চলুন, দেখিা বলেই সামনে পা বাড়াল হ্যানসন। বেটি এদিক দিয়েই গেছে।
হ্যানসনের সঙ্গে পেরে উঠছে না। রবিন। শেষে তার একটা হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল শোফার।
খানিকটা এগোতেই সরু হয়ে এল সুড়ঙ্গ। সোজা হতে পারছে না হ্যানসন। মাথা নুইয়ে হাঁটতে হচ্ছে। যতই সামনে বাড়ছে, আরও সরু হয়ে আসছে সুড়ঙ্গ। মাথা নিচু করে রাখতে হচ্ছে, সামনের দিকে সোজা চাইতে পারছে না। হঠাৎ তার কপালে এসে জোরে লাগল। একটা কি যেন চমকে যাওয়ায় হাত থেকে খসে পড়ে গেল। লণ্ঠন। নিভে গেল।
রবিনের গালেও এসে বাড়ি মারাল কি একটা। ফড়িড়ড়াড় করে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে চলে গেল কি যেন! বাদুড়া চেঁচিয়ে উঠল। সে। হ্যানসন, বাদুড়ে আক্রমণ করেছে।
চুপ করুন, শান্ত হোনা নিচু হয়ে বসে লণ্ঠন খুঁজছে। হ্যানসন। ভয় পাবেন না!
কিন্তু ভয় না পেয়ে উপায় আছে! একের পর এক এসে গায়ে মাথায় মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ওগুলো। একটা এসে বসে পড়ল। মাথায়। চেঁচিয়ে উঠল রবিন। থাবা মেরে ওটাকে ফেলে দিতে দিতে বলল, হ্যানসন ভ্যাম্পায়ার! সব রক্ত খেয়ে নোবে!
ওসব গপ্পো! অভয় দেবার চেষ্টা করল হ্যানসন। ভ্যাম্পায়ার বলে কিছু নেই!
লণ্ঠনটা খুঁজে পেয়েছে হ্যানসন। সুইচে। খামোকাই টেপাটেপি করল। বার দুই ঝাঁকুনি দিল। জ্বলল না। আলো। বিগড়ে গেছে। বিপদেই পড়লাম দেখছি! এখন উপায়!
হঠাৎ কোমরে হাত পড়ল রবিনের, শক্ত কিছু একটার ছোঁয়া লাগল। আছে হ্যানসন, মুসার টর্চটা কোমরে ঝুলিয়ে নিয়েছিলাম।
জ্বলে উঠল টর্চ। উড়ন্ত প্রাণীগুলোকে দেখল। ওরা। একটা দুটো নয়, ডজন ডজন। বড় আকারের কাকাতুয়া। আলো দেখে তীক্ষ্ণ চিৎকার করতে করতে ছুটে এল। ঠোকর মেরে টর্চের কােচই ভেঙে দেবে হয়ত। তাড়াতাড়ি আলো নিভিয়ে ফেলল রবিন।
বাড়ছেই। পাখির সংখ্যা। স্রোতের মত একটানা আসছে সরু দিয়ে। আছড়ে পড়ছে গায়ে মুখে মাথায়। ইতিমধ্যেই কপালে গোটা দুয়েক ঠোকর লেগে গেছে। রবিনের। ফুলে গেছে। ব্যথা করছে। চোখে ঠোকর লাগলে সর্বনাশ!
