ওখানে, গ্যারেজের পেছন দিকটা দেখিয়ে বলল উইলসন। চট দিয়ে ঢেকে রেখেছি।
যাক! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন প্রফেসর। আমার গবেষণা– থেমে গেলেন তিনি। উইলসনের দিকে তাকালেন। ওসব কথা এখন থাক। তোমার কথা আগে শুনি। অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তোমাকে। প্রথমেই শুনতে চাই, মমিটাকে কি করে কথা বলিয়েছ?
দুই কাঁধ ঝুলে পড়েছে উইলসনের। জীবনের সব আশা-ভরসাই নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে যেন তার। রত্নের পুটুলিটা আবার বেঁধে প্রফেসরের হাতে দিয়ে বলল, এখানে গ্যারেজে দাঁড়িয়ে থাকবেন আর কত? চলুন, ঘরে চলুন। বসবেন।
.
১৮.
মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিস। মস্ত ডেস্কের ওপাশে বসে আছেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। হাতে ক্লিপে আটকানো এক গাদা টাইপ করা কাগজ। পড়ছেন। গভীর মনোযোগে।
পড়া শেষ করে কাগজগুলো ডেস্কে রাখলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। মুখ। তুললেন, চমৎকার! খুব উত্তেজনা গেছে কয়েকটা দিন তোমাদের!
শুধু উত্তেজনা? মুসার মনে পড়ে গেল কফিনে আটকে থাকা মুহূর্তগুলোর কথা। কিশোরেরও মনে পড়ল। তবে ওসব নিয়ে বেশি ভাবতে চাইল না আর। যা হওয়ার হয়ে গেছে। অবশেষে ভালয় ভালয়ই তো শেষ হয়েছে সব।
হ্যাঁ, স্যার, বলল কিশোর। তাহলে কাহিনীটা নিয়ে ছবি করছেন?
নিশ্চয়, মাথা নাড়লেন চিত্রপরিচালক। এ-তো রীতিমত ভাল কাহিনী। আচ্ছা, কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও তো এবার।
কোন কথা কি বাদ গেছে, স্যার? ভুরু কুঁচকে গেছে রবিনের। কারণ লেখার ভার ছিল তার ওপর।
এই দুয়েকটা ব্যাপার, বললেন চিত্রপরিচালক। তবে, সেটাকে ভুল বলা চলে না। তুমি তো গল্প লেখনি, রিপোর্ট লিখেছ। যাই হোক এগুলো জানার জন্যে খুব কৌতূহল হচ্ছে।
বলুন, স্যার, বলল রবিন।
মিশরের আরও দুএকজন রাজাকে অতি সাধারণ মানুষের মত কবর দেয়া হয়েছে, হাতের দশ আঙুলের মাথা একত্র করে একটা পিরামিড বানালেন যেন পরিচালক। তাঁদের সঙ্গে গোপনে দিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক মূল্যবান রত্ন। বোধহয় পরকালের পাথেয় হিসেবে। কিন্তু কথা হল, তাদেরকে ওভাবে সাধারণ মানুষের মত কবর দেয়া হল কেন? হয়ত কবর-চোরদের ভয়ে। তবে এসব ব্যাপারে এখনও শিওর নন বিজ্ঞানীরা। রা-অরকনকেও নিশ্চয় তেমনি কোন কারণে সাধারণভাবে কবর দেয়া হয়েছিল।
প্রফেসর বেনজামিনের তাই ধারণা, বলল রবিন।
কিন্তু সেটা আমাদের আলোচ্য নয়, বললেন পরিচালক। ওসব প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে বিজ্ঞানীরাই মাথা ঘামাক। আমরা আমাদের কথা বলি। মিসেস চ্যানেলের বেড়ালটা কে চুরি করেছিল, এটা এখন পরিষ্কার। উইলসন কাউকে দিয়ে করিয়েছিল। মমি চুরি করেছে মেখু আর ওয়েব। কখন করল?
