দারুণ! বিড়বিড় করল মুসা। কিশোর, তোমার তুলনা হয় না!
অনেক সুবিধে এতে, মুসার কথায় কান দিল না কিশোর। দেয়াল, দরজা জানালার পাল্লা, কিংবা অন্য যে কোনখানে চক দিয়ে প্ৰশ্নবোধক আঁকতে পারব। আমরা। অন্য কারও চোখে পড়লেও তেমন কিছুই বুঝবে না। ভাববে, কোন দুষ্ট ছেলের খেয়াল। অথচ আমাদের কাছে এটা মহামূল্যবান। এখন থেকে যার যার রঙের চক বয়ে বেড়াব আমরা। কখনও কাছছাড়া করব না। ঠিক আছে?
মাথা কাত করে সায় জানাল অন্য দুজন।
আর হ্যাঁ, আসল কথায় এল কিশোর। মিস্টার ক্রিস্টোফারের অফিসে ফোন করেছিলাম, আজ সকালে। কেরি জানিয়েছে, আগামীকাল সকালে স্টাফদের নিয়ে মীটিঙে বসবেন। পরিচালক। সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন ভূতুড়ে বাড়িতে ছবির শুটিং করবেন। তারমানে, কাল সকালের আগেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমাদের। তার মানে…
না! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। আমি পারব না! আমি আর যাব না। টেরর ক্যাসলে। শিওর, ওই বাড়িতে ভূত আছে। কোন প্রমাণের দরকার নেই আমার।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনেক ভেবেছি, মুসার কথায় কোনরকম ভাবান্তর হল না কিশোরের। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, টেরর ক্যাসলে ভূত থাকলে, দেখে ছাড়ব। মিস্টার ক্রিস্টোফার কথা দিয়েছেন, আমাদের নাম প্রচার করবেন। এ-সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করব না। আমি। তোমাদেরও করা উচিত হবে না। বাড়িতে বলে আসবে, আজ রাতে আর না-ও ফিরে যেতে পার। আবার ঢুকব আমরা টেরর ক্যাসলে। আজই ভেদ করব এর রহস্য।
১৪
চাঁদ নেই। গাঢ় অন্ধকারে ড়ুবে আছে। ব্ল্যাক ক্যানিয়ন। তারার আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে টেরর ক্যাসলের অবয়ব।
আরিকবাপারে, কি অন্ধকারা ফিসফিসিয়ে বলল কিশোর। যা থাকে কপালে, চল ঢুকে পড়ি।
মুসার হাতে নতুন টর্চ। হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে কিনেছে। আগের টর্চাটা এখনও উদ্ধার করা যায়নি, নিশ্চয় পড়ে আছে মমিকেসের কাছে। টেরর ক্যাসলের লাইব্রেরিতে।
সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠতে শুরু করল দুজনে। এক পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা, সামান্য খোঁড়াচ্ছে কিশোর। অখণ্ড নীরবতা। তাদের পায়ের চাপা শব্দই অনেক বেশি জোরাল মনে হচ্ছে। হঠাৎ কাছের একটা ছোট ঝোপের ভেতরে শব্দ হল। বেরিয়ে ছুটে পালাল কি যেন! টর্চের আলো ফেলল। মুসা। একটা খরগোশ।
মনে জানান দিয়েছে ব্যাটার, আজ গোলমাল হবে ক্যাসলে, বিড়বিড় করে বলল মুসা। বুদ্ধিমানের মত আগেই পালিয়ে যাচ্ছে।
কোন জবাব দিল না কিশোর। বারান্দা পেরিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াল। টান দিল হাতল ধরে। এক চুল নড়ল না পাল্লা।
এস, হাত লাগাও, বলল কিশোর। আটকে গেছে দরজা।
দুজনে চেপে ধরল। পিতলের বড় হাতল। জোরে হ্যাঁচকা টান লাগল। খুলে চলে এল হাতল। টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পেছনে পড়ে গেল দুজনে।
উফফা ওপর থেকে কিশোরকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে। বলল মুসা, সর সারা পেটের ওপর পড়েছা দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার!
