না না, এত বিচ্ছিরি ছিলাম না। আমি কিছু হয়নি তোমার!
তাহলে আরও কিছুদিন প্র্যাকটিস করতে হবে, আপনমনেই বলল কিশোর। টেলিভিশন থেকে খুব চাপাচাপি করছে…
টেলিভিশন সতর্ক হয়ে উঠেছেন পরিচালক। কিসের চাপাচাপি?
মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে কমিক দেখাই আমি। আগামী হস্তায় বাচ্চাদের একটা অনুষ্ঠান আছে। ভাবছি, এবারে আপনার চেহারা, কথা বলার ধরন নকল করে…
খবরদার! গর্জে উঠলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। আমি নিষেধ করছি।
কেন, স্যার? নিরীহ গলা কিশোরের। দোষ কি এতে? বাচ্চারা যদি একটু মজা পায়…
না-আ! কি যেন একটু ভাবলেন পরিচালক। ঠিক আছে, তোমাদের প্রস্তাবে আমি রাজি। তবে কথা দিতে হবে, কক্ষণো, কোথাও আমার চেহারা নকল করে দেখাতে পারবে না।
থ্যাঙ্ক ইউ, মিস্টার ক্রিস্টোফার, হাসিমুখে বলল কিশোর।
তাহলে ভূতুড়ে বাড়ি খোঁজার অনুমতি দিচ্ছেন আমাদেরকে?
হ্যাঁ হ্যাঁ, দিচ্ছি। তেমন বাড়ি পেলেও ওটা ব্যবহার করব, এমন কথা দিতে পারছি না। তবে তোমাদের নাম প্রচারের ব্যবস্থা করব। এখন বেরোও, মেজাজ আরও খিচড়ে যাবার আগেই। হয়ত আবার মত পাল্টে বসতে পারি। ভয়ানক চালাক ছেলে তুমি, কিশোর পাশা নিজের কাজটা ঠিক উদ্ধার করে নিয়ে গেলো! ভীষণ চালাক!
আর কিছু শোনার দরকার মনে করল না কিশোর আর মুসা। প্রায় ছুটে বেরিয়ে এল ঘর থেকে।
৩
পড়ন্ত বিকেল। হ্যান্ডেল ধরে সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে এসে সবুজ ফটক এক-এর সামনে দাঁড়াল রবিন। গাল-মুখ লাল, হাঁপাচ্ছে। হতচ্ছাড়া টিউব ফুটো হবার আর সময় পেল না! বিড়বিড় করছে সে আপনমনেই।
ইয়ার্ডের ভেতরে এসে ঢুকল রবিন। মেরিচাচীর গলা শোনা যাচ্ছে অফিসের ওদিক থেকে। রাশেদ চাচার দুই সহকারী বোরিস আর রোভারকে কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন। ওয়ার্কশপ খালি। কিশোর কিংবা মুসা, কেউই নেই।
এটাই আশা করেছিল রবিন। সাইকেলটা রেখে ছোট ছাপার মেশিনটার ওপােশ ঘুরে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল। একটা ওয়ার্কবেঞ্চের গায়ে হেলান দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে একটা লোহার পাত।
বিশাল এক গ্যালভানাইজটা পাইপের মুখ ঢেকে রাখা হয়েছে পাতটা ফেলে। বসে পড়ে ওটা একটু সরাল রবিন। ফাঁক গলে এসে ঢুকল পাইপের মুখের ভেতরে। পাতটা আবার আগের জায়গায় টেনে বসাল। দ্রুত ক্রল করে এগিয়ে চলল পাইপের ভেতর দিয়ে। এটাও একটা গুপ্ত পথ, নাম রাখা হয়েছে দুই সুড়ঙ্গ।
পাইপের অন্য মাথায় চলে এল রবিন। একটা কাঠের বোর্ড কায়দা করে বসানো আছে। ও-মাথায়। ঠেলা দিতেই সরে গেল বোর্ড।
হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল সে।
