রত্নগুলো?
কায়রো মিউজিয়মে দান করে দিয়েছেন প্রফেসর বেনজামিন, প্রফেসর উইলসনেরও সায় রয়েছে এতে। তবে তাকে একেবারে খালি হাতে বিদায় করেনি। মিউজিয়ম। গবেষণা আর মিশরে তার থাকার সমস্ত খরচ বহন করবে ওরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি তো রয়েছেই। মোটা বেতন পাচ্ছেন ওখান থেকে, পেতেই থাকবেন। ওরাও এটাকে একটা মিশন হিসেবে ধরে নিয়েছে। মিশনের খরচ বেঁচে যাওয়ায় বরং খুশিই বিশ্ববিদ্যালয়।
গুড, কিশোরের দিকে সরাসরি তাকালেন পরিচালক। আসল রহস্যটাই জানা হল না এখনও। মমিটাকে কি করে কথা বলিয়েছে উইলসন?।
ও, ওটা? হাসি গোপন করল কিশোর। ভেন্ট্রিলোকুইজম, স্যার। রবিনের। বাবা ঠিকই বলেছিলেন।
ভুরুজোড়া কাছাকাছি চলে এল পরিচালকের। ইয়ং ম্যান, সিনেমা ব্যবসায়ে। অনেক বছর ধরে আছি। আমি জানি, ঠিক কতখানি দূর থেকে কথা ছুঁড়ে দিতে পারে ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা। মনে হবে পুতুলের মুখ দিয়েই কথা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু সেজন্যে ওটার খুব কাছাকাছি থাকতে হয় তাদের। দূর থেকে মোটেও সম্ভব না।
চাওয়া-চাওয়ি করল মুসা আর রবিন। তারা জানত, অনেক দূর থেকে কথা ছুঁড়ে দিতে পারে ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা।
কিন্তু, স্যার, বলল কিশোর। প্রফেসর উইলসন পেরেছেন। তবে ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে ছিলেন তিনি সব সময়। সেজন্যেই প্রথমে তাকে সন্দেহ করতে পারিনি। তবে করা উচিত ছিল। কারণ, কাছাকাছি তিনিই ছিলেন একমাত্র লোক যিনি মিশরের প্রাচীন ভাষা জানেন। কিন্তু বেড়ালের পায়ে রঙ করা হয়েছে, এটা জানার আগে তার কথা খেয়ালই করিনি। বেড়ালটা ছদ্মবেশী। সন্দেহ হল, জ্যোতিষও ছদ্মবেশী। প্রথমেই মনে এল, প্রফেসর বেনজামিন ছাড়া আর কে। সবচেয়ে বেশি জানে রা-অরকন সম্পর্কে? প্রফেসর উইলসন। প্রাচীন মিশরীয় ভাষা জানেন। ধ্যানে বসার অভিনয় করে অনর্গল বলে যেতে পারা কিছুই না তার জন্যে।
ঠিকই ভেবেছ, বললেন পরিচালক। কিন্তু এসব তো শুনতে চাই না। আমার। প্রশ্ন এটা নয়।
আসছি, স্যার, সে কথায়, মাথা নাড়ল কিশোর। প্রফেসর উইলসন ভাষাবিদ। অনেক ধরনের মাইক্রোফোন, টেপ-প্লেয়ার আর রেকর্ডার ব্যবহার করতে হয়। আপনি নিশ্চয় জানেন, স্যার, আজকাল একধরনের প্যারা-বলিক মাইক্রোফোন বেরিয়েছে, যার সাহায্যে শত শত ফুট দূরের শব্দও রেকর্ড করা যায়।
জানি, উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পরিচালকের চেহারা। বলে যাও।
