিয়েছিল…
হ্যাঁ। বল।
বড়সড় ভারি ছবি, যেন রবিন দেখেনি, তাকে ছবিটা কেমন বোঝাচ্ছে কিশোর, ধরে তুললাম। প্রায় আড়াই ইঞ্চি মত মোটা ফ্রেম, ছবির পেছনে জায়গা রয়েছে অন্তত দুই ইঞ্চি। ওই রকম ফ্রেম কিংবা তার চেয়েও বড় অনেক ফ্রেমে বাঁধাই ছবি ঝোলানো রয়েছে মিউজিয়মে। তারমানে…
তারমানে, চেঁচিয়ে উঠল রবিন। ছবির পেছনের ওই খালি জায়গায় গোল্ডেন বেল্ট লুকিয়ে রাখা হয়েছে! অন্ধকারে বেল্টটা তুলে নিয়ে ওখানে ঢুকিয়ে দিয়েছে চোর!
চোরেরা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বলল কিশোর। মিস্টার মার্চকে ফোন করেছিল যে মহিলা, চোরের সঙ্গে সে-ও নিশ্চয় জড়িত।
আর শোনার অপেক্ষা করল না মিরো, লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। সারা মিউজিয়ম খুঁজেছে ওরা, কিন্তু ছবির পেছনে খুঁজে দেখার কথা মনে আসেনি কারও! এখুনি গিয়ে বাবাকে বলছি।
উত্তেজনা কমার অপেক্ষায় থাকবে চোর, মিরোর কথা যেন শোনেইনি কিশোর। তল্পিতল্পা গুছিয়ে একদিন সুকিমিচি কোম্পানি চলে যাবে, তখন সময় বুঝে গিয়ে বেল্টটা নিয়ে আসবে। ও হ্যাঁ, তোমার বাবাকে বল, ব্যালকনিতে ঝোলানো ছবিও যাতে বাদ না দেয়।
কিন্তু ব্যালকনিতে ওঠার পথ তো বন্ধু!
তাতে কি? একটা দড়ি হলেই উঠে যাওয়া যায় ওখানে। লুকানর সবচেয়ে ভাল জায়গা সারা মিউজিয়মে।
থ্যাঙ্ক ইউ, কিশোর-স্যান! জ্বলজ্বল করছে মিরোর চোখ। তোমার অনুমান ঠিকই হবে! আমি যাই, বাবাকে গিয়ে বলি।
আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, হাত তুলল কিশোর। চাচী খেয়ে যেতে বলেছে।
আজ না, ভাই, আরেকদিন। আমি চলি, আর দাঁড়াল না মিরো। প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেল ইয়ার্ড থেকে।
কিশোরের দিকে চেয়ে হাসল রবিন। গোল্ডেন বেল্ট রহস্য ভেদ হয়ে গেল। আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিল তো, এখন লজ্জা পাবেন মিস্টার মুচামারু।
অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। আরও একটা ব্যাপার হতে পারে, আপনমনেই বলল সে। কিন্তু—নাহ্, সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বেল্টটা বের করে নিয়ে যাওয়া হয়নি, তারমানে ভেতরেই আছে এখনও। তাহলে ছবির পেছনে ছাড়া লুকিয়ে রাখার আর জায়গা কোথায়?