হুমম। বৃদ্ধ প্রফেসরের জন্যে করুণা হচ্ছে উইলসনের। এক কাজ করবেন? কয়েকদিনের জন্যে কফিনসহ মমিটা আমার ওখানে পাঠিয়ে দিন। আমি একা থাকলে হয়ত আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারে ওটা। বললে, বুঝতে পারবই। সমাধান হয়ে যাবে হয়ত রহস্যটার।
উইলসনের দিকে তাকালেন প্রফেসর। গম্ভীর হয়ে গেছেন। থ্যাংক ইউ, জিম, কণ্ঠস্বর ভারি। বুঝতে পারছি, আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার। ভাবছ, সব আমার অলীক কল্পনা। হয়ত তোমার ধারণাই ঠিক। কিন্তু ব্যাপারটা সম্পর্কে শিওর না হয়ে মমি হাতছাড়া করছি না আমি।
সামান্য একটু মাথা ঝাঁকালেন উইলসন। ঠিক আছে, রা-অরকন আবার কথা। বললেই ডেকে পাঠাবেন আমাকে। চলে আসব। এখন যাই। ইউনিভার্সিটিতে সম্মেলন আছে।
প্রফেসরকে গুড বাই জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন প্রফেসর উইলসন।
মমির দিকে চেয়ে অপেক্ষা করে রইলেন প্রফেসর বেনজামিন। নীরব রইল রা অরকন।
ডিনার দেব, স্যার? দরজার কাছ থেকে হুপারের কথা শোনা গেল।
হ্যাঁ, মুখ ফিরিয়ে তাকালেন প্রফেসর। শোন, এসব কথা কাউকে কিছু বলবে না।
না, বলব না, স্যার।
উইলসনের ভাবভঙ্গি থেকেই বুঝে গেছি, কথাটা শুনলে আমার বৈজ্ঞানিক বন্ধুরা কি ভাববে। মোটেই বিশ্বাস করবে না ওরা। মুখ টিপে হাসাহাসি করবে। বলবে, বুড়ো বয়সে পাগল হয়ে গেছি। খবরের কাগজে প্রকাশ করে দিলেই গেছি। সারা জীবনে যত সুনাম কামিয়েছি, সব যাবে।
হ্যাঁ, স্যার, মাথা ঝোঁকাল হুপার। হয়ত তাই ঘটবে।
কিন্তু, কারও না কারও কাছে কথাটা বলতেই হবে আমাকে, চিন্তিত ভঙ্গিতে কানের নিচে চুলকালেন প্রফেসর। এমন কেউ, যে বিজ্ঞানী নয়। যে জানে, অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে এই দুনিয়ায়, যার কোন ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু কাকে বলব? কাকে—
স্যার, মি, ক্রিস্টোফারকে ফোন করে দেখুন না। তিনিও তো আপনার বন্ধু। আর রহস্য নিয়েই তার—
ঠিক, ঠিক বলেছ! চেঁচিয়ে উঠলেন প্রফেসর। আজই যোগাযোগ করব ওর সঙ্গে। সারা আমেরিকায় যদি কেউ বিশ্বাস করে আমার কথা, একমাত্র ডেভিসই করবে।
.
০৩.
মমি কথা বলে কি করে? আবার একই প্রশ্ন করল মুসা।
জবাবে শুধু মাথা নাড়ল রবিন।
দুজনেই বার বার পড়েছে চিঠিটা। বিশ্বাসই করতে পারছে না। ডেভিস ক্রিস্টোফারের কাছ থেকে না এলে এতক্ষণে ছুঁড়ে ফেলে দিত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে। কিন্তু ফালতু কথা বলেন না চিত্রপরিচালক। তিনি যখন বিশ্বাস করেছেন, নিশ্চয় ব্যাপারটা প্রফেসর বেনজামিনের কল্পনাপ্রসূত নয়। প্রফেসরকে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন মি, ক্রিস্টোফার।
মমি তো একটা মরা লাশ, আবার বলল মুসা। কি করে কথা বলে কোঁকড়া কালো চুলে আঙুল চালাল সে। এককালে মানুষ ছিল অবশ্য, তবে এখন…
জ্যান্ত নয়, মুসার কথাটা বলে দিল রবিন। ভূত-টুত ভাবছ না তো? অপছন্দ হচ্ছে ব্যাপারটা?
