কি, মিস ওয়াইল্ডার?
দ্রুত তিন জোড়া চোখ ঘুরে গেল দরজার দিকে। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার স্বয়ং। শরীরের তুলনায় মাথা বড়। ঝাঁকড়া চুল। এত বেশি ঝুলে পড়েছে নিচের ঠোঁট, মাড়ি দেখা যায়। ভীষণ কুৎসিৎ চেহারা।
কি হয়েছে? কোন গোলমাল? আবার জানতে চাইলেন। মিস্টার ক্রিস্টোফার। সেই কখন থেকে রিঙ করছি আমি।
গোলমাল কিনা। আপনিই ঠিক করুন, মিস্টার ক্রিস্টোফার, ফস করে বলে বসল কেরি। এই ছেলেটা কিছু দেখাতে চায়। আপনাকে। আপনি মুগ্ধ হবেন।
সরি, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কারও সঙ্গেই দেখা করতে পারব না। আজ। হাতে কাজ অনেক। ওকে যেতে বল।
আমি শিওর, মিস্টার ক্রিস্টোফার, আপনি দেখতে চাইবেন! কেমন এক গলায় কথা বলে উঠল। কেরি।
স্থির চোখে কেরির দিকে তাকালেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তারপর ফিরলেন দুই কিশোরের দিকে। কাঁধ ঝাঁকালেন। ঠিক আছে। এস।
বিশাল এক টেবিলের ওপাশে সুইভেল চেয়ারে গিয়ে বসলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। ইচ্ছে করলে টেবিল-টেনিস খেলা যাবে। টেবিলটাতে, এত বড়। তাঁর দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল দুই গোয়েন্দা। পেছনে দরজাটা ওপাশ থেকে বন্ধ করে দিল কেরি।
তোমার, ছেলেরা, বললেন, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার, পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি তোমাদের, কি দেখাতে চাও?
এটা স্যার, অদ্ভূত ভঙ্গিতে পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল কিশোর। ভঙ্গিটা লক্ষ্য করলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। একেবারে তাঁর নিজের ভঙ্গি। হাত বাড়িয়ে তুলে নিলেন। কার্ডটা।
হুমম! তোমরা তাহলে গোয়েন্দা। প্ৰশ্নবোধক চিহ্নগুলো কেন? নিজেদের ক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ প্ৰকাশ?
না, স্যার, জবাব দিল কিশোর। ওগুলো আমাদের ট্রেডমার্ক। যে-কোন ধরনের রহস্য ভেদ করতে রাজি আমরা। তাছাড়া ওই চিহ্ন কার্ডে বসানোর কারণ জিজ্ঞেস করবেই লোকে, আমাদেরকে মনে রাখবে।
আচ্ছা! ছোট্ট একটা কাশি দিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। নাম প্রচারের ব্যাপারে খুব আগ্রহী মনে হচ্ছে?
নিশ্চয়, স্যার। লোকে আমাদের নামই যদি না জানল, ব্যবসা টেকাব কি করে?
ভাল যুক্তি, স্বীকার করলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কিন্তু ব্যবসা তো শুরুই করনি এখনও।
সেজন্যেই তো এসেছি, স্যার। আপনাকে একটা ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজে দিতে চাই আমরা।
ভূতুড়ে বাড়ি? ভুরুজোড়া সামান্য উঠে গেল মিস্টার ক্রিস্টোফারের। আমি ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজছি, ভাবনাটা কেন এল মাথায়?
শুনেছি, আপনার পরের ছবির জন্যে একটা ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজছেন, বলল কিশোর। আপনার খোঁজায় সাহায্য করতে আগ্রহী তিন গোয়েন্দা।
তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল মিস্টার ক্রিস্টোফারের মুখে। দুটো বাড়ির খোঁজ ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি। আমি, বললেন তিনি। একটা ম্যাসাচুসেটসের সালেমে, আরেকটা দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনে। দুটো জায়গাতেই নাকি ভূতের উপদ্রব আছে। আগামীকাল আমার দুজন লোক যাবে জায়গাগুলো দেখতে। আমি শিওর, দুটোর একটা জায়গা আমার পছন্দ হবেই।
কিন্তু আমরা যদি এখানে, এই ক্যালিফোর্নিয়াতেই একটা বাড়ি খুঁজে দিতে পারি, অনেক সহজ হয়ে যাবে আপনার কাজ।
আমি দুঃখিত, খোকা। তা হয় না। আর এখন।
টাকা পয়সা কিছু চাই না। আমরা, স্যার, বলল কিশোর। শুধু প্রচার চাই। এজন্যে কাউকে লিখতে হবে আমাদের কথা। যেমন লেখা হয়েছে শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারোর কাহিনী। আমার ধারণা, ওদের কথা লেখা হয়েছে বলেই আজ ওরা এত নামী গোয়েন্দা। না না, স্যার, আপনাকে লিখতেও হবে না। লিখে দেবেন। আমাদের এক সহকারীর বাবা, মিস্টার রোজার মিলফোর্ড। খবরের কাগজে চাকরি করেন তিনি।
আচ্ছা, এবার তাহলে, ঘড়ি দেখলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
মিস্টার ক্রিস্টোফার, ভেবেছিলাম। আমাদের প্রথম কেসটায় একটু সাহায্য করবেন…
সম্ভব না, যাবার পথে দয়া করে কেরিকে একবার আসতে বলে যেও।
ঠিক আছে, স্যার, হতাশ মনে হল কিশোরকে।
ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল দুই গোয়েন্দা। দরজার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, পেছন থেকে ডাক শোনা গেল মিস্টার ক্রিস্টোফারের, একটু দাঁড়াও।
বলুন, স্যার, ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। মুসাও ঘুরল।
চোখ কুঁচকে তাদের দিকে চেয়ে আছেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কেন যেন মনে হচ্ছে, যা দেখাতে এসেছ তা দেখাওনি। কি দেখাবে বলে বলেছিল মিস ওয়াইল্ডার? নিশ্চয় তোমাদের ভিজিটিং কার্ড নয়?
ঠিকই বলেছেন, স্যার, স্বীকার করল কিশোর। আমি লোকের গলার স্বর, কথা বলার ভঙ্গি, এমনকি অনেকের চেহারাও নকল করতে পারি। মিস ওয়াইন্ডারকে আপনার ছেলেবেলার চেহারা নকল করে দেখিয়েছিলাম।
আমার ছেলেবেলার চেহারা ভারি হয়ে গেল বিখ্যাত পরিচালকের স্বর। চেহারায় মেঘা জমতে শুরু করছে। কি বলতে চাইছ?
ঠিক আছে, দেখাচ্ছি, স্যার।
চোখের পলকে বদলে গেল কিশোরের চেহারা। আমার ধারণা, মিস্টার ক্রিস্টোফার, গলার স্বরও পাল্টে গেছে। হয়ত কোন ছবিতে আপনার ছেলেবেলার চেহারা দেখতে চাইবেন। মানে, ছেলেবেলার কোন ঘটনা কাউকে দিয়ে অভিনয় করাতে চাইবেন…
হেসে ফেললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। পরীক্ষণেই গম্ভীর হয়ে গেলেন আবার। বিচ্ছিরি থামাও ওসব!
আপন চেহারায় ফিরে এল কিশোর। পছন্দ হল না, স্যার? আপনার ছেলেবেলার চেহারা নিশ্চয় এমন ছিল?