খুব সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে কিশোরকে। কিন্তু চোখ বড় হয়ে গেছে মুসার। রবিন তার দিকে চাইতেই ঢোক গিলল।
বলে যাও, অনুরোধ করল কিশোর। যা আশা করেছিলাম, বাড়িটা তার চেয়ে অনেক বেশি ভূতুড়ে।
এরপর আরও কয়েকজন ক্যাসলে রাত কাটানোর চেষ্টা করেছে জানোল রবিন। একজন উঠতি অভিনেত্রী পাবলিসিটির জন্যে রাত কাটাতে গেল ওখানে। সে বেরিয়ে এল মাঝরাত হবার অনেক আগেই। শীত ছিল না, তবু দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছিল তার। কোটর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল চোখ। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কে। তখন কোন কথাই বেরোয়নি মুখ দিয়ে। পরে জানিয়েছে, একটা নীল ভূতের দেখা পেয়েছে। আর কেমন একধরনের কুয়াশা নাকি ঢেকে ফেলছিল তাকে। অভিনেত্রী এর নাম দিয়েছে ফগ। অব ফিয়ার।
নীল ভূত, আবার কুয়াশাতঙ্কও! ইয়াল্লা! শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে ভেজাবার চেষ্টা করল মুসা। আর কিছু দেখা গেছে? মাথা ছাড়া ঘোড়সওয়ার, শেকলে-বাঁধা-কঙ্কাল…
রবিনকে কথা শেষ করতে দাও, বাধা দিয়ে বলল কিশোর।
আমার আর কিছু শোনার দরকার নেই, মুসার মুখ ফ্যাকাসে। যা শুনেছি, এতেই বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে গেছে।
মুসার কথায় কান দিল না কিশোর। রবিনকে জিজ্ঞেস করল, আর কিছু বলবে?
হ্যাঁ, আবার বলতে লাগল। রবিন। একের পর এক ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটেই চলল ফিলবি ক্যাসলে। পুবের কোন এক শহর থেকে নতুন এল একটা পরিবার। পাঁচজন সদস্য। থাকার জায়গা খুঁজছে। ব্যাংক ধরল। ওদেরকে। পুরো একবছর ক্যাসলে থাকার অনুমতি দিল। এক পয়সা ভাড়া চায় না। শুধু বাড়িটার বদনাম ঘোচাতে চায় ব্যাংক। খুশি মনেই ক্যাসলে গিয়ে উঠল পরিবারটা। রাত দুপুরে বেরিয়ে এল হুড়োহুড়ি করে। ক্যাসল তো ক্যাসল, সে-রাতেই শহর ছেড়ে পালাল ওরা। রকি বীচে। আর কোনদিন দেখা যায়নি ওদের।
গোলমালটা শুরু হয় ঠিক কোন সময় থেকে? জানতে চাইল কিশোর।
রাতের শুরুতে সব চুপচাপ। মাঝরাতের কয়েক ঘন্টা আগে থেকে ঘটতে শুরু করে ঘটনা। দূর থেকে ভেসে আসে গোঙানির শব্দ। হঠাৎ করেই হয়ত সিঁড়িতে একটা আবছামূর্তি দেখা যায়। কখনও শোনা যায় দীর্ঘশ্বাস। অনেক সময় ক্যাসলের মেঝের তলা থেকে উঠে আসে চাপা চিৎকার। মিউজিক রুমে একটা অরগান পাইপ আছে, নষ্ট। মাঝরাতে হঠাৎ করে নাকি বেজে ওঠে। ওটা, শুনেছে অনেকে। বাদককেও দেখেছে। কেউ কেউ। অর্গানের সামনে বসে থাকে, আবছা! একটা মূর্তি, শরীর থেকে নীল আলো বিচ্ছুরিত হয়! এর নামও দিয়ে ফেলেছে লোকেঃ নীল অশরীরী।
নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হয়েছে এসব?
