ওটা আরেকটা ছবি। একই রকম দেখতে। তোমরা ফিরে আসবে সন্দেহ করে সরিয়ে ফেলেছিলাম আগের ছবিটা।
কিন্তু নীল ভূত? ওটা কি দিয়ে বানালেন? একের পর এক প্রশ্ন করে গেল মুসা। অর্গানের কাঁপা ভূতুড়ে বাজনা? আয়নার ভেতরে মেয়ে ভূত? ইকো হলের ঠাণ্ডা বায়ুপ্রবাহ?
বলতে খারাপই লাগছে, বলল অভিনেতা। রহস্যগুলো আর রহস্য থাকবে না। ঠিক আছে, তবু বলছি…
কয়েকটা রহস্য এমনিতেও আর রহস্য নেই, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। আমি জানি, কি করে কি করেছেন। বরফের ভেতর দিয়ে কোন ধরনের গ্যাস প্রবাহিত করেছেন। দেয়ালের গোপন কোন ছিদ্র দিয়ে ওই ঠাণ্ড গ্যাস ঢুকিয়ে দিয়েছেন ইকো হলো। হয়ে গেল। ঠাণ্ডা বায়ুপ্রবাহ। বিচিত্র বাজনা, সেই সঙ্গে চেচামেচি, গোলমাল সৃষ্টি করা খুব সহজ। রেকর্ডকে উল্টো ঘোরানোর ব্যবস্থা করেছেন। এই উল্টো বাজনা অ্যামপ্লিফাই করে ছড়িয়ে দিয়েছেন স্পীকারের সাহায্যে। নীল ভূত বানানােও সহজ। নীল লুমিনাস পেইন্ট মাখিয়ে নিয়েছেন পাতলা অয়েল পেপারে। সুতোয় কাগজের এক মাথা বেঁধে বুলিয়ে দিয়েছেন ওপর থেকে। সুতো ধরে টেনে নাচিয়েছেন ওটাকে। তারপর, কুয়াশাতঙ্ক। কোন ধরনের কেমিক্যাল পুড়িয়ে সৃষ্টি করেছেন এমন ধোঁয়া। এমন কোন ধরনের কেমিক্যাল, যেটার ধোঁয়ায় গন্ধ নেই। দেয়ালের গোপন ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে চালান করে দিয়েছেন। প্যাসেজে। কি, ঠিক বলছি তো?
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ মাথা ঝোঁকাল ফিলবি। না, মাথায় ঘিলু আছে তোমার, স্বীকার করতেই হবে!
আয়নার ভূত তো আপনি নিজেই, আবার বলল কিশোর। মেয়ে মানুষের পোশাক পরে, প্যাসেজ দিয়ে গেয়ে পাল্লা খুলে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তারপর সুযোগ বুঝে চট করে আবার ঢুকে গেছেন প্যাসেজে। বন্ধ করে দিয়েছেন পাল্লা। খুব সহজ। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। কোন কৌশলে লোকের স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলেছেন আপনি। অস্বস্তি, ভয়, শেষে আতঙ্ক এসে চেপে ধরে। কি করে করলেন?
