এক মুহূর্ত ভাবল মুসা। মালী, মানে, জলিল। জামানদের ম্যানেজার।
ঠিক, কিশোর বলল। মমিটাকে রাখার জন্যে কফিনটাও তারই বেশি দরকার। তাই না?
নিশ্চয়ই। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। কিন্তু জামান কসম খেয়ে বলেছে, জলিল এ-ব্যাপারে কিছু জানে না।
জামানের তাই ধারণা। কিন্তু বড়রা সব সময় সব কথা ছোটদেরকে বলে না, এটা তো ভাল করেই জান। আরও একটা কারণ হতে পারে, গোপন কোন পরিকল্পনা থাকতে পারে জলিলের। হয়ত মমিটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে। রেখেছে। পরে জামানের বাবাকে বলবে, অনেক টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। টাকাটা সে নিজে মেরে দেবে। মমিটা ফেরত পাওয়ার জন্যে যে-কোন মূল্য দিতে রাজি জামানের বাবা। সুযোগটা ছাড়বে কেন ম্যানেজার?
ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ঠিক ধরেছ! সে তাই করবে! আরবী জানে জলিল। প্রাচীন আরবী জানাও তার পক্ষে সহজ। দরজার বাইরে লুকিয়ে থেকে ভেন্ট্রিলোকুইজম ব্যবহার করেছে, মনে হয়েছে মমিটাই কথা বলেছে!
মাথা নাড়ল কিশোর। কিন্তু, আগে প্রমাণ দরকার। তার আগে জামানকে কিছু বলা যাবে না। রেগে চার্জ করে বসতে পারে জলিলকে। হুশিয়ার হয়ে যাবে ম্যানেজার। তখন তাকে বাগে পাওয়া খুব কঠিন হবে।
ঠিক, একমত হল মুসা। কিশোর, এখন কি করব? সারাটা দিন পড়ে আছে। স্টোর-হাউসের খবর কখন আসবে কে জানে! মেরিচাচীর সামনেও পড়তে চাই না। আজ ইয়ার্ডের কাজ করতে মোটেই ভাল্লাগবে না।
এবং সেজন্যেই এখন বেরনো যাবে না এখান থেকে, টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল কিশোর। প্রফেসরকে পাওয়া যায় কিনা দেখি। হুপারের খোঁজ নেয়া দরকার।
পাওয়া গেল প্রফেসরকে। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে হুপার, জানালেন। তিনি। প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিল বেচারা। অদ্ভুত এক দৃশ্য নাকি দেখেছে গতরাতে। ঝোঁপ থেকে নাকি বেরিয়ে এসেছিল শেয়াল-দেবতা আনুবিস। দুর্বোধ্য ভাষায় চেঁচিয়ে উঠেছিল। আতঙ্কেই বেহুশ হয়ে গেল হুপার। তার ধারণা, তারপর রা-অরকনকে চুরি করে নিয়ে গেছে আনুবিস।
চাওয়া-চাওয়ি করল কিশোর আর মুসা।
কিন্তু আমরা জানি, ওয়েব আর মেথু চুরি করেছে মমিটা! ফিসফিস করে বলল মুসা।
প্রফেসর, ফোনে বলল কিশোর। আমার মনে হয়, রবারের মুখোশ পরে। এসেছিল কেউ। ভয় দেখিয়েছে হুপারকে। আনুবিসের মুখোশ পাওয়া যায় বাজারে। অবিকল ওরকম না হলেও শেয়ালের মুখ যে-কোন খেলনার দোকানে পাওয়া যায়।
তা ঠিক, স্পীকারে শোনা গেল প্রফেসরের কণ্ঠ। আমারও তাই ধারণা। তো, কি মনে হয়? মমিটা আবার ফিরে পাওয়া যাবে? রহস্যটা কি, কিছু বুঝতে পেরেছ? জলিল ব্যাটাকে সন্দেহ-টন্দেহ হয়?
