একে একে অন্যেরাও বেরিয়ে এল সুড়ঙ্গের বাইরে, খাঁচার ভেতরে।
কাকাতুয়ার খাঁচা এটা, বলল কিশোর। হ্যারি প্রাইসের পাখি।
টেরর ক্যাসল থেকে ওই গোপন সুড়ঙ্গ চলে এসেছে পাহাড়ের তলা দিয়ে। ব্ল্যাক ক্যানিয়ন থেকে পাহাড় ঘুরে গেলে হ্যারি প্রাইসের বাড়ি কয়েক মাইল। অথচ পাহাড়ের তলা দিয়ে মাত্র কয়েক শো ফুট।
এগিয়ে গেল কিশোর। জোরে ঠেলা দিল খাঁচার দরজায়। ঝটিকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। বেরিয়ে এল। বাইরে। সামনেই হ্যারি প্ৰাইসের বাংলো।
ফিসফিসিয়ে সঙ্গীদেরকে বলল কিশোর, চমকে দেব ওদের। চল, যাই।
নিঃশব্দে বাংলোর দরজার কাছে এসে দাঁড়াল ওরা। বেলপুশ টিপে দিল কিশোর।
কয়েক মুহূর্ত পরেই খুলে গেল দরজা। দাঁড়িয়ে আছে হ্যারি প্রাইস। চোখে অবাক দৃষ্টি। কুৎসিত দেখাচ্ছে চকচকে টাক আর গলার কাটা দাগ। কি চাই? ফিসফিসিয়ে বলল সে।
কথা বলতে চাই বলল কিশোর।
এত রাতো এখন সময় নেই। ঘুমোতে যাব।
তাহলে হাজতে গিয়ে ঘুমোতে হবে, এখানে নয়, এগিয়ে এল হ্যানসন। পুলিশকে ফোন করব।
সতর্ক হয়ে উঠল। হ্যারি প্রাইস। ভাবল এক মুহূর্ত। সরে জায়গা করে দিল। এস, ফিসফিস করল সে। ভেতরে এস।
ঘরে ঢুকাল ওরা। টেবিলের ওপাশে বসে আছে। একজন লোক। হালকা-পাতলা, লম্বায় পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি হবে। হাতে তাস। বোঝা গেল, খেলা ফেলে দরজা খুলতে উঠেছে প্রাইস।
রড মিলার, আমার বন্ধু, পরিচয় করিয়ে দিল মিস্টার ফিসফিস। ব্রড, এরা তিন গোয়েন্দা। টেরর ক্যাসলে ভূত আছে কিনা তদন্ত করছে। তো, ছেলেরা, ভূত-টুত দেখেছ, কিছু ক্যাসলে?
হ্যাঁ, বলল কিশোর। টেরির ক্যাসল রহস্য সমাধান করে ফেলেছি।
কিশোরের আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক হল মুসা আর রবিন। সত্যিই কি সমাধান করে ফেলেছে?
তই নাকি? বলল মিস্টার ফিসফিস। তা রহস্যটা কি?
