ঠিক জায়গাতেই এসে পড়েছে কিশোর। সাহায্য দরকার, সঙ্গে রেডিও আছে, কিন্তু সাহায্য চাইবার উপায় নেই। কথা বললেই শুনে ফেলবে চোরেরা।
চুপচাপ পড়ে আছে কিশোর। হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে যেন বুকের ভেতর। ভয় হচ্ছে, হৃৎপিণ্ডের শব্দ না আবার শুনে ফেলে দুই চোর।
ট্রাক থেকে নেমে এল মেথু। মাত্র ছয় ফুট দূরে দুই জোড়া পা দেখতে পাচ্ছে। কিশোর।
মক্কেল ব্যাটা রাজি হল তাহলে! হাসল মেথু। জানতাম, হবে। কফিনটা, পাওয়ার জন্যে যা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে! কিন্তু এই বাক্স দিয়ে কি করবে ব্যাটা?
ওই ব্যাটাই জানে! বলল ওয়েব। জান তো, কোথায় ডেলিভারি দিতে হবে? হলিউডের বাইরে। একটা খালি গ্যারেজ দেখিয়ে দিয়েছে। ওর ভেতরে ঢুকে যেতে হবে ট্রাক নিয়ে।
তাই নাকি?
আরও আছে। ওর ধারণা, আমাদেরকে অনুসরণ করা হবে। ভয় পাচ্ছে। খুব সতর্ক থাকতে বলেছে আমাদেরকে। যদি দেখে অনুসরণ করা হচ্ছে, তাহলে যেন মাল ডেলিভারি না দিই, এ কথাও বলে দিয়েছে।
ব্যাটার মাথা খারাপ! তীক্ষ্ণ শোনাল মেথুর গলা। কে অনুসরণ করতে আসবে আমাদের? কেউ জানেই না কিছু। আমরা ডেলিভারি দেবই। টাকা ভীষণ দরকার।
আমার কথা শেষ হয়নি এখনও। যদি দেখি অনুসরণ করা হচ্ছে না, তাহলে মাঝপথে থেমে ফোন করে তাকে জানাতে হবে। দরকার মনে করলে, ডেলিভারির ঠিকানা বদল করবে সে।
গরু পেয়েছে আমাদেরকে! এত বদলাবদলি করতে পারব না। তাহলে আরও বেশি টাকা লাগবে।
আসল কথাটা তো শোনাইনি এখনও। ডেলিভারি দেয়ার পর আবার মাল দুটো নিয়ে আসতে হবে ওর ওখান থেকে। নিরাপদ কোন জায়গায় নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যাতে কোনরকম চিহ্ন না থাকে। আর সেজন্যে সে আরও এক হাজার ডলার দেবে আমাদেরকে।
আরও এক হা-জা-র! তাহলে জিনিস দুটো চাইছে কেন? পুড়িয়েই যদি ফেলবে?
জানি না। হয়ত কোন কারণে ভয় পেয়ে গেছে। নষ্ট করে ফেলতে চাইছে। এখন। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকতে পারে। যা খুশি করুকগে। আমাদের টাকা। পাওয়া নিয়ে কথা। পেলেই হল। এস, তুলে নিই এটা ট্রাকে।
কফিনের কাছে গিয়ে দাঁড়াল দুই জোড়া পা। আলো পড়েছে ওটার ওপর, দেখতে পাচ্ছে কিশোর। টান দিয়ে ক্যানভাস তুলে ফেলল একজন। আরেকজন ঝুঁকল কফিনটার ওপর।
দাঁড়াও, বলে উঠল ওয়েব। খুলে আগে দেখে নিই। ব্যাটা এত পাগল কেন! নিশ্চয় মূল্যবান কিছু আছে এর ভেতর!