হয়েছে, নোট দেখে বলল রবিন। দুজন প্রফেসর গিয়েছিলেন। তাঁরা কিছুই দেখতে পাননি। শোনেনওনি কিছু। তবে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটেছে। কেমন অস্বস্তি বোধ করেছেন। সারাক্ষণ। দুজনেই উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। বেরিয়ে এসে জানিয়েছেনঃ অদ্ভুত কিছু একটা রয়েছে ক্যাসলে। কিছুই করতে পারল না ব্যাংক। না পারল বাড়িটা বেচিতে, না পারল ভাড়া দিতে। মালপত্রগুলোও বের করে আনা গেল না। ক্যাসলে যাবার পথ আটকে দিল ব্যাংক। ব্যস। তারপর থেকে ওভাবেই পড়ে আছে ক্যাসলটা। কিশোরের দিকে চেয়ে বলল রবিন, বিশ বছরে একটা পুরো রাত কেউ কাটাতে পারেনি ওরা ভেতর। শেষে কয়েকজন ভবঘুরে মাতাল বাড়িটাতে আস্তানা গাড়ার চেষ্টা করেছিল, তাতেও বাধা দেয়নি ব্যাংক। কিন্তু প্ৰথম রাতেই পালাল মাস্তানেরা। ভূতে তাড়া করে দুর্গ থেকে বের করে আনল ওদের। সারা শহরে ছড়িয়ে দিল ওরা সে-কাহিনী। ক্যাসলের ত্ৰিসীমানায় ঘেষা বন্ধ করে দিল লোকে। ফিলবি ক্যাসলের নাম হয়ে গেল টেরর ক্যাসল। এসব অনেক বছর আগের ঘটনা। কিন্তু আজও লোকে মাড়ায় না ওদিকটা।
ঠিকই করে, বলে উঠল মুসা। আমিও যাব না, লাখ টাকা দিলেও না।
আজ রাতেই আমরা যাব ওখানে, ঘোষণা করল কিশোর। সঙ্গে ক্যামেরা আর টেপ-রেকর্ডার নিয়ে যাব। সত্যিই ভূত আছে কিনা ক্যাসলে, দেখতে চাই। পরে আট ঘাট বেঁধে তদন্তে নামব। দুর্গটার ভীষণ বদনাম আছে। জায়গাটাও খারাপ। ভূতুড়ে ছবির শুটিঙের জন্যে এরচে ভাল জায়গা আর পাবেন না মিস্টার ক্রিস্টোফার। হলপি করে। বলতে পারি।
৪
টেরর ক্যাসলের পুরো ইতিহাস লিখে এনেছে। রবিন।
সারাটা বিকেল খুঁটিয়ে সব পড়ল কিশোর। তারপর উঠল, ক্যাসলে যাবার জন্যে তৈরি হল।
সারাক্ষণই যাব না যাব না করল মুসা। কিন্তু শেষে দেখা গেল, সে-ও তৈরি হয়ে এসেছে। পুরানো এক সেট কাপড় পরেছে। সঙ্গে নিয়েছে তার পুরানো টেপরেকর্ডারটা।
পকেটে নোটবুক নিল রবিন। আর নিল চোখ-করে-শিশতোলা পেন্সিল। ফ্ল্যাশগানসহ ক্যামেরা কাঁধে বুলিয়ে নিল কিশোর।
খাওয়া-দাওয়া সেরে এসেছে তিনজনেই। মুসা আর রবিন বাড়িতে বলে এসেছে, রোলস-রয়েসে চড়ে হাওয়া খেতে যাচ্ছে। দুজনের বাবা-মা কেউই আপত্তি করেননি। কিশোরও বেড়াতে যাবার অনুমতি নিয়েছে চাচির কাছ থেকে।
আধার নামল। স্যালভিজ ইয়ার্ডের গেটের বাইরে এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা। আগেই টেলিফোন করে দেয়া হয়েছে রেন্ট-আ-রাইড কোম্পানিতে। রোলস রয়েসের বিশাল জ্বলন্ত দুই চোখ দেখা গেল মোড়ের মাথায়। দেখতে দেখতে কাছে এসে দাঁড়াল গাড়ি।
গাড়িতে উঠে বসল তিন কিশোর।
কোথায় যাবে জানতে চাইল হ্যানসন।