চমৎকার! বন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা মুসার কণ্ঠে। এত সহজ ব্যাপারটা মাথায়ই আসেনি।—কিন্তু স্টোর হাউসটা খুঁজে পাওয়া—মানে, খুঁজে পাব, কারণ চিহ্ন রেখে এসেছি কিন্তু তাতে তো সময় লাগবে। দিন পনেরোর আগে হবে না। অথচ হাতে সময় আছে মাত্র আট-নয় ঘণ্টা।
খুঁজতে যাচ্ছি না আমরা সেভাবে, মাথা নাড়ল কিশোর। লাভও হবে না গিয়ে খুঁজে। অন্য প্ল্যান করেছি, বলেছি না। একটা সুন্দর নাম দিয়েছি ব্যবস্থাটার ভূত থেকে ভূতে।
হাঁ হয়ে গেল অন্য তিনজন। কিছুই বুঝতে পারছে না।
খুব সহজ একটা ব্যাপার, হেসে বলল কিশোর। অথচ খুব কার্যকন্দ্র হবে। আমার বিশ্বাস। খবর জোগাড়ের জন্যে শহরের প্রায় সব কজন ছেলেমেয়েকে লাগিয়ে দেয়া যায় এতে। কারোই কোন কষ্ট হবে না, অথচ খবর ঠিকই এসে যাবে। আমাদের হাতে। ছোট একটা পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছি শুধু।
কিশোরের কথা আরও হেঁয়ালিপূর্ণ মনে হল ওদের কাছে। চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে।
সকালে, বলল কিশোর। আমার পাঁচজন বন্ধুকে ফোন করেছি। বলেছি, লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলীতে একটা স্টোর-হাউসের দরজায় কিছু নীল প্রশ্নবোধক আঁকা আছে। কথাটা ওদের পাঁচজন বন্ধুকে জানাতে বলেছি। কজন হল? পঁচিশ জন। ওই পঁচিশ জন আবার তাদের পাঁচজন করে বন্ধুকে জানাবে ফোন করে। তার মানে? একশো পঁচিশ। ওই একশো পঁচিশজন আবার তাদের পাঁচজন বন্ধুকে জানাবে। এভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়বে খবরটা। হাজারে হাজারে। ছেলেমেয়ে একশো ডলার পুরস্কারের লোভে খুঁজতে থাকবে নীল প্রশ্নবোধক। কাজ কতখানি হালকা হয়ে গেল আমাদের সময় কতখানি বাঁচল? এখন শুধু অপেক্ষার পালা। যে-কোন মুহূর্তে এসে যাবে খুব্বর।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। ছুটে গিয়ে চেয়ারসুদ্ধ জড়িয়ে ধরল বন্ধুকে। কসম খোদার, কিশোর পাশা! তুমি–তুমি সত্যিই একটা জিনিয়াস!
ঠিক এই সময় বাজল টেলিফোন। আস্তে করে মুসার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রিসিভারের দিকে হাত বাড়াল কিশোর। কানে ঠেকাল রিসিভার। হ্যাল্লো বলেই একটা সুইচ টিপে দিল। জ্যান্ত হয়ে উঠল স্পীকার।
কিশোরের এক বন্ধু। জানাল, ভূত থেকে ভূতে ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। তবে বিকেলের আগে খবর পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না, বলল ছেলেটা। তারপর কেটে দিল কানেকশন।
খামোকা বসে না থেকে, প্রফেসর বেনজামিনের ওখান থেকে আরেকবার ঘুরে আসা যাক, প্রস্তাব রাখল কিশোর।
কিন্তু মেরিচাচী যেতে দেবেন বলে মনে হয় না, মাথা নাড়ল মুসা। আসার সময় শুনে এলাম বোরিস আর রোভারের সঙ্গে কথা বলছেন। অনেক কাজ ইয়ার্ডে আমরা এখান থেকে বেরোলেই আটকাবেন।
ঠিকই বলেছ, সায় দিল কিশোর। তার চেয়ে বরং ফোন করি প্রফেসরকে জামান, তোমার আর খামোকা বসে থাকার দরকার নেই। রবিন, ওকে এগিয়ে দিয়ে এস, প্লীজ।
যাচ্ছি, উঠে পড়ল রবিন।
জামানও উঠল। জলিলকে তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া দরকার, কিশোর পাশা। একটা ভুল ভাঙবে। তার ধারণা, আমেরিকান ছেলেরা সব পাজী। কাজকর্ম কিছু করে না। খালি অকাজের তালে থাকে, আর বাপের পয়সা ধ্বংস করে।
আমি আমেরিকান নই, বলল কিশোর পাশা। বাঙালি। তবে আমেরিকান ছেলেরা সবাই খারাপ নয়। জলিলের সত্যিই এটা ভুল ধারণা। এই যে আমাদের রবিন, ও কি খারাপ?
