মিলার ছাড়া আর সবাই হাঁ করে চেয়ে আছে। একেবারে চুপ।। এমন কি কিশোরও চুপ হয়ে গেছে।
মিটি মিটি হাসছে মিলার। বলল, ও সত্যিই জন ফিলবি।
হঠাৎই ব্যাপারটা বুঝে ফেলল। কিশোর। মুখ দেখে মনে হল, পোকা গিলে ফেলেছে। আপনি জন ফিলবি, আপনিই হ্যারি প্রাইস, মিস্টার ফিসফিস, তাই না?
মিস্টার ফিসফিস চেঁচিয়ে উঠল মুসা। তা কি করে হয়! মিস্টার প্রাইসের চেয়ে বেঁটে, চুল আছে…
কিশোর ঠিকই বলেছে, পকেট থেকে একটা উইগ বের করে। পরে ফেলল ফিলবি। আবার মাথা টাকা হয়ে গেল তার। বুক চিতিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, লম্বা দেখাল একটু। হঠাৎ ফিসফিসে গলায় চেঁচিয়ে উঠল, একটু নড়বে না! প্ৰাণের ভয় থাকলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা।
চমকে উঠল তিন গোয়েন্দা, হ্যানসনসহ। পরীক্ষণেই বুঝল ব্যাপারটা। নিজেকে মিস্টার ফিসফিস প্রমাণ করল ফিলবি। অবাক হল তিন গোয়েন্দা, লোকটা কত বড় অভিনেতা, বুঝল এখন।
পকেট থেকে কি যেন একটা বের করল ফিলবি। প্লাস্টিক তৈরি। গলায় লাগিয়ে দিতেই গভীর কাটা দাগ হয়ে গেল। ছেলেরা, বুঝতে পেরেছ তো এবার? জন ফিলবিকে হ্যারি প্রাইস বানিয়ে ফেলা কিছুই না। গলার স্বর বদলে ফেলি। কথা বলি ভয়াবহ ফিসফিসে গলায়। কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারে না, আমিই জন ফিলবি।
গলার নকল দাগ আর মাথার উইগটা খুলে আবার পকেটে রেখে দিল ফিলবি। এস, বস সবাই। তারপর বল, কে কি জানতে চাও। তবে, আগে আমিই বলে নিচ্ছি। কিছু, টেবিলে রাখা ছবিটা দেখিয়ে বলল, দেখছ, মিস্টার ফিসফিসের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছি। আমি। কি করে করলাম? খুব সহজে। ফটোগ্রাফির একটা কৌশল। অনেক বছর আগে, ছবিতে যখন অভিনয় করতাম, গলার স্বর খুব খারাপ ছিল। তোতলাতাম। লোকের সঙ্গে কথা বলতেই লজা লাগত। আশ্চর্য লোকের স্বভাবা এটাকেই দুর্বলতা ধরে নিল ওরা। ঠকােত। অনেক ভেবে চিন্তে শেষে নিজেকে মিস্টার ফিসফিস বানিয়ে নিলাম। ভয় পাওয়ানোর মত চেহারা। গলায় কাটা দাগ দেখে ধরেই নিল লোকে, লোকটা ডাকাত-ফাকাত গোছের কিছু। তার ওপর ভয়ঙ্কর ফিসফিসে গলা। বুঝে গেলাম, হ্যারি প্রাইসকে ভয় পায় লোকে। ব্যস, তাকেই ম্যানেজারের পদটা দিয়ে দিলাম। এরপর থেকে টাকা পয়সা আদায় বা কোন কঠিন কাজ করার দরকার পড়লেই ফিসফিস সেজে হাজির হতাম লোকের সামনে। কেউ ধরতে পারেনি। লোকে জেনেছে জন ফিলবি আর হ্যারি প্রাইস আলাদা লোক। একমাত্র রড মিলার ছাড়া আর কেউ জানত না ব্যাপারটা। ও আমার মেকআপ ম্যান ছিল। ফিসফিস সাজার ফন্দিটা ওর মাথা থেকেই বেরিয়েছে, থামল জন ফিলবি। হাসল। কেমন লাগছে শুনতে?
ভাল, ভাল, বলে উঠল মুসা। বলে যান!
