হ্যাঁণ্ডেল ধরে পেরিস্কোপটা ঠেলে ওপরে তুলে দিল মুসা। আয়নায় চোখ রাখল। যন্ত্রটা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে নজর বোলাল ইয়ার্ডে। নির্দিষ্ট একটা অবস্থানে এনে স্থির করল। একজন খদ্দের দেখতে পাচ্ছি। পাইপ বিক্রি করেছেন মেরিচাচী জঞ্জাল সরাচ্ছে বোরিস… আর, ওই যে, কিশোর, সামান্য ঘোরাল পেরিস্কোপ। ফিরে এসেছে। ঠেলে ঠেলে আনছে সাইকেলটা। খারাপ হয়ে গেছে বোধহঃ কিছু..হ্যাঁ, হ্যাঁ, সামনের টায়ার বসে গেছে। পাঙ্কচার।
পেরেক-টেরেক ঢুকেছে হয়ত, মন্তব্য করল রবিন। দেরি এজন্যেই। কি মনে হচ্ছে চেহারা দেখে? রেগেছে খুব?
নাহ, আশ্চর্য! সঙ্গের রেডিও শুনছে আর হাসছে, বলল মুসা। সত্যিই আশ্চর্য! সাইকেলের টায়ার পাঙ্কচার, ঠেলে ঠেলে আনা! কার না মেজাজ খারাপ হয়? কিশোরের তো আরও বেশি হওয়ার কথা। যেরকম খুঁতখুঁতে। তা না, হাসছে!
ওর মতিগতি বোঝা মুশকিল! বলল রবিন। কখন হাসবে, কখন রাগবে, আর কখন কি করে বসবে, সে-ই জানে! রেডিওতে মজার কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে। বোধহয়।
কি জানি! পেরিস্কোপ আরেকটু বায়ে ঘোরাল মুসা। মেরিচাচীর সামনে এসে। দাঁড়িয়েছে। কি যেন দিচ্ছে চাচীকে। কিছু বলছে। এদিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন। চাচী। আমাদের কথাই বলছেন বোধহয়।…সাইকেলটা স্ট্যাণ্ডে তুলে রাখল। কিশোর। অফিসে ঢুকছে।…দেরি করছে কেন? কি করছে?…ওই যে, বেরোচ্ছে।…আসছে, এদিকেই আসছে…
ওকে নিয়ে আজ একটু মজা করব, হাসল রবিন। মিস্টার ক্রিস্টোফারের চিঠিটা পকেটে রেখে দিয়েছি। মিসেস চ্যানেলেরটা দেখাব আগে, কেসটা নিতে বলব। রাজি হলে তারপর দেখাব আসল চিঠিটা।
বেড়ালটা পাওয়ার আগে দেখিও না, খবরদার! হাসল মুসা। আরেকটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়। আমি যা যা বলব, সায় দেবে। কিংবা চুপ করে থাকবে। অন্তত প্রতিবাদ করবে না।
অপেক্ষা করছে দুই গোয়েন্দা। পেরিস্কোপের কাছ থেকে সরে এসেছে মুসা। বাইরে টিনের পাত সরানর মৃদু শব্দ হল। খানিক পরেই খুলে গেল ট্রেলারের ভেতরে দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা। চট করে এসে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল মুসা। সুড়ঙ্গমুখে কিশোরের হাত দেখা গেল, তারপর মাথা। উঠে এল সে ট্রেলারে।
উফফ! যা গরম! ফুহহ করে মুখের ভেতর থেকে বাতাস বের করল কিশোর।
হ্যাঁ, সবজান্তার ভঙ্গিতে মাথা দোলাল মুসা। এই গরমে সাইকেলের চাকা পাঙ্কচার? ঠেলে আনা খুব কষ্টকর।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। কি করে জানলে, সাইকেলের টায়ার পাঙ্কচার?
ডিডাকশন, জবাব দিল মুসা। তুমিই তো ডিডাকশনের ওপর জোর দিতে বল। আমি আর রবিন এতক্ষণ ধরে তাই প্র্যাকটিস করছিলাম। না, রবিন?
