ইয়ং ম্যান, বিরক্তই শোনাল প্রফেসরের কণ্ঠ, আমি একজন বিজ্ঞানী। ভূতপ্রেত কিংবা অভিশাপে বিশ্বাস করি না। আমাকে সহায়তা করতেই যদি চাও, কথাটা মনে রেখে এগিয়ে।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আমিও ওসব বিশ্বাস করি না, স্যার। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুটো অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল, পাঁচজোড়া চোখের সামনে। এবং কারণটা বোঝা যাচ্ছে না কেন পড়ল ওগুলো।
দৈবক্রমে পড়ে গেছে, বললেন প্রফেসর। এটা নিয়ে এত মাথা ঘামানর কিছু নেই। ইয়ং ম্যান, তুমি বিশ্বাস করছ মমিটা আমার সঙ্গে কথা বলেছে! কি করে বলব, কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবে?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করেছে কিশোর। হঠাৎ বলল, পারব, স্যার।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? আবোল-তাবোল কিছু নয়?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, দুই সহকারীর দিকে ফিরল কিশোর। মুসা, রবিন, গাড়িতে যে ব্যাগটা রয়েছে, ওটা আনতে হবে। কিছু যন্ত্রপাতি আছে ওতে। ওগুলো দরকার।
নিয়ে আসছি, বলল মুসা। বেরিয়ে যেতে পারছে বলে খুশিই সে। রবিন, এস।
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাব আপনাদেরকে, আসুন, হুপারও বেরিয়ে যাওয়ার ছুঁতো পেল।
বেরিয়ে এল তিনজনে, জাদুঘরে কিশোর আর প্রফেসরকে রেখে।
লম্বা একটা হলঘরের ভেতর দিয়ে চলেছে হুপার। অনুসরণ করছে দুই গোয়েন্দা। অন্য পাশের দরজা খুলল খানসামা। তিনজনে বেরিয়ে এল বাইরে।
গাড়ির বনেট মুছছে ড্রাইভার।
ছেলেরা, ফিসফিস করে বলল হুপার, প্রফেসর বেনজামিন বড় বেশি একরোখা। অভিশাপ রয়েছে, ওটাকে গ্রাহ্যই করতে চাইছেন না। কিন্তু তোমরা তো দেখলে, কি ঘটল! পরের বার হয়ত খুন হবেন তিনি! বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাদের কেউও হয়ে যেতে পারি! প্লীজ, ওঁকে বোঝাও, রা-অরকনকে মিশরে ফেরত পাঠিয়ে দিতে। হলরুমে ঢুকে গেল আবার খানসামা।
রবিন আর মুসা, দুজনেই খুব চিন্তিত।
অভিশাপ-টাপ বিশ্বাস করে না কিশোর, বলল মুসা। আমি করি, তাও বলব না। তবে একটা কথা শিওর হয়ে বলতে পারি; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে কেটে পড়া উচিত আমাদের।
-কোন জবাব দিতে পারল না রবিন। ওসব অভিশাপ-টাপে তারও বিশ্বাস নেই। কিন্তু দুর্ঘটনাগুলো তো ঘটছে, এর কি ব্যাখ্যা?
পেছনে শব্দ শুনে ফিরে তাকাল ড্রাইভার। হয়েছে আপনাদের? না আরও দেরি আছে?
মাত্র শুরু করেছি, এখনও অনেক দেরি, তিক্তকণ্ঠে বলল মুসা। যে কারবারে জড়িয়েছি!—ব্যাগটা নিতে এলাম।
ঘুরে গাড়ির পেছন দিকে চলে এল ড্রাইভার। ট্রাঙ্ক খুলে বের করে আনল। চামড়ার চ্যাপ্টা ব্যাগটা। বাড়িয়ে দিল মুসার দিকে, এই যে, নিন।
আছে কি এর ভেতরে? ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল মুসা। যা ভারি! রবিন, কিশোর একটা চমক দেবে মনে হচ্ছে!