এগোনো যাবে না, চেঁচিয়ে বলল হ্যানসন। আসুন, পিছিয়ে যাই।
অন্ধকারে রবিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল হ্যানসন। অনেকখানি পিছিয়ে আসার পর কমে এল পাখি। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় হুটোপুটি করছে পাখিগুলো, তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে আসছে। আলো জ্বললেই হয়ত উড়ে আসবে। তারের দরজাটা তুলে আগের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল হ্যানসন। সেই ছোট ঘরটায় ফিরে এল আবার দুজনে।
মনে হচ্ছে, ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে নেয়া হয়নি ওঁদেরকে, বলল হ্যানসন। দরজা খোলার সময় নামিয়ে রাখতেই হত। সেই সুযোগে কোন চিহ্ন রেখে যেতেন মাস্টার কিশোর।
একমত হল রবিন।
হ্যানসন বলল আবার, এই ঘর পর্যন্ত এসেছেন ওঁরা, কোন সন্দেহ নেই। তারপর কোন একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাঝখানেরটা দেখলাম। এবার বাঁয়েরটা দেখি। তারপর ডানেরটা দেখব। ডাকতে ডাকতে এগোব। কাছে পিঠে থেকে থাকলে, সাড়া দেবেন।
মন্দ বলেনি হ্যানসন। তার কথায় সায় জানালি রবিন।
টার্চ জ্বালল রবিন। প্রথমে এগিয়ে গেল বাঁয়ের সুড়ঙ্গের দিকে। সুড়ঙ্গ মুখে দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচাল হ্যানসন, মাস্টার কিশোর, আপনারা কোথায়!
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জবাব এল। কার গলা, চিনতে ভুল হল না। হ্যানসনের। রবিনের হাত থেকে টৰ্চটা নিয়ে এগোল।
কয়েক গজ এগোতেই দেয়ালের গায়ে দরজা দেখতে পেল। ঠেলা দিতেই খুলে গেল ভেজানো পাল্লা। আলো ফেলল। ভেতরে।
***
উফফ! রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁধনের দাগগুলো জোরে জোরে ডলছে মুসা।
কিশোরও ডিলছে। সংক্ষেপে হ্যানসন আর রবিনকে জানাল, কি করে বন্দি হয়েছিল ওরা।
তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার, বলল হ্যানসন। পুলিশ নিয়ে আসতে হবে। ভয়ানক লোক ওরা! আমরা না এলেই তো গেছিলেন!
ছোট ঘরটায় ফিরে এল ওরা। সিড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল কিশোর। কান পাতল। কিসের শব্দ!
পাখি! বলল রবিন।
পাখি!
কি করে মেয়েমানুষটাকে তাড়া করে গিয়েছিল, জানাল রবিন। সবশেষে জানাল, কি পাখি ওগুলো।
কাকাতুয়া! কিশোরের মুখ দেখে মনে হল বোলতা হুল ফুটিয়েছে। জলদি, এস আমার সঙ্গে। এক থাবায় হ্যানসনের হাত থেকে টৰ্চটা ছুটল। ঢুকে পড়ল মাঝের সুড়ঙ্গে।
আগে আগে ছুটছে কিশোর, পেছনে অন্যেরা। তারের দরজাটার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। একটানে ফেলে দিল পাল্লা। আবার ছুটল। ওর সঙ্গে তাল রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদের জন্যে।
ক্ৰমে সরু হয়ে আসছে সুড়ঙ্গ। আলো দেখে উড়ে এল পাখির ঝাঁক। বুপ করে বসে পড়ল। কিশোর। আলো নিভিয়ে দিল। সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলল, হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হবে।
এগিয়ে চলেছে। ওরা। সবার আগে কিশোর। মাঝে মাঝে টর্চ জ্বেলে দেখে নিচ্ছে পথ। মাথার উপরে উড়ছে পাখিগুলো, হুটোপুটি করছে। বসার জায়গা পাচ্ছে না। অন্ধকারে বেরোনোর পথ পাচ্ছে না। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আলো দেখলেই ডাইভ দিয়ে নেমে আসছে। তাড়াতাড়ি আবার নিভিয়ে দিতে হচ্ছে টর্চ।
একেবেঁকে এগিয়ে গেছে। সুড়ঙ্গ। একটা জায়গায় এসে আর বাঁক নেই, সোজা এগিয়েছে। সামনে অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে। ওটাই সুড়ঙ্গমুখ।
কাঠের পাল্লা দিয়ে দরজা লাগানো হয়েছে সুড়ঙ্গমুখে। হাঁ করে খুলে আছে এখন পাল্লা দুটো। বেরিয়ে এল কিশোর। তারার আলোয় দেখল, বিরাট এক খাঁচায় এসে ঢুকেছে।