কোথায় যেতে পারে? উৎকণ্ঠা ফুটেছে রবিনের চেহারায়।
কি জানি! কিশোরও উদ্বিগ্ন। সান্তা মনিকা থেকে প্রফেসরের বাড়িতে যায়নি তো? বোরিস ফিরলেই জানা যেত। শো ভাঙতে দেরি আছে এখনও, বলল রবিন। চল, ততক্ষণ অপেক্ষা করি।
১০.
একটানা ছুটে চলেছে ট্রাক। এবড়ো খেবড়ো অসমতল পথে নেমে এসেছে এখন। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। কফিনের ভেতর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পড়ে আছে মুসা আর জামান, নড়তে চড়তে পারছে না খুব একটা। হাড়গোড় গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
গুমট হয়ে আসছে কফিনের ভেতরের বাতাস, বাইরে থেকে খুব একটা ঢুকতে পারছে না। বেশিক্ষণ এই অবস্থায় থাকলে অক্সিজেনের অভাবেই মরতে হবে, ভাবল মুসা।
ভয় পেতে শুরু করেছে দুজনেই, কিন্তু কেউই প্রকাশ করছে না সেটা।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একসময় বলল জামান। ফিসফিস করছে, যদিও কোন দরকার নেই। ট্রাকের ইঞ্জিনের প্রচণ্ড আওয়াজ কানে যাবে না ওয়েব কিংবা মেথুর।
কোথায় কে জানে! বলল মুসা। কথাবার্তা শুনে যা বুঝলাম, কোন গোপন জায়গায় নিয়ে লুকিয়ে রাখবে। যে এই কাজের ভার দিয়েছে, তার কাছে ডাবল টাকা চাইবে। টাকা আদায় করার পর তবে দেবে কফিনটা। ভালই। সময় পাব আমরা। সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ব কফিন থেকে। বলল বটে, কিন্তু সহজে বেরিয়ে পড়তে পারবে, বিশ্বাস হচ্ছে না তার নিজেরই। যদি দড়ির বাধন না খোলে চোরেরা? এখন যেভাবে আছে, তেমনিভাবে ফেলে রেখে চলে যায়?
প্রফেসরের বাড়িতে দুবার আসতে হয়েছে, বলল ওরা। ফিসফিস করেই বলল জামান। কেউ একজনকে পাগল বলল। কিছু বুঝেছ?
রা-অরকনের মমি চুরি করতে পাঠানো হয়েছে ওদের, বলল মুসা। সোজা কথা, ভাড়া করা হয়েছে। মমিটা নিয়ে গেছে ওরা। কিন্তু সেই লোক চেয়েছে কফিনসুদ্ধ। তাই আবার পাঠিয়েছে ওদেরকে। ওরা গেছে রেগে। কফিনটা নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও রাখবে। ডুবল টাকা না পেলে দেবে না ওটা।
হু, তাই হবে, একমত হল জামান। কিন্তু রা-অরকনের মমি চুরি করবে কে? কেন? ও আমার দাদা, আর কারও নয়।
এটা আরেক রহস্য, বলল মুসা। নিশ্চয় এতক্ষণে একটা নাম দিয়ে ফেলেছে রবিন, নোট লিখে ফেলছে। মমি-রহস্য নামটাই সবচেয়ে উপযুক্ত।
রবিন? রবিন কে?
তিন গোয়েন্দার একজন।
তিন গোয়েন্দা! সেটা আবার কি? জামানের কণ্ঠে বিস্ময়।
অল্প কথায় জানাল সব মুসা।
গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনল জামাল। মুসার কথা শেষ হতেই বলল, তোমরা, আমেরিকান ছেলেরা বড় আরামে আছ। আমার দেশে, লিবিয়ায় অনেক কিছুই অন্য রকম। কার্পেটের ব্যবসা আছে আমাদের। বাবা তো আছেনই, আমাকেও দেখাশোনা করতে হয়। তোমাদের মত এত স্বাধীন না, যা খুশি করতে পারি না। তোমাদের হেডকোয়ার্টার সম্পর্কে আরও বল। টেপ-রেকর্ডার, পেরিস্কোপ, আর? রেডিও, টেলিভিশন, এসব নেই?
