এখুনি পিছু নিচ্ছি ওটার, ফাস্ট, বলল মুসা। তুমি কোথায়?
গতরাতে তোমরা যেখানে ছিলে, জবাব এল।
কফিনের ভেতরে? চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
এবং ডালাটা দড়ি দিয়ে বাধা, বলল কিশোর। বেরোতে পারব না। তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগের আর কোন উপায় নেই, রেডিও ছাড়া। ট্রাকটাকে চোখের আড়াল করবে না কিছুতেই। তোমাদের সাহায্য দরকার হবে আমার শিগগিরই।
পেছনে লেগে থাকব, বলেই ঘুরল মুসা। দ্রুত নির্দেশ দিল সঙ্গীদেরকে।
তাড়াহুড়ো করে ট্রাকে উঠে পড়ল তিনজনে। কি করতে হবে, রোভারকে বলল। মুসা।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়েই বনবন স্টিয়ারিং ঘোরাল বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান। উল্টো দিকে নাক ঘুরে গেল ট্রাকের। তীব্র গতিতে পেরিয়ে এল কয়েকটা ব্লক। দেখা পেল নীল ট্রাকের। মিলে গেল লাইসেন্স নাম্বার। সন্দেহ নেই, ওটাতেই আছে কিশোর পাশা। আধ ব্লক মত পেছনে সরে এল রোভার। ওই দূরত্ব রেখেই অনুসরণ করে চলল। এখানে রাস্তায় আলো আছে ভালই, নীল ট্রাকটাকে চোখে চোখে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে না।
তোমার আধ ব্লক পেছনে রয়েছি, ফার্স্ট, ওয়াকি-টকিতে জানাল মুসা। ঠিক কোথায় যাচ্ছে ট্রাকটা, জান?
জানি না, জবাব এল কিশোরের। তবে হলিউডের বাইরে কোন একটা গ্যারেজে। কোন ধরনের গ্যারেজ তা-ও বলতে পারব না।
সিনেমা দেখছি যেন! উত্তেজিত হয়ে উঠছে জামান। তবে আরও বেশি রোমাঞ্চকর! কিন্তু কিশোরের কি হবে? যদি হারিয়ে ফেলি আমরা ট্রাকটাকে?
ট্রাকটাকে চোখের আড়াল করা যাবে না কিছুতেই, বিড়বিড় করল রবিন।
বেশ কয়েক মাইল পেরিয়ে এল ওরা। নীল ট্রাকটা এখনও আধ ব্লক দূরে। হঠাৎ গতি বেড়ে গেল ওটার? কোনরকম সন্দেহ হয়েছে? অনুসরণ করা হচ্ছে, বুঝতে পেরেছে?
অনেক দেরিতে বুঝল ওরা কারণটা। সামনে রেল লাইন। ট্রেন আসছে। ব্যারিয়ার পড়তে শুরু করেছে রেলগেটে। শেষ মুহূর্তে বেরিয়ে চলে গেল নীল ট্রাক। আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যারিয়ার ওপরে থাকতে থাকতে পৌঁছতে পারল না রোভার। আটকা পড়ে গেল এপাশে।
ফার্স্ট! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। আমরা আটকা পড়ে গেছি। মালগাড়ি। মাইলখানেকের কম হবে না লম্বায়! চলেছেও খুব ধীরে ধীরে। তোমাদেরকে বোধহয় হারালাম। শুনতে পাচ্ছ?
পাচ্ছি! শোনা গেল কিশোরের গলা। সেকেণ্ড! উত্তেজিত হয়ে উঠেছে সে। মোড় নিয়েছে ট্রাক! দিক-টিক কিছু বলতে পারব না! কোন রাস্তা দিয়ে যে চলেছি… মৃদু হতে হতে মিলিয়ে গেল কথা।
ফাস্ট। চেঁচিয়ে বলল মুসা। তোমার গলা শুনতে পাচ্ছি না! মনে হয় রেঞ্জ বেড়ে গেছে! কিশোর?
কোন জবাব নেই।
আরেকবার চেষ্টা করল মুসা। জবাব পেল না। দুটো ট্রাকের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে, বুঝতে পারল। ওয়াকি-টকির রেঞ্জের মধ্যে নেই কিশোর।
.
১৬.