কিছু কিছু ব্যাপার আন্দাজ করেছি, স্যার, কিন্তু কোন প্রমাণ পাইনি এখনও। আর, আজ বিকেলে কফিনটা উদ্ধার করতে যাব, আশা করছি। তেমন কিছু জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে জানাব। রাখি এখন। রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। ট্রেলারের ছাতের দিকে চেয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল।
অপেক্ষা করছে মুসা। এক সময় উসখুস করতে লাগল। শেষে আর থাকতে না। পেরে জিজ্ঞেস করে ফেলল, কি ভাবছ?
ভাবছি, মুখ নামাল কিলোর। প্রফেসর বেনজামিন বলেছেন অভিনেতা ছিল হুপার। থিয়েটারে অভিনয় করেছে।
তাতে কি?
বেহুশের অভিনয় সহজেই করতে পারে একজন অভিনেতা, বলল কিশোর। রঙ্গ-নাটকে ভেন্ট্রিলোকুইস্টের কাজ করেছে কিনা, তাই বা কে জানে?
যদি করে থাকে?
অনুমান কর।
হুপারকে অপরাধী ভাবছ? ও একা? নাকি জলিলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে? নাকি অন্য কারও সঙ্গে? আসলে কি ভাবছ তুমি, কিশোর?
সময়েই সব জানা যাবে, কেমন রহস্যময় শোনাল কিশোরের কথা।
এরপর সারাটা দিনে রেগে গুম হয়ে থাকল মুসা। আর একটা কথা বলল না কিশোর। তার কোন কথার জবাবও দিল না। একমনে কি ভাবল সারাক্ষণ।
১৪.
বিকেল। ইয়ার্ডের পিক-আপটা খারাপ রাস্তা ধরে ঝাঁকুনি খেতে খেতে ছুটে চলেছে লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলীর দিকে। স্টিয়ারিং ধরেছে রোভার। মেরিচাচীকে অনেক অনুরোধ করে অনুমতি আদায় করেছে কিশোর।
ছটার অনেক আগেই এসে হাজির হয়েছে জামান। এখন বসে আছে রোভার আর কিশোরের পাশে। ট্রাকের পেছনে ভাঁজ করে রাখা ক্যানভাসের ওপর বসেছে। রবিন আর মুসা। সারাক্ষণ তর্ক করছে ওরা, কে অপরাধী তা নিয়ে। একবার বলছে জলিল, একবার হুপার। দুবার এক মত হয়েছে, দুবারই মত পাল্টেছে আবার। এখন আবার শুরু করে দিয়েছে তর্ক। কিছুতেই মনস্থির করতে পারছে না, কাকে অপরাধী বলবে। ম্যানেজার আর খানসামা, দুজনকেই অপরাধী মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
শহরতলীর একটা প্রান্তে পৌঁছে থেমে গেল ট্রাক। পাশ দিয়ে বাইরে উঁকি দিল। মুসা আর রবিন। পুরানো একটা থিয়েটার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এক সময় বড়সড় রঙচঙে সাইনবোর্ড ছিল, এখনও রয়েছে, তবে আগের সেই জৌলুস নেই। থিয়েটার শব্দটা কোনমতে পড়া যায়। সদর দরজায় একটা নোটিশ: বন্ধ। ঢোকার চেষ্টা করবেন না কেউ।
জামান আর কিশোরকে বেরিয়ে আসতে দেখে লাফ দিয়ে নামল মুসা আর রবিন।
বিল্ডিংটা চিনতে পারছ? মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
সামনেটা দেখিনি গতরাতে, মুসার কণ্ঠে সন্দেহ। তবে উঁচু যেন একটু বেশিই মনে হচ্ছে!
এই বিল্ডিংটা নয়! মাথা নাড়ল জামান।
কিন্তু আমাদের ভূত এই ঠিকানাই তো দিয়েছে, হাতের কাগজের টুকরোটা দেখছে কিশোর। টেলিফোনে ঠিকানা জানিয়েছিল একটা ছেলে, লিখে নিয়েছে। এক আট তিন নয় দুই, ক্যামেট স্ট্রীট।—চল, পেছন দিকটা দেখি। দরজায়। প্রশ্নবোধক থাকলে আর কোন সন্দেহ নেই।