হ্যাঁ, এটাই বোঝানো দরকার ওকে। আচ্ছা, চলি। রবিনের পেছনে পেছনে দুই সুড়ঙ্গের দিকে এগিয়ে গেল জামান।
জামান, পেছন থেকে ডাকল কিশোর। গতরাতে যা যা ঘটেছে, সব নিশ্চয় বলনি জলিলকে?
রা-অরকনকে খুঁজতে তোমার সাহায্য চেয়েছি, এটাই শুধু বলেছি, ফিরে চেয়ে বলল জামান। বিশেষ কেয়ার করেনি। বলল, বাচ্চা-কাচ্চাদের এর মাঝে টেনে আনা বোকামি।
আর কিছু না বলে ভাল করেছ, বলল কিশোর। কিছু বলবেও না বড়দেরকে বেশি বিশ্বাস কোরো না। নিজেদেরকে সবজান্তা ভাবে, ছোটদের ব্যাপারে সব সময় বাগড়া দেয়। এবং অনেক সময়ই ঠিক কাজ করে না। তাছাড়া গোয়েন্দার কাজে গোপনীয়তা একান্ত দরকার। কাউকে কিছু বলবে না, ঠিক আছে?
মাথা কাত করল জামান। হ্যাঁ, আবার কখন দেখা হচ্ছে আমাদের?
আজ বিকেল ছটায় চলে এস, বলল কিশোর। ততক্ষণে স্টোর-হাউসের হদিস হয়ত পেয়ে যাব আমরা।
ঠিক আছে! ট্যাক্সি নিয়ে আসব। জলিল নাকি আজ খুব ব্যস্ত থাকবে কয়েকজন কার্পেট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলবে। সে আমাকে বাধা দিতে পারবে না।
রবিনের সঙ্গে বেরিয়ে গেল জামান।
খুব ভাল ছেলে, বলল মুসা। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা কি বল তো, কিশোর? কি যেন ভাবিয়ে তুলেছে তোমাকে! রা-অরকনকে কে চুরি করেছে, জান নাকি?
সন্দেহ করছি একজনকে, বলল কিশোর। মিসেস চ্যানেলের বেড়ালটার খবর ছবিসহ অনেক ম্যাগাজিন আর পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, না?
হয়েছিল, বলল মুসা। কয়েকটা ছবি দেখিয়েছেনও আমাকে মিসেস চ্যানেল।
ধর, ওরকম একটা বেড়াল দরকার কারও। স্ফিঙ্কসের কথা সহজেই জানতে পারবে সে। বেড়ালটা খুব ভদ্র, ওটাকে যে কেউ ধরে নিয়ে যেতে পারে। তারপর পায়ে কালো রঙ করে নেয়াটা কিছুই না। এখন কথা হচ্ছে, রা-অরকনকে কার এত দরকার হল? জামানের ঘরে বেড়ালটাকে ঢুকিয়ে দেয়া কার পক্ষে সহজ? সমাধিকক্ষে লেখা অভিশাপের কথা কে বেশি জানে? এবং কে প্রফেসর বেনজামিনের কাছ থেকে মমিটা নিয়ে যেতে চায়?