হাতের তালু দিয়ে কপাল ঘষছেন প্রফেসর। পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন উদ্ভট! মমি কথা বলল, তারপর গেল গায়েব হয়ে… থমকে গেলেন তিনি। আরে হ্যাঁ, হুপারের কথাই তো ভুলে গেছি! ও গেল কোথায়? বদমাশরা তাকে মেরে ফেলল না তো! চল, চল, খুঁজে দেখি!
চোরগুলোর সঙ্গে হাত মেলায়নি তো? অনেক রহস্য কাহিনী পড়েছে রবিন,। যেগুলোতে বাড়ির চাকর-বাকর খানসামারাই চোর-ডাকাতের সহায়ক।
না, না, কি বল! জোরে মাথা নাড়লেন প্রফেসর। দশ বছর ধরে কাজ করছে। সে আমার কাছে। চল, খুঁজে বের করতে হবে ওকে।
বাগানে বেরিয়ে এল ওরা। চোখে পড়ল তলোয়ারটা। নিচু হয়ে তুলে নিলেন। প্রফেসর। আমার সংগ্রহের জিনিস! নিশ্চয় এটা নিয়ে বাধা দিতে গিয়েছিল হুপার! বেচারাকে মেরেই ফেলল কি না কে জানে! আর পুলিশ না ডেকে পারা যাবে না!
ঘুরে দাঁড়াতে গেলেন প্রফেসর, এই সময় মৃদু একটা গোঙানি কানে এল। চত্বরের শেষ প্রান্তে একটা ঝোঁপের ভেতর থেকে এসেছে। কিশোরও শুনেছে। শব্দটা। সে-ই আগে ছুটে গেল ঝোঁপটার কাছে।
ঝোঁপের ভেতর পাওয়া গেল হুপারকে। চিত হয়ে পড়ে আছে ঘাসের ওপর। দুহাত আড়াআড়ি রাখা হয়েছে বুকে।
ধরাধরি করে চত্বরে নিয়ে আসা হল হুপারকে, শুইয়ে দেয়া হল ঘাসের ওপর-জানালা দিয়ে আলো এসে পড়েছে যেখানে।
বেহুশ! খানসামার ওপর ঝুঁকে বসেছে প্রফেসর। জ্ঞান ফিরছে নাকি! হুপার, শুনতে পাচ্ছ? হুপার?
একবার কেঁপে উঠল হুপারের চোখের পাতা, তারপরই আবার স্থির হয়ে গেল।
আরে, দেখুন! ছায়ার দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে উঠল রবিন। একটা বেড়াল। পুষি, এস, এস! হাত চেটে দিল। ওটাকে তুলে নিল রবিন!
দেখ দেখ! বেড়ালটাকে দেখছে রবিন। ওর চোখ দেখ! একটা নীল আরেকটা কমলা! জিন্দেগীতে এমন বিড়াল দেখিনি।
কি বলছ। প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন প্রফেসর। বিশ্বাস করতে পারছেন না যেন। দেখি দেখি, দাও তো আমার হাতে! বিড়বিড় করলেন, চোখের রঙে বৈসাদৃশ্য!.
বেড়ালের চোখ দুটো দেখছেন প্রফেসর। আবিসিনিয়ান বেড়াল, চোখের রঙে বৈসাদৃশ্য! আপনমনেই বিড়বিড় করছেন। কি যে ঘটছে, কিছুই বুঝতে পারছি না! পুরো ব্যাপারটাই অদ্ভুত! রা-অরকনের সঙ্গে কবর দেয়া হয়েছিল তার প্রিয় বেড়ালটাকে। ওটাও ছিল আবিসিনিয়ান, দুই চোখের দুই রঙ। শরীরের রঙ পিঙ্গল, সামনের দুই পায়ের নিচের অংশ কালো। এটারও তাই!
তাজ্জব হয়ে বেড়ালটার কুচকুচে কালো দুই পায়ের দিকে চেয়ে আছে দুই কিশোর।
হুপারের হুশ ফেরানো দরকার, বললেন প্রফেসর। হয়ত ও কিছু বলতে পারবে। খানসামার একটা হাত তুলে নিয়ে তালুতে তালু ঘষতে লাগলেন জোরে জোরে। হুপার? হুপার? শুনতে পাচ্ছ? কথা বল!
