অসম্ভব! বলল হ্যানসন। আয়নার ভেতর দিয়ে কেউ যেতে পারে না! দেখতে হচ্ছে!
আয়নাটার চারপাশে খুঁজে কোন ফোকর দেখতে পেল না ওরা। দরজার চিহ্ন নেই। কি ভেবে আয়নার ফ্রেম ধরে ঠেলা দিল। হ্যানসন। ওদেরকে অবাক করে দিয়ে খুলে গেল পাল্লা। ওপাশে অন্ধকার প্যাসেজ।
গোপন দরজা! বিস্মিত হ্যানসন। নিশ্চয় এদিক দিয়ে গিয়েছেন। চলুন, আমরাও যাই।
গাঢ় অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে রবিন, আবার একাও থাকতে পারবে না। ডাইনিং রুমে। শেষে যাওয়াই ঠিক করল।
ঢুকে পড়ল হ্যানসন। পেছনে ঢুকল রবিন। দেয়ালে প্ৰশ্নবোধক। চিহ্ন ধরে ধরে এগিয়ে চলল দুজনে।
ও—প্ৰান্তের দরজায়ও আঁকা আছে প্ৰশ্নবোধক। ওপাশে চলে এল দুজনে। প্রোজেকশন রুমে।
উজ্জ্বল আলোয় ঘরের অনেকখানিই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একসারি ধার দিয়ে পাইপ অর্গানটার দিকে এগোল ওরা। একটা কোণে এসে থামল। নিচে পড়ে আছে পর্দার একটা ছেড়া টুকরো। কোণ ঘুরে এগিয়ে চলল। আবার। কিন্তু কই? কিশোর আর মুসার আর তো কোন চিহ্ন নেই।
এই সময়ই জিনিসটা চোখে পড়ল। রবিনের। একটা সিটের তলায় পড়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে তুলে নিল সে। হ্যানসনা মুসার টর্চ নতুন কিনেছে।
নিশ্চয় ইচ্ছে করে ফেলে যাননি। আশপাশের মেঝে পরীক্ষা করল হ্যানসন। দেখুন দেখুন। ধুলোতে অনেক পায়ের ছাপ। আর এই যে এখানে, কেমন আধা খাপচা হয়ে সরে গেছে ধুলো। মনে হচ্ছে, ধস্তাধস্তি হয়েছে। আরে, একটা চকের টুকরো পড়ে আছে।
বেশ কয়েকটা জুতোর ছাপ একদিকে এগিয়ে যেতে দেখল ওরা। পুরু হয়ে জমেছে ধুলো, তাতে ছাপগুলো স্পষ্ট। ছাপ ধরে ধরে এগোল দুজনে।
সামনের সারির সিটিগুলোর সামনে দিয়ে এগিয়ে গেছে ছাপ।
একদিকের শেষ প্ৰান্তে এসে মোড় নিয়েছে ডানে। পর্দার পাশের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে ওপাশে। একটা হলে এসে থামল ওরা। এক ধার থেকে নেমে গেছে সিঁড়ি। আরেক দিক থেকে উঠে গেছে। দুদিকেই গেছে জুতোর ছাপ।
এবার কোনদিকে যাবা দ্বিধায় পড়ে গেল হ্যানসন। উঠে যাবার সিড়িটার দিকে চেয়ে আছে। এগিয়ে গেল। কয়েক ধাপ উঠেই থেমে গোল আবার। মাথা নাড়ল। কেন যেন মনে হচ্ছে, এদিক দিয়ে যায়নি। চলুন, আগে নেমে গিয়েই দেখি।
নেমে যাবার সিড়ির কাছে চলে এল ওরা। নিচের দিকে আলো ফেলেই চেঁচিয়ে উঠল রবিন, ওই যে, চকভঙা এদিক দিয়েই গেছে।
মাস্টার কিশোরের ওপর শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে আমার, বলল হ্যানসন।
কি হয়েছে ওদের, আপনার কি মনে হয়? সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল রবিন।
ঠিক বুঝতে পারছি না, বলল হ্যানসন। তবে এটা ঠিক, নিজেরা হেঁটে যাননি। তাহলে দেয়ালে প্রশ্ন একে যেতেন। চক ভেঙে ফেলে যেতে হত না। নিশ্চয় বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু কে বয়ে নিয়ে যাবো ভূত? আরে, কোথায় নেমে চলেছি। পাতালেই চলে এসেছি মনে হচ্ছে!