হেডকোয়ার্টার মানে তিরিশ ফুট লম্বা একটা ক্যারাভান, মোবাইল হোম। গত বছর কিনেছিলেন রাশেদ চাচা। অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল ক্যারাভানটা। ভেঙে চুরে বেঁকে দুমড়ে একেবারে শেষ।
ইয়ার্ডের এক প্রান্তে ফেলে রাখা হয়েছে। চাচার কাছ থেকে ওটা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নিয়েছে কিশোর। বোরিস আর রোভারের সাহায্যে মোটামুটি ঠিকঠাক করে নিজের অফিস বানিয়েছে।
পুরো বছর ধরেই মালপত্র এনে ক্যারাভান ট্রেলারটার চারপাশে ফেলেছে কিশোর। একাজেও তাকে সাহায্য করেছে বোরিস আর রোভার, মুসা আর রবিন তো আছেই। ইস্পাতের বার, ভাঙাচোরা ফায়ার-এস্কেপ, কাঠ আর দেখে-চেনার-জো-নেই এমন সব জিনিসপত্রের আড়ালে এখন একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে ট্রেলারটা। ওটার কথা ভুলেই গেছেন রাশেদ চাচা। তিনটে কিশোর ছাড়া আর কেউ জানে না, ওই ট্রেলারের ভেতর কত কিছু গড়ে উঠেছে। তিন গোয়েন্দার অফিস ওটা। ল্যাবরেটরি আছে, ছবি প্রসেসিং-এর ডার্ক-রুম আছে। হেডকোয়ার্টার থেকে বেরোনোর কয়েকটা পথও বানিয়ে নিয়েছে ওরা।
একটা ডেস্কের ওপাশে সুইভেল চেয়ারে বসে আছে কিশোর পাশা। ডেস্কের এক কোণ পোড়া। অন্যপাশে বসে আছে মুসা।
দেরি করে ফেলছ, গম্ভী গলায় বলল কিশোর। যেন ব্যাপারটা জানে না রবিন।
চাকা পাংচার, এখনও হাঁপাচ্ছে রবিন। লাইব্রেরি থেকে রওনা দেবার পর পরই পেরেক ঢুকেছে।
যে কাজ দিয়েছিলাম কিছু করেছ?
নিশ্চয়। অনেক কিছু জেনেছি টেরর ক্যাসলের ব্যাপারে।
টেরর ক্যাসল? আপনমনেই বিড় বিড় করল মুসা। নামটাই অপছন্দ লাগছে আমার, কেমন যেন গা ছমছম করে!
নাম শুনেই ছমছম, আসল কথা তো শোনইনি। এখনও, বলল রবিন। পাঁচজন লোকের একটা পরিবার রাত কাটাতে গিয়েছিল ওখানে। তারপর…
একেবারে গোড়া থেকে শুরু কর, বলল কিশোর। গালগল্প বাদ দিয়ে সত্যি ঘটনাগুলো শুধু।
ঠিক আছে। সঙ্গে করে নিয়ে আসা বড় একটা বাদামী খাম খুলছে। রবিন। কিন্তু তার আগে শুটিকে টেরির কথাটা জানানো দরকার। সেই সকাল থেকেই আমার পেছনে লেগেছিল ব্যাটা। আমি কি করছি না করছি, জানার চেষ্টা করেছে।
ইয়াল্লা! ব্যাটাকে জানতে দাওনি তো কিছু। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল। মুসা। পেছন থেকে কি করে যে সরাই খালি নাক গলাতে আসে। আমাদের কাজে!
না, ওকে কিছু বলিনি। আমি, বলল রবিন। কিন্তু আঠার মত সঙ্গে লেগে ছিল ব্যাটা। লাইব্রেরিতে ঢুকতে যাচ্ছি, আমাকে থামাল শুঁটকো। কিভাবে রোলস-রয়েসটা পেল কিশোর জানতে চাইল। জিজ্ঞেস করল, তিরিশ দিন কোথায় যাচ্ছি আমরা।
তারপর? জানতে চাইল কিশোর।
লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকল ব্যাটা, নাক কোঁচকাল রবিন। আমার দিক থেকে চোখ সরাল না মুহূর্তের জন্যেও। দেখল, পুরানাে পত্রিকা আর ম্যাগাজিন ঘাঁটাঘাঁটি করছি আমি। কি পড়ছি, দেখতে দিইনি। ওকে। কিন্তু…