পাহাড়ের মাথায় টেলিভিশন এরিয়্যাল কে বসিয়েছে, বুঝতে আর অসুবিধে হল না তিন গোয়েন্দার।
কিন্তু আমাদের নাম জানলেন কি করে? আবার জিজ্ঞেস করল। কিশোর।
বলছি, হাত তুলল। ফিলবি। কাগজে পড়েছি রোলস রয়েস প্রতিযোগিতার কথা। ব্ল্যাক ক্যানিয়নে গাড়িটাকে দেখল রড। আমাকে জানােল। তাড়াতাড়ি গিয়ে ঢুকলাম ক্যাসলে। ভয় দেখিয়ে তাড়ালাম তোমাদেরকে। সত্যি, ভয় পেতে দেরি করেছ তোমরা। আরও অনেক আগেই ভয় পেয়ে পালিয়েছে অন্যেরা। যাই হোক, তারপর ফিরে এলাম। এখানে। টেলিফোন গাইডে খুঁজলাম তোমার নাম নেই। ধরেই নিলাম, টেলিফোন নেই তোমার। তবু শিওর হবার জন্যে ফোন করলাম ইনফরমেশনে। ওরা জানাল, আছে। আর কি? পেয়ে গেলাম নাম্বার।
অ, মাথা চুলকাচ্ছে কিশোর। শুটকিকেও নিশ্চয় দেখেছিলেন। মিস্টার মিলার?
শুটকি! অবাক চোখে তাকাল ফিলবি।
আমরা ছাড়াও আরও দুটো ছেলে এসেছিল। একজন রোগাপাতলা ঢাঙা।। নীল একটা স্পোর্টস কার নিয়ে এসেছিল….
ও হ্যাঁ হ্যাঁ। শুটকি! ভাল নাম দিয়েছ। হাহ্ হাহ্ করে হাসল ফিলবি।
উসখুস করছে রড মিলার। শেষে বলেই ফেলল, একটা খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছিলাম সেদিন। আরেকটু হলেই সর্বনাশ হয়ে গেছিল! ওই যে পাথরের ব্যাপারটা। ক্যাসলের ওপরে পাহাড়ের মাথায় আমিই লুকিয়ে ছিলাম। সেদিন ওখানে বসেই নজর রাখছিলাম তোমাদের ওপর। কতগুলো পাথরের আড়ালে ছিলাম। হঠাৎ পা লেগে হড়কে গেল একটা পাথর। চমকে উঠলাম। নিচে রয়েছ তোমরা। কি হল, দেখার জন্যে উঁকি দিলাম। আমাকে দেখে ফেললে তোমরা। ধরার জন্যে উপরে উঠতে লাগলে। লাফিয়ে সরে এসে ছুটলাম। কয়েকটা পাথর গড়িয়ে গিয়ে ধাক্কা লাগল আলগা পাথরের স্তূপে। ব্যস, নামল পাথর ধস। ওই জায়গাটাই এমন। তোমরা আটকে গেলে গুহায়। তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে গুহার বাইরে দাঁড়ালাম। কি করব না করব, দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। ধরেই নিয়েছিলাম, চ্যাপ্টা হয়ে গেছ তোমরা। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলাম। ওখানেই। পাথরের ফাঁক গলে লাঠির মাথা বেরোতে দেখে কি যে খুশি লেগেছিল, বলে বোঝাতে পারব না, থামল সে।
গুহাটা না থাকলেই তো খতম করে দিয়েছিলেন। গোমড়া মুখে বলল মুসা।
সত্যি বলছি, বলল মিলার। ইচ্ছে করে ফেলিনি। ওটা নিতান্তই দুর্ঘটনা…
এরপর আর কোন কথা চলে না। চুপ করে গেল মুসা।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। হঠাৎ মুখ তুলে বলল, কিন্তু কয়েকটা ব্যাপার পরিষ্কার হচ্ছে না এখনও!