হ্যাঁ। ওই যে, দেখতে পাচ্ছেন? একটা ঘরে শেষ হয়েছে সিঁড়ি। ইংল্যান্ডে দেখেছি আমি এ-ধরনের ঘর। একটা দুর্গে। পাতাল কক্ষ। ডানজন বলে!
সিড়ি শেষ। ঘরটা থেকে তিনটে পথ তিন দিকে গেছে। তিনটে সুড়ঙ্গ মুখ দেখা যাচ্ছে। গাঢ় অন্ধকার ওপাশে। চকের চিহ্নও নেই। আর। কোনদিকে যাবে?
এক কাজ করি, বাতি নিভিয়ে দিই, বলল হ্যানসন। সত্যি সত্যি ভূত হলে অন্ধকারে নড়াচড়া করার কথা। দেখি, কি ঘটে।
গাঢ় অন্ধকারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল দুজনে। কানখাড়া। যেকোন রকম শব্দ শোনার জন্যে তৈরি। অখণ্ড নীরবতা। বাতাস কেমন
ভেজা ভেজা, ভ্যাপসা গন্ধ।
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে বলতে পারবে না। হঠাৎই কানে এল অতি মৃদু একটা শব্দ। পাথরের ওপর আলতো ঘষা লাগল যেন আরেকটা পাথরের। কয়েক মুহূর্ত পরেই দেখা গেল স্নান আলো। মাঝখানের সুড়ঙ্গের ভেতরে। ওদিক থেকেই এসেছে শব্দ।
কোপে কোপে এগিয়ে আসছে আলো। বোকামি করে বসল। হ্যানসন। চেঁচিয়ে ডাকল, মাস্টার কিশোর!
ধমকে থেমে গেল আলোর অগ্ৰগতি। ঘুরে যাচ্ছে। ক্ষণিকের জন্যে দুজনের চোখে পড়ল মেয়েমানুষের পোশাকের এক অংশ। তারপরই দ্রুত মিলিয়ে গেল। আলো।
ছুটুনা। রবিনের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে উঠল। হ্যানসন। ছুটতে শুরু করেছে। জ্বলে উঠেছে তার হাতের আলো। ঢুকে পড়ছে মাঝখানের সুড়ঙ্গে।
হ্যানসনের পিছু পিছু ছুটল রবিন। বেশিদূর এগোতে পারল না। শোফারের পিঠের ওপর এসে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে হ্যানসন। সামনে দুপাশে পাথরের দেয়াল। পথ নেই। এখানে এসে শেষ হয়ে গেছে সুড়ঙ্গ।
ওই দেয়ালের ভেতর দিয়ে চলে গেছে! বিশ্বাস করতে পারছে না যেন হ্যানসন। আলো তুলে পরীক্ষা করে দেখল। না, কোন গোপন দরজা আছে বলে তো মনে হয় না! কি ভেবে কোমরে ঝোলানো হাতুড়িটা খুলে নিল। ঠোকা দিল সামনের পাথরের দেয়ালে। আরো ফাঁপা নিশ্চয় গোপন দরজা!
হাতুড়ি দিয়ে জোরে জোরে ঘা মারতে লাগল হ্যানসন। শিগগিরই একটা ফোকর হয়ে গেল। শক্ত তারের জালে সিমেন্টের পুরু আস্তর লাগিয়ে তৈরি হয়েছে। দরজার পাল্লা। ওপাশ থেকে আটকানো। দেখে মনে হয় সাংঘাতিক ভারি, আসলে পাতলা। জোরে জোরে কয়েক ঘা মেরেই জাল থেকে সিমেন্ট খসিয়ে দিল সে। কাঁধ দিয়ে জোরে জোরে ধাক্কা মারতে লাগল তারের জালে। কয়েক ধাক্কায়ই ফ্রেম থেকে খুলে চলে এল জালের এক প্রান্ত। ওই প্ৰান্ত ধরে টেনে ফ্রেম সহ খুলে নিয়ে এল সে।