ঢাকনা তুলে ফেলল দুজনে মিলে। বাক্সের ভেতরের চারধার আর তলায় হাত চালিয়ে দেখল।
না, বলল ওয়েব। কিছু নেই। ধর, ট্রাকে তুলে ফেলি।
আবার জায়গামত ঢাকনাটা বসাল ওরা। এক প্রান্ত থেকে ঠেলে নিয়ে এল ট্রাকের পেছনে। তুলতে গিয়ে দেখল, দরজা আর ট্রাকের পেছনে খুব একটা ফাঁক নেই। জায়গা হচ্ছে না, তাই তোলা যাচ্ছে না কফিনটা।
আরও সামনে বাড়াতে হবে ট্রাক, বলল ওয়েব। অল্প একটু বাড়ালেই চলবে।
তুমি বাড়াও। আমি পানি খেয়ে আসি, বলে একদিকে চলে গেল মেথু।
ড্রাইভিং সিটে বসল ওয়েব। গর্জে উঠল ইঞ্জিন। কয়েক ফুট সামনে বাড়াল ট্রাক। কিশোরের ওপর থেকে সরে চলে গেছে।
বেকায়দায় পড়ে গেল কিশোর। রেডিওতে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় নেই। হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে কোণের কোন একটা জিনিসের আড়ালে লুকিয়ে। থাকতে পারে। কিন্তু তাহলে চলে যাবে ট্রাকটা। ওটাকে অনুসরণ করার কোন উপায় থাকবে না। ট্রাকের ভেতরে উঠে বসে থাকতে পারে। কিন্তু কফিনটা তোলার। সময়ই তাকে দেখে ফেলবে চোরেরা।
ভাবনার ঝড় বইছে কিশোরের মাথায়। কোন উপায় দেখছে না। লুকিয়ে থেকে ট্রাকটাকে অনুসরণ করতে হবে, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, অথচ চোরদের চোখে পড়া চলবে না, একই সঙ্গে সবগুলো করা অসম্ভব মনে হচ্ছে তার। কাছে। অথচ যেভাবেই হোক করতেই হবে।
তারপর, হঠাই বুঝে গেল কিশোর, কি করতে হবে।
এখনও ফেরেনি মেথু। ড্রাইভিং সিটেই বসে আছে ওয়েব। হামাগুড়ি দিয়ে। কফিনটার কাছে এগিয়ে গেল কিশোর। আস্তে করে ঢাকনার একদিক ফাঁক করে। বান মাছের মত পিছলে ঢুকে পড়ল ভেতরে। আবার নামিয়ে দিল ঢাকনা। তবে, আগে ফাঁকের মধ্যে একটা পেন্সিল ঢুকিয়ে নিল, মুসা যা করেছিল। বাতাস চলাচল দরকার।
আর কিছুই করার নেই। এখন শুধু চুপচাপ শুয়ে থাকা। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করে রইল কিশোর।
.
ট্রাকের কাছে ফিরে এসেছে মুসা। চতুরে দাঁড়িয়ে আছে রবিন আর জামানের সঙ্গে। সবাই উদ্বিগ্ন। কিশোরের কাছ থেকে শেষ নির্দেশ আসার পর অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে। আর কোন সাড়া নেই। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করছে রবিন আর মুসা। কিন্তু একেবারে নীরব গোয়েন্দাপ্রধান। হল কি? কোন বিপদে পড়ল?
তারপর হঠাৎ করেই কথা বলে উঠল স্পীকার। ফার্স্ট কলিং সেকেণ্ড! ফার্স্ট কলিং সেকেণ্ড! মুসা, শুনতে পাচ্ছ?
সেকেণ্ড বলছি। শুনতে পাচ্ছি, ফাস্ট। কি হয়েছে?
যে ট্রাকটাকে খুঁজছ, ওটা এখন হলিউডের দিকে ছুটছে। ভেসে এল। কিশোরের গলা। নীল, রঙ-চটা, দুই টনী ট্রাক। লাইসেন্স নাম্বার: পি এক্স সাতশো পঁচিশ। এখন সম্ভবত পেইন্টার স্ট্রীট ধরে পশ্চিমে ছুটেছে। শুনতে পেয়েছ?
পেয়েছি! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ওরা এখন পেইন্টার স্ট্রীটেই দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরের জোরাল গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, মাত্র কয়েকটা ব্লক দূরে আছে সে।