উৎকন্ঠিত হয়ে অপেক্ষা করল কিশোর কয়েক মিনিট। স্পীকারে আসছে না মুসার গলা। নিশ্চয় রেঞ্জের বাইরে পড়ে গেছে। কল্পনা করতে পারছে ও, ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে আসছে রোভার। চারজোড়া চোখ উদ্বিগ্ন হয়ে খুঁজছে নীল ট্রাকটাকে। কিন্তু অন্ধকারে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বিশৃঙ্খল পথে এটাকে খুঁজে পাওয়া ওদের জন্যে কঠিন।
আবার মেসেজ পাঠানর চেষ্টা করল কিশোর। ফার্স্ট কলিং সেকেণ্ড! শুনতে পাচ্ছ? আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল জবাব। কিন্তু মুসা নয়। একটা অচেনা গলা। অন্য কোন কিশোরের। হ্যাল্লো, কে বলছ? এসব ফার্স্ট সেকেন্দ্রে মানে কি? কোন রকম খেলায় মেতেছ? তাহলে আমাকেও অংশী নাও।
শোন, দ্রুত বলল কিশোর। খেলা নয়, এটা ভয়ানক বিপদ। আমার হয়ে পুলিশকে মেসেজ দিতে পারবে?
পুলিশ? কেন?
দ্রুত ভাবনা চলেছে কিশোরের মাথায়। সত্যি কথা বললে বিশ্বাস করতে পারবে না ছেলেটা। রসিকতা ধরে নিতে পারে। হুশিয়ার হয়ে কথা বলতে হবে। তাই। একটা ট্রাকের পেছনে রয়েছি, আটকে গেছি। চালক আর তার সঙ্গী জানে না। বেরোতে চাই আমি। পুলিশকে ডাক। ওরা ট্রাকটা থামিয়ে আমাকে বের করে নিক। সে বুঝে গেছে, এখন বাইরের সাহায্য অবশ্যই দরকার। একমাত্র পুলিশের কাছ থেকেই পাওয়া যাবে সেটা।
ঠিক আছে, জানাচ্ছি পুলিশকে জবাব দিল ছেলেটা। লুকিয়ে গাড়ি চড়তে গিয়েছিলে, এখন পড়েছ আটকা এই তো?—জলদি কথা বল! নইলে শিগগিরই রেঞ্জের বাইরে চলে যাবে! গাড়িটার কি রঙ? নাম্বার কত?
বলছি, ভাল করে শোন, চেঁচিয়ে বলল কিশোর। নীল ট্রাক, দুই টনী। নাম্বার…
কিছুই শুনতে পাচ্ছি না! শোনা গেল ছেলেটার গলা। আরও জোরে বল!
আমি শুনতে পাচ্ছি, বলল কিশোর। শুনছ? শুনছ?
হ্যাল্লো! হাল্লো! শোনা গেল ছেলেটার গলা। চিৎকার করে কথা বলছে। চুপ হয়ে গেলে কেন! যন্ত্রে গোলমাল!নাকি ট্রান্সমিটিং রেঞ্জের বাইরে চলে গেছ— মৃদু থেকে মৃদুতর হয়ে মিলিয়ে গেল তার গলা।
হতাশ হয়ে পড়ল কিশোর। এবার কি করবে? ওয়াকি-টকিটা শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখল। মুক্তি পাওয়ার কোন একটা উপায় বের করতে হবে। কিন্তু কোন বুদ্ধি এল না মাথায়। দড়ি দিয়ে শক্ত করে কফিনের সঙ্গে ঢাকনাটা বেঁধে রেখেছে মেথু আর ওয়েব।
ফাঁক আছে, বাতাস চলাচল করছে যথেষ্ট, সেদিক থেকে কোন ভয় নেই। ভয় পাচ্ছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ট্রাক থামলে, মেথু আর ওয়েব কফিনের ঢাকনা খোলার পর কি ঘটবে ভেবে, ঢোঁক গিলল সে। ঘাতে শুরু করল। কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছে, তিন দুবৃত্ত ঘিরে দাঁড়িয়েছে কফিনটা। অবাক চোখে চেয়ে আছে তার। ॥ দিকে। তার সাক্ষীতে তিনজনই জেলে যাবে। এবং সেখানে কিছুতেই যেতে চাইবে না ওরা। সুতরাং একটাই কাজ করবে ওরা। নিশ্চিহ্ন করে দেবে সাক্ষীকে। এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই তাদের জন্যে।