দেখ কি আবার করে বসে! চিন্তিত দেখাচ্ছে রবিনকে। টায়ার পাঙ্কচারের ডিডাকশন করে তো খুব একহাত নিয়েছ, পাল্টা আঘাত হেনে না একেবারে কাত করে দেয়।
ব্যাগটা নিয়ে আবার জাদুঘরে গিয়ে ঢুকল দুই গোয়েন্দা। আনুবিসকে তুলে আবার জায়গামত দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কিশোর আর প্রফেসর। মূর্তিটাকে আরও ইঞ্চিখানেক পেছনে ঠেলে দিল কিশোর। মাথা নাড়ল। না, আপনাআপনি পড়তেই পারে না। জানালা দিয়ে বাতাস যা আসছে এতে তো পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। পড়াতে হলে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস লাগবে।
ঘন ভুরু জোড়া কাছাকাছি চলে এল প্রফেসরের। আধিভৌতিক কোন শক্তি কাজ করছে এর পেছনে, বলতে চাইছ।
জানি না! মূর্তিটা কি করে পড়ল, আপাতত বলতে পারছি না, শান্ত কণ্ঠ কিশোরের। রবিন আর মুসার ওপর চোখ পড়তেই বলল, কিন্তু মমি কি করে কথা বলে, দেখাচ্ছি।
মুসার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে খুলল কিশোর। ভেতর থেকে বের করল বড় আকারের তিনটে ট্রানজিসটর রেডিও। একটা রেডিও তুলে দিল মুসার হাতে। ব্যাগ। থেকে একটা চামড়ার বেল্ট বের করে পরিয়ে দিল মুসার কোমরে। তামার অসংখ্য সরু সরু তার কায়দা করে লম্বালম্বি আটকানো রয়েছে বেল্টে। রেডিও থেকে বের করে রাখা দুটো তারের মাথা প্লাগ দিয়ে আটকে দিল বেল্টের তারের সঙ্গে। জানালা দিয়ে চত্বরে নাম, তারপর বাগানে চলে যাও, সহকারীকে নির্দেশ দিল গোয়েন্দাপ্রধান। কানের কাছে রেডিওটা তুলে ধরে রাখবে, যেন কিছু শোনার চেষ্টা করছ। পাশে, এই যে এই বোতামটা টিপে রাখবে। ঠোঁট যতটা সম্ভব না নেড়ে কথা। বলবে। শোনার দরকার হলে বোতামটা টিপে অন করে দেবে, ব্যস তাহলেই হবে।
কি এটা? জানতে চাইল মুসা।
ওয়াকি-টকি। বেল্টটা অ্যান্টেনা। সিটিজেন ব্যাণ্ডে খবর পাঠানো এবং ধরার রেঞ্জ আধ মাইল। আমাদের নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রাখার একটা ব্যবস্থা। গত হপ্তায় আর্মির ফেলে দেয়া বাতিল কিছু জিনিস কিনে এনেছিল চাচা। তার ভেতর ছিল এরকম পাঁচটা জিনিস। তিনটে সারিয়ে নিয়েছি আমি।
আমি বাগানে যাচ্ছি, বলল মুসা। কি কথা বলব?
যা খুশি। জানালা গলে চত্বরে নাম, তারপর বাগান।
ঠিক হ্যায়, পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল মুসা। ঝট করে চোখ তুলে তাকাল। গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে। রক্ত জমেছে মুখে। তাহলে এই তোমার মাইণ্ড রিডিং?
ওসব নিয়ে পরে আলাপ করব, হাসছে কিশোর। এখন প্রফেসরকে ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। কথা শুরু কর, বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে বড় একটা জানালার কাছে দাঁড়াল। মুখ বাড়িয়ে উঁকি দিল নিচে। দেয়ালের ধার ধরে চলে যাও। ওই যে, গেটপোস্টের ওপরে বড় পাথরের বলটা বসানো রয়েছে, ওদিকে।