চিহ্নগুলো কার্ডে বসানোর অনেক কারণ আছে, ব্যাখ্যা করতে লাগল কিশোর। একঃ রহস্যের ধ্রুবচিহ্ন ওই প্ৰশ্নবোধক। আমরা কার্ডে দিয়েছি, কারণ, যে-কোন রহস্য সমাধানে আগ্ৰহী আমরা। ছিচকে চুরি থেকে শুরু করে ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, এমনকি ভৌতিক রহস্যের তদন্তেও পিছপা নই। দুইঃ চিহ্নগুলো আমাদের ট্রেডমার্ক। দলে তিনজন, তাই তিনটে চিহ্ন, থামল সে।
অপেক্ষা করে রইল রবিন।
তিন, আবার শুরু করল কিশোর। লোকের মনে কৌতুহল জাগাবে ওই চিহ্ন। কেন বসানো হয়েছে, জিজ্ঞেস করবেই। কথা বলার সুযোগ পাব তখন। এতে আমাদের কথা মনে থাকবে তাদের। নাম ছড়াবে অনেক বেশি, রবিনের দিকে চাইল সে। আরও কারণ আছে, পরে ধীরে ধীরে জানতে পারবে সেগুলো।
আর কি কারণ জানার কৌতুহল হল খুব, কিন্তু বলার জন্যে চাপাচাপি করল না। রবিন। বন্ধুর স্বভাব জানে। নিজে থেকে না বললে হাজার চাপাচাপি করেও মুখ খোলানো যাবে না কিশোরের।
মেশিন ঠিক, কার্ড ছাপানো শেষ, গাড়িও পেয়ে গেছি, বলল রবিন। এবার কোন একটা কাজ পেয়ে গেলেই নেমে পড়তে পারতাম।
কাজ একটা পেয়ে গেছি আমরা, মুসা জানাল।
পাইনি এখনও, শুধরে দিল কিশোর। পাবার আশা আছে। সোজা হয়ে বসল সে। তবে সামান্য একটা অসুবিধে আছে।
কেসটা কি? অসুবিধেটাই বা কি? কৌতুহল ঝরল রবিনের গলায়।
একটা ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজছেন মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার, সত্যি সত্যি ভূত থাকতে হবে। তাঁর একটা ছবির শুটিং করবেন। সেখানে, জানাল মুসা। স্টুডিও থেকে শুনে এসেছে বাবা।
হলিউডের বেশ বড়োসড়ো একটা স্টুডিওতে বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন মুসার বাবা মিস্টার রাফাত আমান।
ভূতুড়ে বাড়ি ভুরু কুঁচকে গেছে। রবিনের। তা-ও আবার সত্যি সত্যি ভুত থাকতে হবে তা কি করে সম্ভব?
ভুত আছে কি নেই, সেটা পরের কথা। তেমন একটা বাড়ির খোঁজ পেলেই তদন্ত শুরু করে দেব আমরা, জবাব দিল কিশোর। ভুত থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও ক্ষতি নেই। আমরা খোঁজখবর করতে শুরু করলেই জানাজানি হবে। নাম ছড়াবে তিন গোয়েন্দার।
অসুবিধে কি ভুত নিয়েই?
না।
তবে? মিস্টার ক্রিস্টোফার আমাদেরকে কাজ দিতে রাজি হচ্ছেন না।
হতেই হবে তাঁকে। আমাদের সার্ভিস নিতে বাধ্য করব, কেমন রহস্যময় শোনাল কিশোরের গলা। তিন গোয়েন্দার যাত্রা শুরু হবে মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের কাজ নিয়েই।
শিওর, শিওরা ব্যঙ্গ প্ৰকাশ পেল রবিনের গলায়। মার্চ করে। সোজা গিয়ে ঢুকে পড়ব পৃথিবী বিখ্যাত এক চিত্র পরিচালকের অফিসে এবং আমরা গিয়ে হাজির হলেই কাজ দিয়ে দেবেন। এতই
সহজা
খুব কঠিনও মনে হচ্ছে না। আমার কাছে, বলল কিশোর। ইতিমধ্যেই মিস্টার ক্রিস্টোফারকে ফোন করেছি। আমি। অ্যাপিয়েন্টমেন্টের জন্যে।
ইয়াল্লা! রবিনের মতই ভুরু কুঁচকে গেছে মুসার। তিনি দেখা করবেন। আমাদের সঙ্গে?