নিশ্চয়! হাত বাড়িয়ে ডেস্কে রাখা চিঠিটা আবার তুলে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল মুসা। প্রফেসর হার্বার্ট বেনজামিন প্রখ্যাত ইজিপট-অল—ইজিপট-অল—
ইজিপটোলজিস্ট, বলে দিল রবিন।
ইজিপট-অল-ইজিপট-অল–আরে ধুত্তেরি! জাহান্নামে যাক! আঁজিয়ে উঠল মুসা। তারপর নিজেকেই যেন বলল, হলিউডের কাছে হান্টার ক্যানিয়নে থাকেন প্রফেসর। ব্যক্তিগত জাদুঘর আছে। একটা মমি আছে সেখানে, যেটা কথা বলে, এবং ভাষাটা বুঝতে পারেননি প্রফেসর। খুব অস্বস্তি বোধ করছেন। ঠিকই করছেন, তাঁকে দোষ দেয়া যায় না। মমিটা দেখিনি, অথচ শুনেই অস্বস্তি লাগছে আমার। এ পর্যন্ত কয়েকটা রহস্যেরই তো সমাধান করলাম! বিশেষ করে ওই ছায়া শরীর আর হাউণ্ডের ব্যাপারটা এখনও মন থেকে যায়নি। রবিন, তার চেয়ে চল সান্তা মনিকায় বেড়াল রহস্যের সমাধান করি গিয়ে। টেবিল থেকে মিসেস ভেরা চ্যানেলের চিঠিটা তুলে নিল সে।
কিশোর কোন কেসটা নিতে আগ্রহী হবে, জান, গোমড়ামুখে বলল রবিন।
জানি, মুখ বাঁকাল মুসা। ক্রিস্টোফারের চিঠিটা পড়ামাত্র তাঁকে টেলিফোন করবে সে। তারপরই ছুটবে প্রফেসর বেনজামিনের ওখানে। এক কাজ করি। এস, ভোট নিই। হারিয়ে দেব কিশোরকে। বেড়াল খোঁজার কাজটাই আগে করতে বাধ্য হবে সে।
ভোটাভুটিতে রাজিই হবে না সে, ঠোঁট ওল্টাল রবিন। চেষ্টা করে তো দেখেছি আগেও। টেরোর ক্যাসলের কথা মনে নেই? যাব না বলেছিলাম, তুমি আমি দুজনেই। শুনেছিল আমাদের কথা?
চুপ করে রইল মুসা। গম্ভীর।
কিন্তু ও আসছে না কেন এখনও! সুড়ঙ্গমুখের দিকে তাকাল রবিন। গেল তো অনেকক্ষণ।
দাঁড়াও, দেখি, বলল মুসা। হয়ত এসেছে, কোন কাজে আটকে দিয়েছে মেরিচাচী। ছোট মোবাইল হোমের এক কোণে চলে এল সে। মাঝারি আকারের মোটা একটা পাইপ, ছাত ফুটো করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ওটাকে জায়গামত আটকানর ব্যবস্থা হয়েছে লোহার শিক দিয়ে। নিচের দিকে দুপাশে আরও দুটো লোহার পাইপ-হ্যাণ্ডেল ধরে মূল পাইপটাকে ওঠানো-নামানো কিংবা এদিক-ওদিক ঘোরানর জন্যে। আসলে ওটা একটা পেরিস্কোপ, প্রথম মহাযুদ্ধের একটা সাবমেরিনে ব্যবহার করা হয়েছিল। পুরানো বাতিল অন্যান্য লোহার জিনিসের সঙ্গে ওটাও কিনে এনেছেন রাশেদ চাচা। জিনিসটাকে মেরামত করে হেডকোয়ার্টারের ছাতে লাগিয়ে নিয়েছে তিন গোয়েন্দা। দিব্যি কাজ চলে এখন। কিশোর এক অদ্ভুত নাম দিয়েছে পেরিস্কোপটার, সর্ব দর্শন।