মুসার পেটের ওপর থেকে গড়িয়ে সরে এল কিশোর। উঠে দাঁড়াল।
মুসাও উঠল। টিপেটুপে দেখছে কোথাও ভেঙেছে কিনা বুকের পাঁজরী। নাহ, ঠিকই আছে মনে হচ্ছে।
মুসার কথায় কান নেই কিশোরের। টর্চের আলোয় পরীক্ষা করে দেখছে হাতলটিা।
দেখেছ? বলল কিশোর। হাতলের ছিদ্রে আটকে আছে স্কুগুলো। মাথার খাঁজে খোঁচার দাগ।
ঘষা লেগেছে হয়ত কোন কারণে। গত পনেরো দিনে অনেকবার টানা হয়েছে। ওটা ধরে। পুরানো জিনিস। সইতে পারেনি। খুলে এসেছে।
আমি অন্য কথা ভাবছি, বলল কিশোর। খুলে আসতে সাহায্য করা হয়নি তো? মানে, চিল করে রাখা হয়নি তো?
খালি সন্দোহা বলল মুসা। দরজা খুলতে না পারলে ভেতরে ঢুকব কি করে? ফিরেই যেতে হবে।
না। ঢোকার অন্য কোন পথ বের করতে হবে। ওই যে, পাশে আঙুল তুলে দেখােল কিশোর। জানালা। ওদিক দিয়ে চেষ্টা করে। দেখি, চিল।
বারান্দার এক প্রান্তে চলে এল দুজনে। দেয়ালে বড় বড় জানালা, ফ্রেঞ্জ উইন্ডো। আঙিনার দিকে মুখ করে আছে। মোট ছয়টা। ঠেলোঁঠুলে দেখল ওরা। পাঁচটাই ভেতর থেকে আটকানো। একটা পাল্লার ছিটিকিনি ভাঙা। আধইঞ্চি মত ফাঁকা হয়ে আছে। ধরে টান দিল। কিশোর। জোর লাগল না, হা হয়ে খুলে গেল পাল্লা। ভেতরে উঁকি দিল সে। গাঢ় অন্ধকার।
টর্চের আলো ফেলল। কিশোর। লম্বা একটা টেবিল চোখে পড়ল। চারপাশে চেয়ার। টেবিলের শেষ মাথায় কয়েকটা বাসন পড়ে আছে।
ডাইনিং রুম, নিচু গলায় বলল কিশোর। এদিক দিয়ে ঢুকতে পারব।
জানোলা টপকে ভেতরে এসে ঢুকল দুজনে। আলো ফেলে। দেখল কি কি আছে। ঘরের ভেতরে। দেয়ালের একপাশে বসানো কাঠের বড় দেয়াল আলমারি। পাশে কয়েকটা তাক।
দরজা কয়েকটা, বলল কিশোর। কোনটা দিয়ে যাব?
ফিরে গেলেই ভাল…ওরেকবাপারে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। কথা বেরোল না। আর। গলা টিপে ধরেছে যেন কেউ।
কি, ক্কি হল? কাছে সরে এল কিশোর।
ও-ওই যো তোতলাচ্ছে মুসা। ও-ওটা।
মুসার নির্দেশিত দিকে তাকাল কিশোর। স্থির হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। আবছা আলোয় দেখল, লম্বা একটা মেয়ে চেয়ে আছে তাদের দিকে। পরনে তিনশো বছর আগের পোশাক। গলায় দড়ির ফাঁস। দড়ির অন্য মাথা বুকের ওপর দিয়ে ঝুলছে, নেমে এসেছে মাটিতে।
আপলকে চেয়ে আছে মুসা আর কিশোর। মেয়েটাও চেয়ে আছে ওদের দিকে।
মুসা ধরেই নিয়েছে, ওটা প্ৰেতাত্মা। বাড়ি ছিল ইংল্যান্ডে। ফাঁসি দিয়ে মরেছে, ওই যার কথা বলেছে হ্যারি প্রাইস।