আমি, কিশোর আর প্রফেসর বেনজামিন টেপটা নিয়ে গিয়েছিলাম উইলসনের বাড়িতে, বলল রবিন। যখন কথা বলছিলাম উইলসনের সঙ্গে, তখন একবার কলিং বেল বেজে উঠেছিল আমরা থাকতেই। মমিটা নিয়ে ফিরে এসেছিল মেথু আর ওয়েব। কফিনটা আনেনি বলে সে সময়ই ধমক-ধামক মেরেছিল ওদেরকে ভাষাবিদ। আবার পাঠিয়েছিল কফিনটা চুরি করতে।
আনুবিস সেজে হুপারকে ভয় দেখিয়েছিল কে? নিশ্চয় মেথু কিংবা ওয়েব?
ওয়েব, স্যার। ভয় দেখিয়েই কাবু করে ফেলেছিল বেচারাকে। ওকে সামনে রেখে কিছুতেই চুরি করতে পারত না ওরা। ওদের বর্ণনা, ট্রাকের বর্ণনা ওরা বাড়ি থেকে বেরোনর সঙ্গে সঙ্গে ফোনে পুলিশকে জানিয়ে দিত খানসামা। ভয় পেয়েও বেহুশ না হলে হয়ত পিটিয়ে বেহুশ করত।
হ্যাঁ, সেটা বুঝেছি। বুঝতে পারছি না, নীল ট্রাকটাকে হারিয়ে ফেলেও এত তাড়াতাড়ি, ঠিক সময়ে গিয়ে কি করে হাজির হল উইলসনের বাড়িতে?
মুসা, তুমি বল, বলল কিশোর।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, সোজা হয়ে বসল মুসা। নীল ট্রাকটাকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা তখন ধরে নিয়েছি, জলিলই অপরাধী। ওকে ধরতে হলে, আগে প্রফেসর বেনজামিনের বাড়িতে যেতে হবে। তিনি রিগো অ্যাণ্ড কোম্পানিতে খোঁজ নিয়ে জলিলের বাসার ঠিকানা জানতে পারবেন। তাই করা হল। জলিলের বাড়িতে গিয়ে দেখি, তিনজন কার্পেট ব্যবসায়ীকে সে বিদায় জানাচ্ছে। আমাদের মুখে নীল ট্রাক আর মেথু-ওয়েবের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল। বুঝলাম, সে কিছু জানে না। অপরাধী সে নয়। তখন এমন অবস্থা, পুলিশকে জানানো ছাড়া আর উপায় নেই। কিন্তু প্রফেসর তখনও পুলিশকে জানাতে দ্বিধা করছেন। অবশেষে ঠিক করলেন, উইলসনের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। সময়ে-অসময়ে কোন বিপদ কিংবা। বেকায়দায় পড়লেই পরামর্শ নিতে যেতেন প্রফেসর তার কাছে। আগে যেতেন। ভাষাবিদের বাবার কাছে। যাই হোক, গেলাম…
এবং গিয়েই দেখলে নীল ট্রাকটা, মৃদু হাসলেন পরিচালক। নিশ্চয় খুব চমকে গিয়েছিলে।
মেথু আর ওয়েবকে ধরে খুব পিট্টি দিয়েছে, স্যার, ওরা, হেসে বলল কিশোর। পিটুনি খেয়ে ওরা বলেছে, কফিনটা গ্যারেজে আছে। পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ওদেরকে। আগেও অনেক অপরাধ করেছে, রেকর্ড রয়েছে। পুলিশের খাতায়। প্রমাণের অভাবে ধরতে পারছিল না এতদিন। এখন তো প্রচুর। চোরাই মালসহ ওদের আস্তানাটাই পাওয়া গেছে। থামল সে। তারপর বলল, প্রফেসর উইলসনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি প্রফেসর বেনজামিন। কাজেই বেঁচে গেছেন তিনি। মিডল ঈস্টে চলে গেছেন প্রাচীন ভাষার ওপর গবেষণা করতে।