হ্যাঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। রহস্যময় শব্দের ভালই ব্যাখ্যা। গোল্ডেন বেল্ট আর মিউজিয়মের ব্যাপারটাও বেশ ভালই বোঝানো হয়েছে! জিভ আর টাকরার সাহায্যে বিচিত্র শব্দ করল গোয়েন্দাপ্রধান। কিন্তু যাকগে, ওটা আমাদের কাজ নয়। আমরা এসেছি মিস ভারনিয়াকে সাহায্য করতে। চল, দেখাদেখির কাজটা শেষ করে ফেলি।
গলিটা দেখল ওরা, ইটের দেয়াল আর কাঠের বেড়া পরীক্ষা করল, পাতাবাহারের বেড়ার প্রতিটি ইঞ্চি খুঁটিয়ে দেখল! রত্নদানো বেরোনর কোন পথই নেই।
নাহ, কিছু পাওয়া গেল না! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করেছে কিশোর। বুঝতে পারছি না!
এখন বোঝা যাবেও না! মুখ বাকাল মুসা। খিদেয় পেট জ্বলছে, বাড়ি যাবে নাকি তাই বল?
হ্যাঁ, এখানে এখন আর কিছু করার নেই। চল, যাই।
গভীর মনোযোগে খবরের কাগজ পড়ছে বোরিস। ছেলেরা গাদাগাদি করে। বসল তার পাশে। কাগজটা ভাজ করে রেখে ইঞ্জিন স্টার্ট দিল সে।
বড় রাস্তায় এসে উঠল ট্রাক, ছুটে চলল দ্রুতগতিতে।
একটা প্রশ্ন কেবলই খোঁচাচ্ছে রবিনকে। গোল্ডেন বেল্ট কি করে চুরি হয়েছে? কিশোরকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল রবিন। গভীর চিন্তায় মগ্ন গোয়েন্দাপ্রধান। নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে চলেছে ঘনঘন। এখন তাকে প্রশ্ন। করলেও জবাব পাওয়া যাবে না।
অগত্যা কৌতূহল চেপে চুপ করে রইল রবিন।
.
০৮.
রকি বীচে পৌঁছুল ট্রাক। স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকল।
ট্রাক থেকে সবার আগে নামল মুসা। এক্ষুণি বাড়ি যেতে হবে আমাকে। ভুলেই গিয়েছিলাম, আজ বাবার জন্মদিন। স্পেশাল খাবার রাঁধবে মা।
ঠিক আটটায় আসবে, বলল কিশোর। বাড়িতে বলে এস, মিস্টার। ক্রিস্টোফারের এক বান্ধবীর বাড়িতে রাতে থাকবে। আগামীকাল সকাল নাগাদ। ফিরবে।
ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেল মুসা। ট্রাক থেকে কিশোরকে নামতে দেখে অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন মেরিচাচী।
এই যে, কিশোর, এসেছিস, বললেন চাচী। আধঘণ্টা ধরে তোর সঙ্গে দেখা করার জন্যে ছেলেটা বসে আছে।
আমার সঙ্গে দেখা করার জন্যে! কে, চাচী?
নাম বলল মিরো মুচামারু। জাপানী, কিন্তু ভাল ইংরেজি বলে। কত কথা বলল আমাকে। মুক্তার কথা বলল। ট্রেনিং দেয়া ঝিনুক নাকি আছে, মুক্তা ফলানতে। কাজে লাগে ওগুলো। আরও কত কথা! হাসলেন মেরিচাচী।
মনে মনে কিশোর হাসল। ইয়ার্ডের কাজ করার সময় চাচীর এই হাসি কোথায় থাকে, ভেবে অবাক হল সে। কই, চল তো দেখি? রবিন, এস। হাঁটতে হাঁটতে বলল সে, চাচী, আজ রাতে মিস ভারনিয়ার বাড়িতে থাকতে হবে। কি সব শব্দ নাকি রাতে বিরক্ত করে মহিলাকে। আমি আর মুসা আজ রাতে পাহারা দেব। ঠিক করেছি।
তাই নাকি! কিশোরকে অবাক করে দিয়ে এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। চাচী। ঠিক আছে, যাস। বোরিসকে ছেড়ে দিস, সকালে গিয়ে নিয়ে আসবে আবার। কাঁচে ঘেরা অফিসের সামনে এসে ডাক দিলেন তিনি, মিরো, কিশোর এসেছে। এই, রবিন, না খেয়ে যেয়ো না কিন্তু। আধঘণ্টার মধ্যেই হয়ে যাবে। হ্যাঁ রে, কিশোর, মুসাকে দেখছি না?
