মমিটা তুলে আনার এক হপ্তা পর যিনি কায়রোর বাজারে খুন হয়েছিলেন? বলল রবিন।
হ্যাঁ, হাত তুললেন প্রফেসর। না না, আবার ওই অভিশাপের কথা তুল না। ওটা নিছকই দুর্ঘটনা। দস্যুতস্করের অভাব নেই ওখানে। হয়ত টাকা-পয়সা পাওয়ার লোভেই খুন করেছে বেচারাকে।
ফিরে এলেন উইলসন। হাতে ট্রে, চারটে গ্লাসে কমলার রস, আসতে দেরি হয়েছে বোধহয় এজন্যেই। সমাজসেবা, হুহ! চাদার জন্যে এসেছিল কয়েকজন। কি আনন্দ পায় ওসব করে!..যাকগে, নিন, ট্রে-টা বাড়িয়ে ধরল প্রফেসরের দিকে।
একটা করে গ্লাস তুলে নিল সবাই।
গ্লাস হাতেই গিয়ে শেলফ থেকে মোটা একটা বই বের করে আনলেন উইলসন। বিরল একটা ডিকশনারি। বাবা জোগাড় করেছিল কোত্থেকে জানি! এখন কাজে লাগবে। বইটা টেবিলে রেখে আবার ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করে দিলেন। তিনি। তিন ঢোকে কমলার রস শেষ করে গ্লাসটা নামিয়ে রাখলেন, টেবিলে। কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। মনোযোগ দিয়ে ক্যাসেট শুনছেন, আর কি সব লিখে নিচ্ছেন। কাগজে। মাঝে মাঝে ডিকশনারি খুলে মিলিয়ে নিচ্ছেন।
শেষ হল ক্যাসেট। কলম রেখে উঠে দাঁড়ালেন উইলসন। জানালার কাছে গিয়ে বাইরের তাজা বাতাস টানলেন। ফিরে দাঁড়ালেন তারপর। প্রফেসর, অনেক প্রাচীন আরবী শব্দ রেকর্ড করেছেন। আধুনিক আরবী উচ্চারণের সঙ্গে অনেক তফাৎ। মানে উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু কিন্তু…
বলে যাও, ভরসা দিলেন প্রফেসর। আমি শুনব।
প্রফেসর…ইয়ে, মানে, দ্বিধা যাচ্ছে না উইলসনের। অর্থ যা বুঝলাম, নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! একটা মেসেজ। বলেছে: দেশ থেকে অনেক দূরে রয়েছে। রা-অরকন। ওর শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। যারা তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তাদের ওপর অভিশাপ নামুক। যতক্ষণ রা-অরকনের শান্তি না আসছে, তাদের অশান্তি হতেই থাকুক। এরপরও সতর্ক না হলে ভয়ঙ্কর মৃত্যু টেনে নিক তাদের।
মেরুদণ্ড বেয়ে ঠাণ্ডা একটা শিহরণ খেলে গেল রবিনের। এমনকি কিশোরের চেহারা থেকেও রক্ত সরে গেছে।
অস্বস্তি বোধ করছেন প্রফেসর বেনজামিন, চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জিম, ওই অভিশাপের ভয় আমি করি না, বিশ্বাস করি না, সামনের দিকে চিবুক বাড়িয়ে দিলেন তিনি। করবও না।
ঠিকই, স্বীকার করলেন উইলসন, ব্যাপারটা অবৈজ্ঞানিক।
পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক, ঘোষণা করলেন যেন বেনজামিন।
তবু ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই, বলল উইলসন। মমিটা কি কদিনের জন্যে আমার এখানে নিয়ে আসবেন? দেখি, আমার সঙ্গে কথা বলে কিনা ওটা। যদি নতুন কিছু বলে…
যা খুশি বলুক গে, কিছু এসে যায় না আমার, থ্যাঙ্ক ইউ। আমি এখনও বিশ্বাস করি না মমিটা কথা বলেছে। নিশ্চয় কোন রহস্য রয়েছে ভেতরে, রবিন আর কিশোরকে দেখিয়ে বললেন প্রফেসর, এদেরকে ডেকে এনেছি আমাকে সাহায্য করার জন্যে। রহস্যটার সমাধান আমরা করবই।
শ্রাগ করলেন উইলসন। মমি তার এখানে নিয়ে আসার জন্যে আর চাপাচাপি করলেন না।
ভাষাবিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল তিনজনে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল গ্যারেজের পাশে। ব্রিজ পেরিয়ে এসে নামল রাস্তায়। ঘুরে ঘুরে নেমে গেছে পাহাড়ী পথ। শখানেক গজ নিচেই পার্কিং লট, ওখানেই ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করছে ড্রাইভার।
গাড়িতে উঠে বসল তিনজনে। প্রফেসরের বাড়ির দিকে চলল ট্যাক্সি।
বলেছিলাম না, পেছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে বললেন প্রফেসর, কেউ যদি পারে, জিমই পারবে। কিশোর, রা-অরকনের ফিসফিসানির ব্যাপারে আর কোন নতুন থিয়োরী এসেছে মাথায়?
