তোমাদের ম্যানেজার জলিল এখন কোথায়?
আছে। তাকে দেখেছ তুমি। সকালে।
দেখেছি!
হ্যাঁ, ওই মালী। যে আমাকে ধরেছিল। ইচ্ছে করেই ওর হাত কামড়ে দেয়ার সুযোগ দিয়েছিল সে আমাকে। আরবীতে চেঁচিয়ে উঠেছিল, মনে আছে? কামড়ে দিতে বলেছিল। খুব চালাক লোক। তোমাদের সবাইকে কেমন বোকা বানিয়ে। ছাড়ল।
হাঁ করে চেয়ে রইল মুসা। চমকটা হজমের চেষ্টা করছে। সেই মালীটা তাহলে। জলিল! চুরি করতে এসেছে রা-অরকনকে জামানের বাবার আদেশে! তার ভাবনা। শেষ হওয়ার আগেই পাই করে ঘুরল জামান জানালার দিকে। কান পেতে শুনছে কি যেন!
কেউ এসেছে! চাপা গলায় বলল জামান। ইঞ্জিনের শব্দ!
জানালার কাছে ছুটে গেল সে। উঁকি দিল বাইরে। পাশে গিয়ে দাঁড়াল মুসা। সে-ও তাকাল।
পুরানো একটা নীল রঙের ট্রাক ঢুকছে গেট দিয়ে। চত্বরে এসে থামল। দুজন। লোক নামল। দুজনেই মোটাসোটা, বেঁটে। সোজা এগিয়ে আসছে জাদুঘরের দিকে।
ওই দুজনই! ফিসফিস করে বলল জামান। ওরাই চুরি করেছে রা অরনকে! কয়েক মিনিট আগে এসেছিল আরেকবার। কম্বলে জড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কি তুলল ট্রাকে, এখন বুঝতে পারছি, মমিটাকেই নিয়েছে। ওরা চলে গেল। বাড়িটা খালি মনে হল। ঢুকে পড়লাম জাদুঘরে। ঢাকনা তুলে দেখি কফিনে নেই রা অরকন।
এদিকেই আসছে ব্যাটারা! বিড়বিড় করল মুসা। চেহারা-সুরত বিশেষ সুবিধার ঠেকছে না। আবার কি চায়?
লুকাতে হবে! জলদি! নিশ্চয় আরও কিছু চুরি করতে এসেছে!
কোথায় লুকাব? সারা ঘরে চোখ বোলাল মুসা। কোন জায়গা তো দেখছি না! চল, বাইরে গিয়ে ঝোঁপের ভেতরে…
তাহলে কি চুরি করতে এসেছে দেখব না। ওদের কথাবার্তাও শুনতে পাব না। এখানেই কোথাও লুকাতে হবে, কফিনটার দিকে চেয়ে আছে জামান। জলদি! ওটার ভেতর লুকাব। রা-অরকন নেই, আমাদের জায়গা হয়ে যাবে। জলদি এস।
ঠিক, ঠিক বলেছ, সায় দিল মুসা।
ছুটে গিয়ে কফিনে ঢুকে পড়ল জামান। চাপা গলায় ডাকল, আহ, তাড়াতাড়িন এস!
কফিনে ঢুকল মুসা। দুজনে ধরে ঢাকনাটা নামিয়ে দিল জায়গামত। পকেট থেকে একটা পেন্সিল বের করে ডালার ফাঁকে গুঁজে দিয়েছে মুসা। সামান্য ফাঁক হয়ে আছে, বাতাস চলাচল করতে পারবে। ভেতরে থেকে শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে না।
পাশাপাশি শুয়ে পড়েছে দুজনে কফিনের ভেতর। ঠিক এই সময় দরজা। খোলার শব্দ হল। মেঝেতে ভারি পায়ের শব্দ।
দড়িটা খোল, ওয়েব, শোনা গেল একটা কণ্ঠ।
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা। খুলেছি, শোনা গেল আরেকটা কণ্ঠ। মেথু, লোকটাকে মোটেই পছন্দ হয়নি আমার। আগে বলল না কেন ব্যাটা, কফিনটা সহ চায়? একবারেই কাজ সারতে পারতাম। আবার এখানে পাঠাল যখন দেব ফিস ডবল করে।
আমিও তাই ভাবছি, বলল মেথু। ডাবল চাইব। নইলে…ঠিক আছে, এস বেঁধে ফেলি।
মুহূর্ত পরেই টের পেল মুসা আর জামান, নড়ছে কফিন। একটা প্রান্ত উঠে যাচ্ছে ওপরে। দড়ি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে নিশ্চয়। বুঝতে পারছে ওরা, কফিনের সঙ্গে ডালাটা শক্ত করে পেঁচিয়ে বাঁধা হচ্ছে। ভাগ্যিস পেন্সিলটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল! নইলে দম বন্ধ হয়েই মরতে হত!
