এক মিনিট, মিস ভারনিয়া, হাত তুলল কিশোর। ছবিটা আবার তুলে দিই, তারপর শুনব বাকিটা।
একটা চেয়ারে উঠে দাঁড়াল মুসা। ছবিটা তার হাতে তুলে দিল কিশোর। রবিন দেখল, হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কিশোরের মুখ। এই উজ্জ্বলতার কারণ জানে নথি। নিশ্চয় কোন বুদ্ধি এসেছে গোয়েন্দাপ্রধানের মাথায়।
কি হল, কিশোর? কাছে গিয়ে মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল রবিন।
শেকল জোড়া লাগিয়ে ছবিটা আবার আগের জায়গায় ঝুলিয়ে দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে এল মুসা।
রবিনের দিকে চেয়ে হাসল কিশোর। মনে হয় গোল্ডেন বেল্ট রহস্যের কিনারা করে ফেলেছি, ফিসফিস করে বলল।
তাই। বল, বল! চেঁচিয়ে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল রবিন। কি করে কোন্ পথে চুরি করল?
পরে, এখন বলার সময় না। মিস ভারনিয়ার কথা শেষ হয়নি এখনও, সেটা শুনি আগে।
হতাশ হল রবিন। জানে, এখন আর চাপাচাপি করে লাভ নেই। কিশোরের সময় না হলে সে কিছুই বলবে না। মিস ভারনিয়ার ছবিটার দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করল কি করে চুরি হয়েছে গোল্ডেন বেল্ট, কিছুই বুঝতে না পেরে হাল ছেড়ে দিল। আবার গিয়ে আগের জায়গায় নোট লিখতে বসল।
ওর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে আমাকে রাতে থাকতে বলল বব, আবার শুরু করলেন মিস ভারনিয়া। রাজি হলাম না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল বব, রত্নদানোরা আর এল না। রহস্যজনক শব্দও হল না। শেষে চলে গেল সে। সে রাতে আর কিছুই ঘটল না। পরের রাতে আবার রহস্যময় শব্দ শুনলাম। একবার ভাবলাম, ববকে ফোন করি, কিন্তু আগের রাতে তার হাবভাব যে-রকম দেখেছি, আর ডাকতে ইচ্ছে হল না। পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম নিচের তলায়। লাইব্রেরিতে খুটখাট ধুপধাপ শব্দ হচ্ছে। গিয়ে উঁকি দিলাম। আমার সমস্ত বই মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো, কয়েকটা ছবি খুলে নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে বইয়ের তূপের ওপর। যত রকমে সম্ভব, আমাকে বিরক্ত করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে যেন রত্নদানোরা। মনে হয়, ওই রাতেই শেকলটা করাত দিয়ে কেটেছে ওরা।
খুব দমে গেলাম। ববকে ফোন করলাম পরদিন সকালে। লাইব্রেরির অবস্থা দেখল সে, কিন্তু রত্নদানোরা করেছে, এটা কিছুতেই বিশ্বাস করল না। কায়দা করে বেশ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দোষটা আমার ওপরই চাপিয়ে দিল। ঘুমের ঘোরে আমি নিজেই নাকি লাইব্রেরিতে ঢুকে এই কাণ্ড করেছি। আমার মাথায় গোলমাল হয়েছে, আকারে-ইঙ্গিতে এ-কথাও বলল। কোন ভাল জায়গায় গিয়ে কদিন ভালমত বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিল। বিরক্ত হয়ে শেষে তাকে বকাটকা দিয়ে বের করে দিলাম। আমি জানি আমি কি করেছি, কি দেখেছি। আমি জানি, ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখিনি। কিন্তু এসবের মানে কি, কিছুই বুঝতে পারছি না! এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচড়ে ধরলেন মিস ভারনিয়া। কি মানে? কেন ঘটছে এসব? আমার ওপর রত্নদানোরা খেপে গেল কেন হঠাৎ?
প্রশ্নগুলোর জবাব মুসা আর রবিনও জানে না। অবিশ্বাস্য এক গাঁজাখুরি গল্প, কিন্তু মিস ভারনিয়া যে মিছে কথা বলছেন না, এটাও ঠিক, অন্তত তাদের তাই মনে হচ্ছে।
প্রশ্নগুলোর জবাব কিশোরেরও জানা নেই। অনেকক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল, এখন আমাদের প্রথম কাজ, রত্নদানোর অস্তিত্ব সম্পর্কে শিওর হওয়া। কেন আপনাকে বিরক্ত করছে ওরা, সেটা পরে জানা যাবে।
বেশ, যা ভাল বোঝ কর, হাতের তালু দিয়ে তালু চেপে ধরলেন মিস ভারনিয়া।
ফাঁদ পাততে হবে ব্যাটাদের জন্যে, বলল কিশোর।
ফাঁদ? সামনে ঝুঁকল মুসা। কিসের ফাঁদ?
রত্নদানোদের জন্যে। আজ রাতটা আমরা যে-কেউ একজন এখানে কাটাব, রত্নদানো ধরার চেষ্টা করব।
কে থাকছে?
তুমিই থাক।
দাঁড়াও! হাত তুলল মুসা। আমি টোপ হতে চাই না। রত্নদানো আছে বলে বিশ্বাস করি না, কিন্তু ঝুঁকি নেয়ারও ইচ্ছে নেই আমার।
কিন্তু তুমি থাকলেই ভাল হয়। তোমার গায়ে সিংহের জোর, একবার যদি আঁকড়ে ধরতে পার, রত্নদানোর সাধ্যি নেই ছাড়া পায়। তুমিই থাক, মুসা।
প্রশংসায় গলে গেল মুসা। তবু আমতা আমতা করল, কিন্তু একা…রবিন। থাকলে..
না না, আমি পারব না, তাড়াতাড়ি বলে উঠল রবিন। আজ রাতে আমার খালাম্মা বেড়াতে আসবে। আমাকে থাকতেই হবে বাড়িতে। কাজেই আমি বাদ।
তোমার তো আজ কোন কাজ নেই, কিশোর, বলল মুসা। আগামী কাল রোববার, ইয়ার্ড বন্ধ। কালও কোন কাজ নেই। তুমিই থাক না আমার সঙ্গে?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। মাথা কাত করল। ঠিক আছে, থাকব। একজনের জায়গায় দুজন, বরং ভালই হবে। মিস ভারনিয়া, আমরা থাকলে। আপনার কোন অসুবিধে হবে?
না না, অসুবিধে কি? খুশিতে উজ্জ্বল হল লেখিকার মুখ। বরং ভালই। লাগবে। সিঁড়ির মাথায় একটা ঘর আছে, ওখানে থাকতে পারবে। তোমাদের খারাপ লাগবে কিনা সেটা বল। সাংঘাতিক কোন বিপদে না আবার পড়ে যাও।
রত্নদানোরা বিপদে ফেলবে বলে মনে হয় না, মাথা নাড়ল কিশোর। এ পর্যন্ত আপনার গায়ে হাত তোলেনি ওরা, দূর থেকেই ভয় দেখানর চেষ্টা করেছে শুধু। আমাদেরও ক্ষতি করবে বলে মনে হয় না। আজ রাতে ওদের একটাকে ধরার চেষ্টা করব! রাতের অন্ধকারে ফিরে এসে অপেক্ষা করব আমরা। বেরোব হৈ হট্টগোল করে, ফিরব চুপে চুপে, যাতে কেউ না দেখে।
ভাল বুদ্ধি! সায় দিলেন মিস ভারনিয়া। তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করব আমি। শুধু একবার বেল বাজাবে, গেটের তালা খুলে দেব।