রেডিও! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ইসস, আরও আগে মনে হয়নি কেন! বাইরের সাহায্য চাইতে পারতাম আরও আগেই!
পকেটেই আছে ছোট ওয়াকি-টকিটা। কফিনের ভেতরে জায়গা বেশি নেই। ওই স্বল্প পরিসরেই কোনমতে শরীর বাঁকিয়ে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল যন্ত্রটা। কোমর থেকে খুলে নিল অ্যান্টেনা। ডালার ফাঁকে যেখানে পেন্সিল ঢুকিয়েছে ওখান দিয়ে বের করে দিল অ্যান্টেনার এক প্রান্ত। তারপর টিপে দিল সুইচ।
হাল্লো, ফার্স্ট ইনভেস্টিগেটর! মুখের কাছে ওয়াকি-টকি নিয়ে এসেছে মুসা। সেকেণ্ড বলছি। শুনতে পাচ্ছ? জরুরি! ওভার।
জবাবের জন্যে কান পেতে রইল মুসা। এক মুহূর্ত নীরবতা। হঠাৎ ধক করে উঠল তার বুকের ভেতর। কথা শোনা গেল: হ্যালো, টম, শুনতে পাচ্ছ? অন্য কেউ ঢুকে পড়েছে আমাদের চ্যানেলে।
জবাব দিল দ্বিতীয় একটা গলা: হ্যাঁ, জ্যাক। একটা ছেলে। খোকা, যেই হও তুমি, চুপ কর। জরুরি কথা বলছি আমরা। জ্যাক, যা বলছিলাম, পথের মাঝে আটকে গেছি। ট্রাকের টায়ার পাঙ্কচার…
হেল্প! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। শুনুন, আমার নাম মুসা আমান। রকি বীচের কিশোর পাশার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছি। খুব জরুরি!
টমের গলা শোনা গেল: কার সঙ্গে যোগাযোগ? খোকা, কি বলতে চাইছ তুমি?
রকি বীচের কিশোর পাশাকে ফোন করুন, প্লীজ, অনুরোধ জানাল মুসা। ওকে বলুন মুসা সাহায্য চাইছে। অত্যন্ত জরুরি।
জ্যাক বলল: কি ধরনের জরুরি, খোকা?
একটা মমির বাক্সে আটকে গেছি, বলল মুসা। রা-অরকনের মমি। চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাকে করে। কিশোর সব বুঝতে পারবে। প্লীজ, ফোন করুন তাকে।
হেসে উঠল জ্যাক। বলল: টম, শুনলে? এই ছেলেছোকরাগুলোর কথা আর কি বলব? নেশার বড়ি খেয়ে খেয়ে সমাজটাই শেষ হতে বসেছে!
প্লীজ! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।নেশা করিনি আমি! কিশোরকে ফোন করুন।
জ্যাক বলল: খোকা, যা করেছ করেছ, আর দুষ্টুমি কোরো না। সিটিজেন ব্যাণ্ডে গোলমাল পাকালে বিপদে পড়বে। পুলিশ শুনলেই কাক করে গিয়ে ধরবে।—টম, অবস্থান জানিয়েছি সাহায্য পাঠাও।
নীরব হয়ে গেল রেডিও।
হল না, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল হতাশ মুসা। অন্য কিছু বলা উচিত ছিল ওদের। টাকা হারিয়ে বিপদে পড়েছি, বা এমনি কিছু। সত্য কথা বলেছি, বিশ্বাস করেনি। ওদেরকে দোষ দেয়া যায় না। মমির বাক্সে ঢুকে আছি, এটা বিশ্বাস না করারই কথা।
কি আর করবে? তোমার চেষ্টা তুমি করেছ। আর কিছু করার নেই।
হ্যাঁ। এমন অবস্থায় হাজার বছরে কেউ একবার পড়ে কিনা সন্দেহ! কাতর শোনাল মুসার গলা।