খানিকক্ষণ ঘষাঘষি করার পর চোখ মেলল হুপার। চোখ প্রফেসরের মুখের। দিকে। কিন্তু মনিবকে দেখছে বলে মনে হয় না। কেমন যেন শূন্য দৃষ্টি!
হুপার, কি হয়েছিল? জানতে চাইলেন বিজ্ঞানী। রা-অরকনকে কে চুরি করল? সেই অ্যারাবিয়ানটা?
হুপার নীরব! কথা বলার কোন চেষ্টাই নেই।
একই প্রশ্ন আবার করলেন প্রফেসর।
আনুবিস! অনেক কষ্টে যেন উচ্চারণ করল হুপার। আতঙ্কিত। আনুবিস!
আনুবিস? আনুবিস, মানে শেয়াল-দেবতা চুরি করেছে মমিটা?।
আনুবিস! আবার একটা শব্দই উচ্চারণ করল হুপার। তারপর চোখ বুজল।
খানসামার কপালে হাত রাখলেন প্রফেসর। জ্বর। খুব বেশি। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পুলিশকে ডাকছি না আপাতত। রহস্য আরও জটিল। হয়ে উঠেছে। রা-অরকনের মমি, তার প্রিয় বেড়াল, তারপর আনুবিস! নাহ, বড় বেশি গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! আস্তে মাথা নাড়লেন প্রফেসর। কিশোর, তোমাদের ট্যাক্সিটাই নিয়ে যাব। আমার গাড়ি আর বের করছি না। বেড়ালটা তোমাদের কাছেই থাক। হুপার ভাল হোক। ও কিছু বলতে পারলে, নতুনভাবে তদন্ত শুরু করবে। চল।
হুপারকে ছোট একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। হাসপাতালের মালিক প্রফেসরের বন্ধু। সঙ্গে সঙ্গে খানসামাকে ভর্তি করে নেয়া হল। কোনরকম অপ্রীতিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন না প্রফেসর। _ প্রফেসরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্যাক্সিতে চড়ল রবিন আর কিশোর। রকি বীচে ফিরে চলল। রবিনের কোলে বেড়ালটা, মৃদু ঘড়ঘড় করছে মাঝে মাঝেই। তবে নড়াচড়া করছে না, আরাম পেয়েছে।
কিশোর, এক সময় বলল রবিন। কি মনে হয় তোমার? রা-অরকন গায়েব। হবার সঙ্গে এই বেড়ালটার কোন সম্পর্ক আছে?
নিশ্চয়। কিন্তু কি সম্পর্ক, জানি না।
হতবুদ্ধি হয়ে গেছে কিশোর। তাকে এরকম হতে কখনও দেখেনি রবিন।
ওদিকে মুসা কি করল, কে জানে! বলল সে।
হেডকোয়ার্টারে গিয়ে না পেলে টেলিফোন করব ওর বাড়িতে, বলল কিশোর। ওখানে না থাকলে করব মিসেস চ্যানেলের বাড়িতে। তবে এতক্ষণ সান্তা মনিকায় থাকবে বলে মনে হয় না।
হেডকোয়ার্টারে ফিরে এল দুই গোয়েন্দা। বিকেলে যেখানে রেখে গিয়েছিল। মুসা তার সাইকেলটা, ওখানেই আছে এখনও। মেরিচাচীকে জিজ্ঞেস করে জানল। কিশোর, মুসা, ফেরেনি। সাইকেলটা রয়েছে, তার মানে বাড়িও ফিরে যায়নি। সান্তা মনিকায় টেলিফোন করল। মিসেস চ্যানেল জানালেন সন্ধ্যার আগেই তার ওখান থেকে বেরিয়ে গেছে মুসা। গেল কোথায়? রাশেদ চাচাকে জিজ্ঞেস করে জানল, সিনেমায় গেছে বোরিস আর রোভার। না, তাদের সঙ্গে মুসাকে দেখেননি তিনি। তাহলে?