না, স্যার, চিন্তিত কিশোর। ব্যাপারটা সত্যিই বড় বেশি রহস্যময়।
মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত! বিড়বিড় করল রবিন।
পৌঁছে গেল গাড়ি। নেমে পড়ল তিনজনে।
সদর দরজায় দাঁড়িয়ে বেল বাজালেন প্রফেসর।
সাড়া নেই।
আবার বাজালেন। তবু সাড়া নেই। চেঁচিয়ে ডাকলেন, হুপার! হুপার! কোথায় গেলে!
নীরবতা। সাড়া দিল না হুপার।
আশ্চর্য! আপনমনেই বললেন প্রফেসর। গেল কোথায়!
চলুন, জাদুঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ি, পরামর্শ দিল কিশোর। খুঁজে দেখলেই হবে, কোথায় কি করছে।
জাদুঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠল রবিন। কফিনটা কোথায়, প্রফেসর!
কফিনের জায়গাটা শূন্য। মেঝেতে হালকা ধুলো জমেছে, তাতে কিছু আঁচড় আর ভারি জিনিস টানাহেঁচড়ার দাগ। দলা পাকানো নীল একটা রুমাল পড়ে আছে। এক জায়গায়।
রা-অরকনকে চুরি করেছে কেউ! বলে উঠলেন প্রফেসর। কিন্তু কে করল? জিজ্ঞেস করল? জিনিসটার কোন দামই নেই। মানে, কমার্শিয়াল কোন দাম নেই। বিক্রি করা যাবে না। কুটি করলেন হঠাৎ। বুঝেছি! সেই অ্যারাবিয়ান! যাকে বের। করে দিয়েছিলাম। পুলিশকে ফোন করতে হচ্ছে। কিন্তু, দ্বিধা করছেন প্রফেসর। কিন্তু ওদেরকে ডেকে আনলে সব খুলে বলতে হবে। মমি কথা বলেছে, এটাও। জানাতে হবে। আগামী কালই বেরিয়ে যাবে খবরের কাগজে খবরটা। এবং আমার ক্যারিয়ার শেষ। নাহ, পুলিশ ডাকা যাচ্ছে না। ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। চিন্তিত। অসহায় হয়ে পড়েছেন যেন। কি করি এখন? কি করি?
কোন পরামর্শ দিতে পারল না রবিন।
নীল রুমালটা তুলে নিয়েছে কিশোর। কফিনটা বয়ে নিতে অন্তত দুজন লোক দরকার। যদি, ওই জলিলই করে থাকে কাজটা, তার সঙ্গে আরও একজন রয়েছে। এই যে রুমালটা, কালিঝুলি দেখা যাচ্ছে। শ্রমিকের চিহ্ন। তাড়াহুড়োয় ফেলে গেছে হয়ত।