না, সহজ গলায় বলল কিশোর। লাইনই দেয় নি তাঁর সেক্রেটারি।
তা তো দেবেই না, বলল মুসা।
শুধু তাই না, শাসিয়েছে, তাঁর অফিসের কাছাকাছি গেলেই আমাদেরকে হাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে, যোগ করল। কিশোর। মেয়েটা কে জান? কেরি ওয়াইল্ডার।
মুরুকী কেরি। একসঙ্গে বলে উঠল মুসা আর রবিন।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ওদের চেয়ে কয়েক গ্রেড ওপরের ছাত্রী কেরি ওয়াইল্ডার। পড়ালেখায় ভাল। সুনাম আছে ভাল মেয়ে বলে। স্কুলে নিচের গ্রেডের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয় মাঝে মাঝে। মুরু কঁৰীয়ানা ফলানোর লোভটা সামলাতে পারে না। ফলে নাম হয়ে গেছে। মুরু কবী কেরি।
এবারের ছুটতে তাহলে সেক্রেটারির কাজ নিয়েছে। মুরুঝবী চিন্তিত দেখাচ্ছে রবিনকে। মিস্টার ক্রিস্টোফারের সঙ্গে দেখা করার আশা ছেড়ে দাও। মুরু কবীর অফিস পেরোনোর চেয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়া অনেক সহজ।
মূল অসুবিধে এটাই, বলল কিশোর। তবে যে কাজে নামতে যাচ্ছি, বাধা আর বিপদ আসবেই পদে পদে। ওসবের মোকাবিলা করতে না পারলে নামাই উচিত না। আগামীকাল সকালে রোলস রয়েসে চেপে হলিউডে চলে যাব। দেখা করতেই হবে মিস্টার ক্রিস্টোফারের সঙ্গে।
যদি পুলিশে খবর দেয় মুরুব্বী? বলল রবিন। আমার ব্যাপারে অবশ্য ভাবছি না। কাল তোমাদের সঙ্গে যেতে পারব না। আমি। লাইব্রেরিতে কাজ আছে।
তাহলে আমি আর মুসা যাব। কাল সকাল দশটায়। তার আগেই গাড়ি পাঠাতে ফোন করব কোম্পানিকে। হ্যাঁ, তুমি একটা কাজ কর, রবিন, বলে একটা কার্ড তুলে নিল কিশোর। উল্টেপিঠে একটা নাম লিখে বাড়িয়ে ধরল। এটা রাখ। এই নামের একটা দুৰ্গ আছে। পুরানো ম্যাগাজিন কিংবা পত্র-পত্রিকায় নিশ্চয় উল্লেখ থাকবে। এটার ব্যাপারে যত বেশি পার তথ্য জোগাড় করবে।
টেরর ক্যাসল! পড়ে ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। বড় বড় হয়ে গেছে চোখ।
নাম শুনেই ঘাবড়ে গেলো! এত ভয় পেলে গোয়েন্দাগিরি করবে কি করে?
না না, ঘাবড়াইনি…
ঠিক আছে, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। কিছু কার্ড সঙ্গে রাখা। তিনজনকেই রাখতে হবে এখন থেকে। এগুলোই আমাদের পরিচয়পত্র। আগামীকাল থেকে পুরোপুরি কাজে নামব আমরা। পালন করব যার যার দায়িত্ব।
২
পরদিন সকালে, গাড়ি পৌঁছার অনেক আগেই তৈরি হয়ে গেল মুসা। আর কিশোর। লোহার গেটের বাইরে এসে রোলস রয়েসের অপেক্ষায় রইল। ওরা। দুজনেরই পরনে সানডে সুট, শার্ট আর নেকটাই। পরিপটি করে আঁচড়ানো চুল। পরিচ্ছন্ন চেহারা। হাতের নখ অবধি পরিষ্কার করেছে ব্রাশ ঘষে।