কফিনটাও চুরি করবে ব্যাটারা। মুসার কানে ফিসফিস করল জামান। গাঢ় অন্ধকার ভেতরে। এখন কি করব আমরা?
চুপ করে শুয়ে থাকতে হবে, ফিসফিস করে জবাব দিল মুসা। এছাড়া আর কিছু করার নেই। কে বা কারা ওদেরকে পাঠিয়েছে, জানার সুযোগ পেয়েছি। কোথায় নিয়ে যায় ওরা কফিনটা জানতে পারব। নিয়ে যাক আগে। তারপর সুযোগ বুঝে বেরোনর চেষ্টা করব। হয়ত জায়গায় পৌঁছে দড়ির বাধন খুলে ফেলবে। কি, ভয় পাচ্ছ?
জামান বংশের জামান ভয় পায় না!
আমিও না, বলল মুসা। তবে অস্বস্তি বোধ করছি।
দুদিক থেকে তোলা হল কফিনটা, টের পেল ওরা।
আরিব্বাপরে! কি সাংঘাতিক ভারি! শোনা গেল ওয়েবের কণ্ঠ।
সীসা দিয়ে বানিয়েছে নাকি!…ধর, শক্ত করে ধর! ফেলে দিয়ে ভেঙ না। তাহলে একটা কানাকড়িও আদায় করতে পারব না।–
কফিনটা বয়ে নেয়া হচ্ছে, বুঝতে পারল মুসা আর জামান। ট্রাকের পেছনে তোলা হল, শব্দ শুনেই অনুমান করল।
ব্যাটা এসব জিনিস দিয়ে কি করবে? বলল ওয়েব।
কি করবে কে জানে! কতরকম পাগল আছে দুনিয়ায়! মরা লাশও কাজে লাগে। ওদের! হুহ! জাহান্নামে যাক ব্যাটারা। আমাদের টাকা পেলেই হল। এস, ওঠ। স্টার্ট দাও।
দড়াম করে বন্ধ হল কেবিনের দরজা। গর্জে উঠল ইঞ্জিন। চলতে শুরু করল ট্রাক।
অবাক হয়ে ভাবছে মুসা আর জামান, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কফিনটা!
.
০৯.
বিশতম বার ক্যাসেটটা শোনা শেষ করলেন প্রফেসর উইলসন। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন প্রফেসর বেনজামিন, রবিন আর কিশোর।
কিছু কিছু বুঝতে পেরেছি, অবশেষে বললেন উইলসন। কয়েকটা শব্দ বোঝা যাচ্ছে। ক্যাসেট প্লেয়ারের সুইচ অফ করে দিলেন। সিগারেটের বাক্স বের করে বাড়িয়ে ধরলেন প্রফেসর বেনজামিনের দিকে। রেকর্ড করলেন কি করে?
একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলেন প্রফেসর। তার ওপর কি করে আনুবিস পড়তে যাচ্ছিল, একেবারে সেখান থেকে। মাঝপথে বাধা পড়ল। বাড়ির কোথাও একটা দরজার ঘণ্টা বাজল।
গ্যারেজের কাছে এসেছে কেউ, বললেন উইলসন। আসছি। আপনারা বসুন।
উইলসন বেরিয়ে যেতেই ছেলেদের দিকে তাকালেন প্রফেসর। বলেছিলাম না, কেউ যদি ওই ভাষা বোঝে তো জিমই বুঝবে। বাপের কাছে শিক্ষা পেয়েছে তো। তার বাপও প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় বিশেষজ্ঞ ছিল।