আসলে, মমিটা মোটেই চাইনি আমি, কফিন থেকে নেমে এল উইলসন। আমার দরকার ছিল এই কাঠের বাক্সটা। প্রফেসর, রা-অরকনের মমিটা যেদিন আবিষ্কার করলেন, আমার বাবা ছিল আপনার সঙ্গে।
ছিল, মাথা নাড়লেন প্রফেসর। খুব ভাল মানুষ ছিল। কায়রোর বাজারে খুন। হল বেচারা!
সেদিন আরও একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন বাবা, বলল উইলসন। যা আপনি জানেন না। জানানো হয়নি আপনাকে। সমাধি মন্দিরে বসে কফিনটা পরীক্ষা করছিল বাবা। গোপন একটা কুঠুরি পেয়ে গেল কফিনে, হঠাৎ করেই। ছোট একটা কাঠের টুকরো দিয়ে বন্ধ ছিল কুঠুরির মুখ। ওটার ভেতরে আছে…দাঁড়ান, দেখাচ্ছি। যন্ত্রপাতির বাক্স খুলে ছোট একটা করাত বের করে নিয়ে এল ভাষাবিদ। একপাশে কাত করে ফেলল কফিনটা। একটা জায়গায় করাত বসাতে যাবে, হা হা। করে উঠলেন প্রফেসর বেনজামিন।
না না, ওকাজ কোরো না! চেঁচিয়ে বললেন প্রফেসর। কফিনটা খুব মূল্যবান অ্যানটিক, তুমিই বলেছ!
ভেতের যা আছে, তার তুলনায় কিছু না, মলিন হাসি ফুটল উইলসনের। ঠোঁটে। তাছাড়া, এক টুকরো কাঠ আপনার দরকার এটা থেকে, কার্বন টেস্টের জন্যে। কাঠের টুকরোটা শক্ত আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছিল বাবা। করাত দিয়ে না কেটে ওটা খোলা যাবে না। সত্যি বলছি, কাটা ছাড়া খোলা গেলে এটা চুরি করার। দরকার হত না। আপনার বাড়িতেই কোন এক ফাঁকে খুলে ভেতরের জিনিসগুলো নিয়ে চলে আসতে পারতাম। কফিনে করাত বসিয়ে চালাতে শুরু করল ভাষাবিদ। কাজ করতে করতেই বলল, আমার বাবা একটা চিঠি লিখেছিল আমার কাছে। তাতে লেখা ছিল সব কথা। তার মৃত্যুর পরে ওই চিঠি এসে হাতে পৌঁছে আমার। আমি তখন কলেজে পড়ছি। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম মিশরে। কিন্তু তখন কায়রো জাদুঘরে মমিসহ কফিনটা জমা দিয়ে ফেলেছেন আপনি। আমার আর কিছুই করার। থাকল না। অপেক্ষা করে রইলাম, বছরের পর বছর। তারপর, মাস দুই আগে খবর। পেলাম, কায়রো জাদুঘর থেকে আপনার নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মমিটা। সঙ্গে সঙ্গে উড়ে গেলাম মিশরে। অনেক খুঁজে বের করলাম এক সম্ভ্রান্ত, ধনী লিবিয়ান পরিবারকে, যারা নিজেদেরকে ফারাওয়ের বংশধর বলে দাবি করে। জ্যোতিষের ছদ্মবেশে গিয়ে একদিন হাজির হলাম তাদের বাড়িতে। সহজেই বিশ্বাস করিয়ে ফেললাম, রা-অরকন তাদের পূর্বপুরুষ। বোঝালাম, যে করেই হোক, মমিটা আমেরিকান প্রফেসরের কাছ থেকে তাদের ফিরিয়ে নেয়া উচিত। আমি চেয়েছিলাম, মিস্টার জামান লোক পাঠাক আপনার কাছে মমিটা নেয়ার জন্যে। ওরা এলে আপনি ফিরিয়ে দেবেন, খুব ভাল করেই জানি; তারপর তোক দিয়ে চুরি করাতাম ওটা, আপনি কিংবা পুলিশ ভাবত, লিবিয়ান ওই ব্যবসায়ীই চুরি করিয়েছে মমিটা। সব দোষ তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ত। আমি থেকে যেতাম আড়ালে। হয়ত বিশ্বাস করবেন না প্রফেসর, চুরি করতে খুব খারাপ লাগছিল আমার। তাই সেটা না করে যাতে কাজ হাসিল হয়ে যায়, সেজন্যে অনেক ভেবে আরেক উপায় বের করেছিলাম। মমিটাকে কথা বলিয়েছি। ভেবেছি, ভয় পেয়ে আপনি ওটা ফেলে দেবেন, কিংবা কিছু একটা করবেন। আমি কফিনটা থেকে জিনিসগুলো হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাব। অথবা, প্রাচীন ভাষা বুঝতে না পেরে আমাকে ডাকবেন। ডেকেছেনও। কিন্তু আমি আপনাকে মমিটা আমার বাড়িতে আনতে দিতে রাজি করাতে পারলাম না। তাহলেও চুরির দরকার পড়ত না। জিনিসগুলো খুলে নিয়ে আবার আপনার জিনিস আপনাকে ফেরত দিতাম। কিন্তু সেটাও হল না। আপনি কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজি হলেন না মমি। কি আর করব? বেপরোয়া হয়ে
চুরি করেছ! ধমকে উঠলেন প্রফেসর বেনজামিন। খুব ভাল কাজ করেছ! বাপের নাম রেখেছ! গাধা কোথাকার! তোমার বাপও ছিল একটা গাধা! আমাকে সব কথা খুলে বললেই পারত! তুমি না জানতে পার, কিন্তু তোমার বাপ তো জানত, টাকার কাঙাল আমি কখনও ছিলাম না, এখনও নই।
মুখ নিচু করে করাত চালাচ্ছে উইলসন। খুলে আনল ছোট একটা টুকরো। একটা ফোকরের মুখ বেরিয়ে পড়ল। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিল সে।
সবকটা চোখ উইলসনের হাতের দিকে। ফোকর থেকে কি বের হয়ে আসে দেখার জন্যে উদগ্রীব।
হাত বের করে আনল উইলসন। একটা কাপড়ের পুটুলি, ছোট। সাবধানে পুটুলিটা খুলল মেঝেতে রেখে। কাপড় সরাল। আলোয় জ্বলে উঠল যেন তরল আগুন। লাল, নীল, কমলা, সবুজ।
রত্ন! কথা আটকে গেছে প্রফেসরের। সামলে নিয়ে বললেন, ফারাওয়ের রত্ন! দশ লক্ষ বলছ! কিছু জান না! ওগুলোর অ্যানটিক মূল্যই ত্রিশ-চল্লিশ লক্ষ ডলার! তার ওপর রয়েছে পাথরের দাম!
তাহলে বুঝতেই পারছেন, কেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম, দীর্ঘশ্বাস ফেলল উইলসন। প্রফেসর, আমার বাবা এই পাথরের জন্যেই খুন হয়েছিল। তিন-চারটে পাথর বের করে নিয়েছিল। ওগুলোর মূল্য জানার চেষ্টা করেছিল কায়রো বাজারের এক জুয়েলারির দোকানে গিয়ে পড়ে গেল বদ লোকের চোখে। এরকম কিছু একটা ঘটতে পারে আগেই অনুমান করেছিল বাবা। তবু কৌতূহল দমন করতে পারেনি। বাজারে যাবে, এটাও চিঠিতে লিখেছিল।
অথচ গাধাটা আমাকে বলেনি, বলে উঠলেন প্রফেসর। তাহলে টতে দিতাম না কিছুতেই। কপালে লেখা ছিল অপমৃত্যু, কি আর হবে ৩ খলে! থামলেন। চোখ মিটমিট করে তাকালেন উইলসনের দিকে। যা হওয়ার তো হয়েছে। রা-অরকনের মমিটা কি করেছ?