ভালই কাটছিল দিন, বলে চলল ফিলবি। এই সময়ই এল টকিং-পিকচার। ভাবলাম, অভিনয়কেই বেশি গুরুত্ব দেবে লোকে। গলার স্বরে সামান্য খুঁত, সেটা মাপ করে দেবে। কিন্তু না, দিল না। ওটাকেই অস্ত্ৰ বানিয়ে আমার মন গুড়িয়ে দিল। গরম লোহার শিক ঢুকিয়ে যেন ছাঁকা দিয়ে দিল কলজেয়। ছেড়ে দিলাম অভিনয়। ঘরকুণো হয়ে গেলাম। এই সময়ই নোটিশ এল ব্যাংক থেকে, ঋণের দায়ে আমার বাড়ি দখল করে নেবে। ফিলবি ক্যাসল অন্যের হয়ে যাবে, ভাবতেই খারাপ লাগে আমার। বেপরোয়া হয়ে উঠলাম। থামল একটু সে। তারপর বলল, ক্যাসল তৈরির সময়ই সুড়ঙ্গটা আবিষ্কার করেছি। ক্যাসল বানিয়ে শ্রমিকেরা চলে গেল। রিড আর আমি ছাড়া আর কেউ জানত না এটা। সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি একটা দরজা বানিয়ে নিলাম, তারের জাল আর সিমেন্ট দিয়ে। এখানে এই বাড়িটা বানালাম। লোকে জানল, এটা হ্যারি প্রাইসের বাড়ি। এক ঝড়ের রাতে পাহাড়ের ওপর থেকে আমার গাড়িটা ফেলে দিলাম নিচে। লোকের কাছে মরে গেল। জন ফিলবি।
ভূত-প্ৰেতগুলো বানালেন। কখন? জানতে চাইল কিশোর।
শেষ ছবিটাতে অভিনয় করার সময়! ভেবেছিলাম, যেদিন ছবি মুক্তি পাবে, বন্ধুদেরকে দাওয়াত করে এনে মজা দেব। তা আর হল না। ছবি দেখে হাসাহাসি শুরু করল লোকে। মন খারাপ হয়ে গেল, থামল ফিলবি। তারপর বলল, পরে খুব কাজে লেগেছে জিনিসগুলো। এমনিতেই পুরানো ধাঁচের ক্যাসল, ভেতরে অদ্ভুত সব জিনিসে ঠাসা। দেখেই গা ছমছম করে লোকের, ভয় পেতে শুরু করে। তারপর দুয়েকটা ভূত কিংবা প্ৰেতাত্মা সামনে হাজির হয়ে গেলে, ভিরমি খেতে বাকি থাকে। শুধু, হাসল সে। লোকে জানল ক্যাসলে ভূতের উপদ্ৰব। আছে। ওরা আর ওদিকে মাড়াল না। পথটাও বন্ধ করে দিলাম পাথর ফেলে ফেলে। ক্যাসল আর বেচিতে পারল না ব্যাংক। হাতে সময় পেলাম। বসে না থেকে দুষ্পপ্ৰাপ্য কাকাতুয়ার ব্যবসা শুরু করে দিলাম। কিছু টাকা জমেছে এখন আমার হাতে। আর সামান্য কিছু জমলেই ব্যাংকের টাকা পুরো শোধ করে দিতে পারতাম, জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। ফিলবি। কিন্তু তোমরা বোধহয় তা হতে দিলে না।
মিস্টার ফিলবি, এতক্ষণ মন দিয়ে অভিনেতার কথা শুনছিল। কিশোর। আপনিই আমাদেরকে ফোন করেছিলেন, না? ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন?
মাথা ঝোঁকাল অভিনেতা। ভেবেছিলাম, এরপর আর ক্যাসলের ধারে কাছে আসবে না। কিন্তু সাহস অনেক বেশি তোমাদের।
কি করে জানলেন, সেরাতে আমরা যাব? আমাদের পরিচয় জানলেন কি করে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মৃদু হাসল ফিলবি। রড মিলার, স্পাইয়ের কাজটা ওই করেছে। ব্ল্যাক ক্যানিয়নের ধারে, একটা পাহাড়ের ঢালে ছোট একটা বাংলো আছে। ওটা তার বাড়িা নিচে থেকে সহজে লোকের চোখে পড়ে না বাড়িটা। কাছাকাছি থাকে, ক্যাসলের ওপর নজর রাখতে সুবিধে তারা। তোমাদেরকে দেখেছিল। সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনে জানিয়েছে আমাকে, থামল সে।