বাড়িটার পেছনে চলে এল ওরা। বড় একটা দরজা, ভেতরে নিশ্চয় স্টোররুম। দরজায় নীল রঙে আঁকা কয়েকটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
ওই যে, সেকেণ্ড, তোমার চিহ্ন, আঙুল তুলে দেখাল কিশোর। জায়গা এটাই।
সন্দেহ হচ্ছে! ভুরু কুঁচকে আছে মুসা। ওই চিহ্ন আমি আঁকিনি! জামান, তোমার কি মনে হয়?
আমারও সন্দেহ হচ্ছে, বলল জামান। তবে অন্ধকার ছিল তখন। ভালমত দেখিনি। হয়ত এই বাড়িই।
তাছাড়া উত্তেজিত ছিলে তোমরা, তাড়াহুড়ো ছিল, বলল কিশোর। ভালমত দেখতে পাবার কথাও নয়। এই যে দরজাটা, এটা দিয়ে সহজেই ট্রাক ঢুকতে পারবে। তলায় কয়েক ইঞ্চি ফাঁকও রয়েছে। চল, উঁকি দিয়ে দেখি ভেতরে। কফিনটা চোখে পড়লেই সব সন্দেহের অবসান হয়ে যাবে।
দরজার কাছে এগিয়ে গেল ওরা। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল মুসা। মাথা নুইয়ে উঁকি দিল নিচ দিয়ে। ঠিক এই সময় শব্দ তুলে উঠে গেল দরজা। দেখা গেল তিনটে মুখ। হাসিতে উজ্জ্বল।
এই যে, কিশোর হোমস আর তার চেলাচামুণ্ডারা এসে গেছেন, খুশিতে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে টেরিয়ার ডয়েলের।
সূত্র খুঁজছ, শার্লক হোমস? বলল টেরিয়ারের এক সঙ্গী। দাঁত বের করে হাসছে।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন খুঁজছ তো? বলল তৃতীয় ছেলেটা। প্রচুর দেখতে পাবে। শহরতলীর যেখানে খুজবে সেখানেই পাবে। প্রচুর চিহ্ন রয়েছে।
আমার মনে হয়, আর অপেক্ষা করে লাভ নেই, সঙ্গীদেরকে বলল টেরিয়ার। আমাদের যাওয়াই উচিত। মিস্টার গর্দৰ্ভ হোমস আর তার ছাগল-চেলারা দায়িত্ব। নিয়েছে। পরিস্থিতি আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারবে শিগগিরই।
মুঠো পাকিয়ে এগোতে গেল মুসা, খপ করে তার হাত চেপে ধরল কিশোর। ছেড়ে দাও। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করবে নাকি? শুঁটকি আরও শুঁটকি হয়ে ফিরে এসেছে। গন্ধে কাক ভিড় জমাবে। ওয়াক, থুহ!
জ্বলে উঠল টেরিয়ারের চোখ। পা বাড়াতে গিয়েও মুসার পেশীবহুল বাহুর দিকে চেয়ে থেমে গেল। ফিরে তাকাল দুই সঙ্গীর দিকে, ওদের সাহায্য পাবে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু নিরাশ হল। রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা নীল স্পোর্টস কারটার দিকে তাকাচ্ছে ওরা ঘনঘন। ছুটে গিয়ে ওতে উঠে পড়ার তালে আছে। মুসা আমানের সঙ্গে লগতে রাজি নয় কেউই।
তৈরি থেক, শার্লক হোমসেরা, কর্কশ গলায় বলল টেরিয়ার। আবার দেখা করব আমি তোমাদের সঙ্গে। ছুটে বেরিয়ে গেল সে। পেছনে ছুটল তার দুই সঙ্গী।
গাড়ি নিয়ে চলে গেল টেরিয়ার আর তার সঙ্গীরা।
প্রচুর চিহ্ন রয়েছে, টেরিয়ারের সঙ্গীর এই কথাটার মানে প্রথম বুঝতে পারল রবিন। আঙুল তুলে পাশের বাড়ির একটা দরজা দেখিয়ে বলল, দেখ দেখ, নীল প্রশ্নবোধক! তার মানে বন্ধ দরজা এদিকে যে কটা পেয়েছে, সবগুলোতে চিহ্ন এঁকেছে ওরা!
রাগে লাল হয়ে উঠেছে কিশোরের মুখ। শুঁটকি আর তার চেলাদের কাজ! নিশ্চয় কোন একটা ছেলে শুঁটকির কাছেও ফোন করে বলেছিল আমরা কি খুঁজছি। ব্যস, এখানে এসে তৈরি হয়ে বসে ছিল টেরি। তার কোন একটা চেলা ফোনে আমাদেরকে ঠিকানা দিয়েছে এ-বাড়িটার।
খুব একখান গোল দিয়ে গেল আমাদেরকে, হারামজাদারা! গোঁ গোঁ করে উঠল মুসা। খামোকা আটকেছ আমাকে। হাতের ঝাল মিটিয়ে নিতাম! পিটিয়ে তজ্ঞা করে ফেলা উচিত ব্যাটাকে—!
পরিস্থিতি খুব জটিল করে দিয়ে গেছে টেরিয়ার, এতে কোন সন্দেহ নেই। নীল প্রশ্নবোধকের আর কোন মূল্য নেই এ-মুহূর্তে। কোন্ বাড়িটায় যে রয়েছে কফিন, চিহ্ন দেখে বোঝার আর কোন উপায় নেই।
কি করব আমরা এখন? হতাশ কণ্ঠে বলল রবিন। হেডকোয়ার্টারে ফিরে যাব?
নিশ্চয় না! জোর দিয়ে বলল কিশোর। প্রথমে দেখব, কতগুলো দরজায় প্রশ্নবোধক এঁকেছে শুঁটকি আর চেলারা। তারপর কি করা যায়, পরে বিবেচনা করব। তবে, ভূত-থেকে-ভূতে ব্যবস্থার ভাল দিক বেশি হলেও দুর্বলতা কিছু রয়েছে। এটা নিয়ে ভাবতে হবে, পরে।
ছড়িয়ে পড়ে খুঁজতে শুরু করল ওরা। বেশ কয়েকটা ব্লকে পাওয়া গেল প্রশ্নবোধক। হতাশ হয়ে ট্রাকের কাছে ফিরে এল ওরা, এরপর কি করবে তা নিয়ে ভাবতে বসল।
গাড়ি নিয়ে ঘুরব, বলল কিশোর! হয়ত জামান কিংবা মুসার চোখে পরিচিত কিছু পড়েও যেতে পারে। এতখানি এসে হাল ছেড়ে দেব না কিছুতেই। এটাই আমাদের শেষ সুযোগ। ওয়েব আর মেধু কফিনটা একবার এ-এলাকা থেকে বের করে নিয়ে গেলে, মমি-রহস্য সমাধানের উপায়-আর থাকবে না।
ভারি মন নিয়ে ট্রাকে চড়ল ওরা। ক্যামেট স্ট্রীট ধরে খুব ধীরে এগোল। রোভার।
মার খেয়ে গেলাম আমরা, বিষণ্ণ মুসা। সেটা স্বীকার করে নিলেই তো পারি?
পাগল হয়েছ? গম্ভীর কিশোর। তাহলে শুঁটকি আমাদেরকে আর টিকতে দেবে না রকি বীচে। যেখানে যাব, পেছন থেকে হাততালি দিয়ে হাসবে—ওই যে, একটা গীর্জা। গতরাতে ওটা চোখে পড়েছিল?
নাহ্! মাথা নাড়ল মুসা। তাছাড়া যেটা দিয়ে চলেছি, রাস্তাও এটা নয়। আরও অনেক সরু ছিল, এক্কেবারে এঁদো গলি!
অন্য জায়গায় চেষ্টা করতে হবে তাহলে। রোভার, ডানে ঘুরুন, প্লীজ।
হোকে (ওকে), বলল বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান। শাঁই করে ডানে মোড় ঘোরাল ট্রাক। সরু একটা গলি পথে এসে পড়ল।
বড়জোর তিনটা ব্লক পেরিয়েছে ট্রাক, হঠাৎ কিশোরের আস্তিন খামচে ধরল। মুসা। ওই যে, আইসক্রীমের দোকানটা, মনে হচ্ছে গত রাতে ওটার পাশ দিয়ে। ছুটেছিলাম। আঙুল তুলে দেখাল সে কোন-আইসক্রীম চেহারার ছোট বিল্ডিংটা।