আপনারা দুজন, বলল কিশোর। হ্যাঁ, আপনারা দুজনই টেরার ক্যাসলের ভূত। ভূতুড়ে করে রেখেছেন বাড়িটাকে। কয়েক মিনিট আগে আমাকে আর মুসাকে আপনারাই ধরে বেঁধেছেন। মরার জন্যে ফেলে রেখে এসেছেন। অন্ধকার সেলে।
ভুরু কুঁচকে গেছে প্রাইসের। ভাব দেখে মনে হল ধরে মারবে কিশোরকে। হাতুড়ির হাতলে আঙুল চেপে বসল হ্যানসনের।
খুব সাংঘাতিক অভিযোগ, খোকা, বলল মিস্টার ফিসফিস। কিন্তু প্ৰমাণ করতে পারবে না।
মুসারও তাই ধারণা, প্রমাণ করতে পারবে না কিশোর। হ্যারি প্রাইস কিংবা মিলার নয়, তাদেরকে বেঁধেছে দুই আরব দাস। সঙ্গে ছিল এক বুড়ি জিপসি আর একটা ইংরেজ মেয়ে।
নিশ্চয় পারব, জোর গলা কিশোরের। পায়ের জুতো দেখুন না। আমাকে বাঁধার সময়ই এঁকে দিয়েছি।
চমকে উঠল। প্রাইস আর মিলার। চোখ চলে গেল জুতোর দিকে। অন্যেরাও তাকাল।
চকচকে কালো চামড়ার জুতো। দুজনেরই ডান পায়ের জুতোর মাথার কাছে সাদা চকে আঁকা ? তিন গোয়েন্দার ট্রেডমার্ক।
১৮
হ্যারি প্রাইস আর রড মিলার তো বটেই, মুসা রবিন এমনকি হ্যানসনও অবাক হয়ে গেছে।
কিন্তু… শুরু করেই থেমে গেল মুসা।
বুঝতে পারলে না? মুসার দিকে চেয়ে বলল কিশোর। মেয়েমানুষের পোশাক আর উইগ পরেছিল ওরা। আমাকে বাঁধার সময় ছয়ে দেখেছিলাম। তখনই বুঝেছি, পুরুষের বুট। বুঝলাম, ছদ্মবেশ ধরেছে। পাঁচজনকে একবারও একসঙ্গে দেখিনি। তারমানে, দুজনেই পাঁচজনের অভিনয় করেছে। এক কুমিরের ছানা সাতবার দেখানোর মত, অনেকটা।
তারমানে… দুই আরব, দুই মহিলা আর এক আলখেল্লাঅলা, সব ওই দুজনেরই কাণ্ড! তাজ্জব হয়ে গেছে মুসা।
ঠিকই বলেছে ও, কিশোরের আগেই জবাব দিল হ্যারি প্রাইস। তোমাদের ভয় দেখাতে বার বার চেহারা বদলেছি। তবে, ক্ষতি করার কোন ইচ্ছে ছিল না। আমাদের। বাঁধন খুলে দেবার জন্যেই আবার ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের বন্ধুরা দেখে ফেলল। তাড়া খেয়ে ফিরে এসেছি।
আমরা খুনী নই, বলল বেঁটে লোকটা, রড মিলার। স্মাগলারও না। ভুতও না। যা করেছি, সব তোমাদেরকে ভয় পাওয়ানোর জন্যে। মুখ টিপে হাসল সে।
তবে আমি খুনী, গম্ভীর দেখাচ্ছে প্রাইসকে। জন ফিলবিকে আমিই খুন করেছি।
হাঁ হ্যাঁ, ঠিক, এমন ভাবে বলল মিলার, যেন ভুলেই গিয়েছিল কথাটা। তবে বিশেষ কিছু এসে যায় না। তাতে।
পুলিশের হয়ত এসে যাবে, বলল হ্যানসন। কিশোরের দিকে চেয়ে বলল, চলুন আমরা যাই। পুলিশকে খবর দেই গিয়ে।
দাঁড়ান দাঁড়ান, হাত তুলে বাধা দিল প্রাইস। একটু সময় দিন আমাকে। জন ফিলবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের।
জন ফিলবির ভূতের সঙ্গে তো? ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার।
ভুতই বলতে পার। ও নিজেই বলবে, তাকে কেন খুন করেছি আমি।
আর কিছু কেউ বলার আগেই ঘুরে হাঁটতে শুরু করল প্রাইস। পাশের ঘরে চলে গেল।
তাড়াতাড়ি পা বাড়াল সেদিকে হ্যানসন।
থামুন থামুন, বাধা দিল মিলার। ভয় নেই, পালাবে না। মিনিট খানেকের ভেতরেই ফিরে আসবে। হ্যাঁ, কিশোর পাশা, এই যে নাও, তোমার ছুরি।
থ্যাংক্যু, বলল কিশোর। আট ফলার ছুরিটা নিয়ে কোমরের বেল্টে আটকাল।
ঠিক এক মিনিট পরেই দরজায় এসে দাঁড়াল লোকটা। না, মিস্টার ফিসফিস নয়। তার চেয়ে বেঁটে, কিছু কম বয়েসী একজন লোক। পরিপটি করে আঁচড়ানো ধূসর চুল। পরনে টুইডের জ্যাকেট। মুখে হাসি।
গুড ইভনিং বলল লোকটা। আমি জন ফিলবি। আমাকে নাকি দেখতে চাও?