মাথা নাড়ল নথি। হ্যাঁ। অনেক পথ হেঁটে আসতে হয়েছে তোমাকে, কিশোর?–
চোখের পাতা কাছাকাছি চলে এসেছে কিশোরের। সতর্ক দৃষ্টিতে একবার তাকাল মুসার দিকে, তারপর রবিনের মুখের দিকে। হ্যাঁ, তা হয়েছে। এখন বল, কি ডিডাকশন করলে? কি দেখে বুঝেছ, আমার সাইকেলের চাকা পাঙ্কচার হয়েছে?
কি দেখে মানে? মুসার কণ্ঠে দ্বিধা। ঘাবড়ে গেছে মনে হচ্ছে।
বল না, বলে দাও, তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করল রবিন। শুরুতেই না সর্বনাশ করে দেয় মুসা!
ইয়ে মানে, ঢোক গিলল মুসা। হ্যাঁ, দেখি তোমার হাত? কিশোরকে বলল।
তালু চিত করে দুই হাত সামনে বাড়িয়ে দিল কিশোর। ময়লা ধুলোবালি লেগে আছে। নিশ্চয় টায়ার ঘাটাঘাটি করেছে। পেরেকটা খুলে ফেলে দিয়েছে। বল, কি করে বুঝলে?
তোমার হাতে, হাঁটুতে ময়লা, সামলে নিয়েছে মুসা। কিছু একটা পরীক্ষা করার জন্যে হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়েছিলে। ডিডাকশন: হাঁটু গেড়ে বসে পাঙ্কচার হওয়া টায়ার পরীক্ষা করেছ। তোমার জুতোতে প্রচুর ধুলো। ডিডাকশনঃ অনেক পথ হেঁটে এসেছ। তাই না, মাই ডিয়ার কিশোর পাশা?
কিশোরের চেহারা দেখে মনে হল, খুব অবাক হয়েছে। চমৎকার। ভাল। ডিডাকশন করতে শিখেছ। এই বুদ্ধি সাধারণ একটা বেড়াল খোঁজার পেছনে ব্যয় করার কোন মানে হয় না।
কি-ই! চমকে উঠেছে মুসা।
একটা আবিসিনিয়ান বেড়াল হারিয়েছে, ওটাকে খোঁজার কোন মানেই হয় না। তিন গোয়েন্দার জন্যে খুবই সহজ কাজ। ভারিক্কি চালে বলল কিশোর, এটা মোটেই সহ্য হয় না মুসার। আড়চোখে একবার সহকারীর মুখের ভাব লক্ষ্য করে বলল গোয়েন্দাপ্রধান, তোমার মত বুদ্ধিমান গোয়েন্দার উপযুক্ত কাজ, মমির রহস্য ভেদ করা। তিন হাজার বছরের পুরানো মমি, যেটা ফিসফিস করে কথা বলে।
কার কাছে জানলে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
তোমরা যখন ডিডাকশনে ব্যস্ত, সহজ কণ্ঠে বলল কিশোর। আমি তখন মাইণ্ড রিডিং করেছি। রবিন, তোমার পকেটে রয়েছে একটা চিঠি, ওতে প্রফেসর বেনজামিনের ঠিকানা আছে। পনেরো মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব। ট্যাক্সি নেব। হাজার হোক, মিস্টার ক্রিস্টোফারের অনুরোধ আমরা ফেলতে পারব না কিছুতেই।
হাঁ হয়ে গেছে অন্য দুই গোয়েন্দা। বোকার মত চেয়ে আছে কিশোরের মুখের দিকে।
.
০৪.
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ভেতর দিয়ে ছুটছে ট্যাক্সি। পেছনের সিটে গা এলিয়ে বসে আছে তিন গোয়েন্দা। পাহাড়ী পথ ধরে ছুটছে গাড়ি। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগছে।
ইসস্! সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করল রবিন। ঝাঁকুনিতেই মেরে ফেলবে। রোলস রয়েসটা হলে কি মজাই না হত! আবার একটা বাজি যদি লাগাত কোম্পানি!