ওর বাবার জন্মদিন, ভাল রান্নাবান্নার ব্যবস্থা, ও কি আর থাকে? হেসে বলল কিশোর।
পাগল ছেলে! সস্নেহ হাসি ফুটল চাচীর মুখে। ও হ্যাঁ, মিরোকেও ধরে রাখিস। খেয়ে যাবে এখানেই। বাড়ির দিকে রওনা হলেন তিনি।
মেরিচাচীর ডাক শুনে দরজায় বেরিয়ে এল এক কিশোর। লম্বায় রবিনের সমান হবে। পরনে নিখুঁত ছাঁটের নীল সুট, গলায় নীল টাই। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। খাটো করে ছাটা চুল।
এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিল মিরো। তুমি নিশ্চয় কিশোর-স্যান? কথায় জাপানী টান স্পষ্ট। আর তুমি রবিন-স্যান? আমি মিরো, টোহা মুচামারুর ছেলে। আমার বাবা সুকিমিচি জুয়েলারস কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ।
হ্যাল্লো, মিরো, জোরে মিরোর হাত ঝাঁকিয়ে দিল কিশোর। গতকাল পরিচয়। হয়েছে তোমার বাবার সঙ্গে।
জানি, লজ্জিত হাসি হাসল মিরো। তোমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি। বাবা, এ-ও জানি। কিছু মনে কোরো না, বাবার তখন মাথা ঠিক ছিল না, কি বলতে কি বলে ফেলেছে। তার হয়ে তোমাদের কাছে মাফ চাইতে এসেছি!
আরে দূর, কি যে বল? তাড়াতাড়ি বলল রবিন। যা অবস্থা ছিল তখন, মাথার ঠিক থাকে নাকি মানুষের? এতবড় দায়িত্ব, এত টাকার ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের বয়েস কম, রত্নচোরের পেছনে লাগতে পারব বলে ভাবেননি আর কি। এখন বললেও অবশ্য কেসটা আর নিতে পারব না। অন্য একটা কাজ নিয়ে। ফেলেছি, রত্নদানো ধরার কাজ।
রত্নদানো! বড় বড় হয়ে গেল মিরোর চোখ। ওই যে বামন মানুষেরা, যারা সুড়ঙ্গে বাস করে, আর মাটির তলায় গুপ্তধন খুঁজে বেড়ায়? জাপানেও ওদের কথা জানে লোক। খবরদার, বেশি কাছাকাছি যেয়ো না! ভয়ঙ্কর জীব ওরা। বিপদে ফেলে দেবে।
বিপদে ফেলুক আর যা-ই করুক, আজ রাতে একটাকে ধরার চেষ্টা করব, কিশোর বলল। দাঁড়িয়ে কেন, চল বসি। চা খাবে?
খেয়েছি, আবার অফিসে ঢুকল মিরো কিশোরের পিছু পিছু।
আচ্ছা, আমাদের নাম জানলে কি করে? বসতে বসতে বলল কিশোর। ঠিকানা পেলে কোথায়?
পকেট থেকে একটা কার্ড বের করল মিরো। দলে মুচড়ে গিয়েছিল কার্ডটা, টেনেটুনে আবার ঠিক করা হয়েছে। মিউজিয়মে কুড়িয়ে পেয়েছি এটা। আর ঠিকানা? এ-শহরে তো তোমরা পরিচিত। প্রথম যে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে-ই বলে দিল।