এ-ও জানেন, স্যার, একধরনের স্পীকার আছে, ডিরেকশন্যাল স্পীকার, যার সাহায্যে শব্দকে ইয়ে, কি বলব।—জমাট করে ফেলা যায় বলি— হ্যাঁ, জমাট করে ফেলে শত শত ফুট দূরে চালান করে দেয়া যায়। ওই ধরনের মাইক্রোফোন আর স্পীকার আছে প্রফেসর উইলসনের বাড়িতে। প্রফেসর বেনজামিনের বাড়ি থেকে সরাসরি তিনশো ফুট দূরে তাঁর বাড়ি। চুপ করল কিশোর।
বল, বল, বলে যাও, তোমার কথা শেষ কর, তাগাদা দিলেন পরিচালক।
প্রাচীন আরবী ভাষায় কিছু কথা টেপে রেকর্ড করেছিলেন প্রফেসর উইলসন। টেলিস্কোপ আছে তার। প্রফেসর বেনজামিন কাজ করেন জানালা খুলে। সুতরাং কখন তিনি কাজ করছেন, দেখতে অসুবিধা হত না ভাষাবিদের, কথা ছুঁড়ে দিতে পারতেন মেশিনের সাহায্যে। স্পীকার ফোকাস করে লাইন দেয়াই ছিল প্লেয়ারের সঙ্গে। ক্যাসেটটা ভরে শুধু প্লে বাটনটা টিপে দিতেন। বাস শুরু হয়ে যেত মমির কথা বলা। সকালে চলে যেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কাজে। ফিরতেন দুপুরের পর। তাই, মমিটা যখনই কথা বলেছে, বলেছে বিকেলে, অর্থাৎ দুপুরের পর যে-কোন এক সময়। এবং বলেছে শুধু প্রফেসর বেনজামিনের উপস্থিতিতেই। কারণ শুধু তাকেই ভয় পাওয়ার দরকার ছিল উইলসনের। আমার সামনে কথা বলেছে, তারা দূর থেকে আমার ছদ্মবেশ ধরতে পারেননি ভাষাবিদ। কিন্তু যখন কফিনে আটকে গেল আমার, খুলে রয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে কথা থামিয়ে দিল মমি। হাল কিশোর।
হুমম!, ওপরে-নিচে মাথা দোলালেন পরিচালক। আনুবিসের মুখের বিচিত্র ভাষাও তাহলে তারই কাজ!
হ্যাঁ, স্যার, বলল কিশোর। আসলে ওয়েব যখন আনুবিস সেজে হুপারের সামনে আসছে, তার মুখে ভাষা ছুঁড়ে দিয়েছে ভাষাবিদের মেশিন। ব্যাপারটার নাম দিয়েছি আমি, উইলসনস-ভেন্ট্রিলোকুইজম।
প্রতিভা আছে লোকটার! স্বীকার করলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তবে আবার কোন কুকর্মে জড়িয়ে না পড়লেই হল!
আর করবে বলে মনে হয় না, স্যার। যা লজ্জা পেয়েছে!
হু। তবে লোভ বড় ভয়ানক জিনিস!…যাই হোক, আমরা আশা করব, এরপর থেকে তার বিজ্ঞান সাধনা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে উইলসন।
নীরবতা।
তাহলে। নড়েচড়ে উঠল কিশোর, আমরা তাহলে আজ উঠি, স্যার?
আচ্ছা।…হা, ভাল কথা। জামান আর তার ম্যানেজার তো নিশ্চয় লিবিয়ায় ফিরে গেছে?
হ্যাঁ, স্যার, উঠে দাঁড়িয়েছে কিশোর। তাদের কোম্পানির সবচেয়ে ভাল একটা কার্পেট পাঠাবে বলেছে, তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারের জন্যে।
ভেরি গুড, পরিচালকও উঠে দাঁড়ালেন। রকি, বীচের ওদিকে একটা কাজ আছে আমার। যেতে হবে এখনি। চল, তোমাদেরকে একটা লিফট দিই।
থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ! প্রায় একই সঙ্গে বলে উঠল তিন গোয়েন্দা।