কি ব্যাপার? জানতে চাইল ফিলবি।
আপনার সঙ্গে যেদিন দেখা করলাম, বলল কিশোর। মিছে কথা বলেছেন। ঝোপ পরিষ্কার করেননি, অথচ বলেছেন করছিলেন। কেন? টেবিলে লেমোনেড রেডি রেখেছিলেন। কি করে জানলেন আমরা যাব?
হাসল অভিনেতা, কি করে জানলাম? গুহ থেকে বেরোলে তোমরা। গাড়ি পর্যন্ত তোমাদেরকে অনুসরণ করে গিয়েছিল মিলার। বেশ জোরেই শোফারকে আমার এ-জায়গাটার নাম বলেছিলে। পাথরের আড়ালে লুকিয়ে শুনেছিল মিলার। খবর দিল আমাকে। লেমোনেড রেডি করলাম। জানালায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, রোলস রয়েসটা আসছে। একটা মাচেটে নিয়ে চট করে গিয়ে ঢুকে পড়লাম একটা ঝোপে। হঠাৎ নাটকীয় ভাবে বেরিয়ে এসে, চমকে দিতে চেয়েছিলাম তোমাদেরকে। চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম স্নায়ুর ওপর। তারপর শোনালাম টেরর ক্যাসলে ভূত আমদানি করার কাহিনী, হাসল ফিলবি। মুসা কিন্তু সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
চট করে আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল মুসা।
তোমাদেরকে ক্যাসল থেকে দূরে রাখার অনেক চেষ্টা করেছি, আবার বলল ফিলবি। কিন্তু পারলাম না। বড় বেশি একরোখা ছেলে তোমরা। বেশি বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে আজ ধরাই পড়ে গেলাম। এতই তাড়াহুড়ো করেছি, সুড়ঙ্গ মুখের দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছি। পাখিগুলো গিয়ে ঢুকল সুড়ঙ্গে। আরও ফাঁস করে দিল ভূতের পরিচয়।
আবার ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। জিপসি বুড়ি সেজে কে গিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই আপনার বন্ধ, মিস্টার মিলার?
হাঁ। ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম তোমাদেরকে, বলল ফিলবি।
ভয় পাইনি, বরং কৌতুহল আরও বেড়ে গিয়েছিল। সন্দেহও বাড়ল। বুঝলাম, ভূত নয়, টেরর ক্যাসলে মানুষের বাস আছে। সেটা আরও স্পষ্ট করে দিল রবিনের তুলে আনা ছবি। আর্মর সুটে মরচে নেই, লাইব্রেরির বইয়ে ধুলো নেই। তার মানে, কেউ একজন নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখে ওগুলো। কে? কার এত দরদ জিনিসগুলোর জন্যে? আন্দাজ করলাম, একজনেরই হতে পারে। সে আপনি, মিস্টার ফিলবি। …তবে, আজ রাতে কিন্তু বোকাই বানিয়ে ফেলেছিলেন। আরব দসু্যু সেজে। স্মাগলাররা ক্যাসলটাকে ঘাঁটি বানিয়েছে, প্রায় বিশ্বাসই করে ফেলেছিলাম।
হ্যাঁ, ঠিকই অনুমান করেছিলে। আমিই পরিষ্কার করি। জিনিসপত্রগুলো। আর কিছু জানার আছে?
অনেক! বলে উঠল মুসা। জানতে চাই, জলদস্যুর ছবিটা সত্যিই কি চোখ টিপেছিল?
আমি টিপেছিলাম, বলল ফিলবি। ছবিটার পেছনের দেয়াল আসলে কাঠের তৈরি। সাদা রঙ করা কাঠের একটা বোর্ড। টেনে খুলে আনা যায়। ঠেলে দিলেই আবার বসে যায় খাপে খাপে। বোর্ডটা সরিয়ে ছবির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। চোখের পেছনে ছোট গোল প্লাস্টিকের চাকতি সরিয়ে, ওই ছেদায় নিজের চোখ রেখেছিলাম। তুমি চাইতেই টিপলাম।
কিন্তু পরে ছবিটা ভালমত পরীক্ষা করে দেখেছি। রবিনও দেখেছে। কোন ছিদ্র ছিল না চোখের জায়গায়।