আরও ভাব আরও ভাব, মাথা খাটিয়ে বের করার চেষ্টা কর। শেষ পর্যন্ত না পারলে, বলে দেব। এখন এস, কিছু জিনিস দেখাচ্ছি তোমাদের।
সবাইকে পাশের ঘরে নিয়ে এল ফিলবি। বিরাট এক ড্রেসিং রুম। নানাধরনের। উইগ, পোশাক আর মেকআপের সরঞ্জাম থরে থরে সাজানো রয়েছে কয়েকটা আলমারিতে। এক পাশে বিরাট এক র্যাকে অনেকগুলো গোল ক্যান ।
ওগুলোতে ফিল্ম, ক্যানগুলো দেখিয়ে বলল ফিলবি। আমার অভিনয় করা সমস্ত ছবির একটা করে ফিল্ম। এক সময় কোটি কোটি লোককে অনেক আনন্দ দিয়েছি। অথচ আজ আমাকে ভূত সেজে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে! কেমন বিষন্ন গলা অভিনেতার, সবারই মন ছুয়ে গেল। তা-ও রেহাই পেলাম না। তােমরা এলে। ছদ্মবেশ খুলে ফেললে আমার। কাল সকাল থেকেই পিলপিল করে লোক আসতে থাকবে। হাসােহাসি করবে, টিটকিরি দেবে।
কেউ কোন কথা বলল না।
তবে, গলার স্বর নিয়ে আর কেউ হাসতে পারবে না। এখন, আবার বলল ফিলবি। ওষুধ খেয়ে আর প্র্যাকটিস করে করে সারিয়ে ফেলেছি আমি।
নিচের ঠোঁটে সমানে চিমটি কেটে চলেছে কিশোর।
কিন্তু এত কষ্ট করে কি পেলাম! অভিনেতার গলায় ক্ষোভ। আবার আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে লোকে। ক্যাসলটা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে ব্যাংক। এবার হয়ত সত্যিই আত্মহত্যা করতে হবে। আমাকে!
মিস্টার ফিলবি, হঠাৎ বলল কিশোর, ওই ক্যানগুলোতে আপনার অভিনীত সমস্ত ছবি আছে, না?
হ্যাঁ। কোথাও ভূত সেজেছি আমি, কোথাও দানব, কোথাও জলদস্যু…
নির্বাক ছবির যুগ তো অনেক আগেই শেষ। তারমানে অনেকদিন থেকেই পড়ে আছে। আর কোন হলে দেখানো হচ্ছে না এখন।
না, হচ্ছে না। সবাক ছবি ফেলে নির্বাক ছবি কেন দেখবে লোকে? কিন্তু এসব কথা কেন?
মনে হচ্ছে, আপনার ক্যাসল আপনারই থাকবে। একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়। আগামী কাল জনাব আপনাকে। আর হ্যাঁ, এখান থেকে কোথাও যাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। আপনিই টেরর ক্যাসলের ভূত, কথাটা এখনই ফাঁস করছি না আমরা। অনেক রাত হল। আচ্ছা চলি। কাল দেখা হবে।
সুড়ঙ্গ পথেই আবার ক্যাসলে ফিরে এল ওরা—তিন গোয়েন্দা আর হ্যানসন। বেরিয়ে এল ক্যাসল থেকে।
আজ আর ভূতের ভয় নেই। ধীরেসুস্থে নেমে এল পথে। রোলস রয়েসে উঠল।
১৯
পরদিন সকালে আবার হলিউডে রওনা হল দুই গোয়েন্দা, কিশোর আর মুসা। রবিন আসতে পারেনি। কাজের চাপ বেশি। লাইব্রেরিতে চলে গেছে।
প্যাসিফিক স্টুডিওর ফটকে এসে থামল রোলস রয়েস। আজ আর কোন অসুবিধে হল না। কেরি ওয়াইল্ডার জানে ওরা আসছে, জানিয়ে রেখেছে। গার্ডকে। খুলে গেল দরজা। ভেতরে ঢুকে পড়ল। রোলস রয়েস।
কয়েক মিনিট পরেই মিস্টার ক্রিস্টোফারের অফিসে এসে ঢুকল দুই গোয়েন্দা।
এসে গেছ। বস, ভারি গলা পরিচালকের, তারপর? কি খবর?
ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজে পেয়েছি, স্যার, বসতে বসতে বলল কিশোর।
তাই নাকি? ভুরু কোঁচকালেন পরিচালক। কি ধরনের ভূত?
ধরন ঠিক করা কঠিন, বলল কিশোর। আসলে ভূতুড়ে করে। রেখেছিলেন একজন মানুষ। মরা নয়, জ্যান্ত।
তাই মজার ব্যাপার! চেয়ারে হেলান দিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। খুলে বল তো, সব।
চুপচাপ সব শুনলেন পরিচালক। তারপর বললেন, জন ফিলবি বেঁচে আছে জেনে ভালই লাগছে। এককালের মস্ত অভিনেতা, কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা ব্যাপার তো বললে না। নার্ভাস করত কি করে লোককে?