চল, দেখি ছবিগুলো, প্ৰস্তাব রাখল মুসা।
রবিন রাজি।
জন ফিলবির অভিনীত ছবির দৃশ্য। কোথাও সে জলদস্যু, কোথাও ছিনতাইকারী, ওয়্যারউলফ, জোম্বি, ভ্যাম্পায়ার, আবার কোথাও বা সাগর থেকে উঠে আসা কোন নাম-না জানা ভয়াবহ দানব।
ইস্স্ ফিল্মগুলো যদি দেখতে পারতাম! বলল মুসা। একই লোকের মত চেহারা!
লোকে এজন্যেই তাকে লক্ষ্যমুখে ডাকত, মনে করিয়ে দিল। রবিন। আরে, দেখ দেখ!
এক জায়গায় দেয়ালের একটা চারকোণা ফোকরে একটা বাক্স, মমিকেস। ডালা বন্ধ। রূপার একটা প্লেট লাগানো বাক্সের গায়ে। এগিয়ে গিয়ে প্লেটে টর্চের আলো ফেলল। মুসা। খোদাই করে। ইংরেজিতে লেখা রয়েছেঃ
জন ফিলবি,
তোমার অভিনীত ছবি দেখে অনেক মজা পেয়েছি বেঁচে থাকতে। মৃত্যুর পর আমার দেহের এই বিশেষ অংশগুলো তোমাকেই দান করে গেলাম। তোমার মিউজিয়মে সাজিয়ে রেখা।
— পিটার হেনশ।
সেরেছে, চাপা গলায় বলল মুসা। ভেতরে কি আছে।
আর কি? নিশ্চয় মমি-টমি কিছু।
অন্য কিছুও হতে পারে! এস, দেখি!
ডালা ধরে ওপরের দিকে টান দিল মুসা। বেজায় ভারি। তুলতে কষ্ট হচ্ছে।
ডালাটা অর্ধেক উঠে যেতেই ভেতরে চাইল মুসা। ওরেকবাপারে! বলেই ছেড়ে দিল ডালা। সরে এল এক লাফে।
কি, ক্কি হল? রবিনের গলায় উৎকণ্ঠা।
দাঁত বের করে হাসছে। কঙ্কাল! উরিববাপারে!
বার দুই ঢোক গিলিল রবিন। কঙ্কাল নড়েচড়ে ওঠেনি তো!
বুঝতে পারলাম না!
এস তো, আবার তুলে দেখি!
ভয়ে ভয়ে এসে আবার ডালা ধরল মুসা। রবিনও হাত লাগাল।
ডালা তুলে ভেতরে উঁকি দিল দুজনেই। সাধারণ একটা কঙ্কাল পড়ে আছে চিত হয়ে। না, নড়ছে না। একেবারে স্থির।
খামোকা ভয় পেয়েছ, বলল রবিন। নিশ্চয় ওটা পিটার হেনশর কঙ্কাল। একটা ছবি তুলে নিই। কিশোর খুশি হবে।
ছবি তুলে নিল রবিন। মুসা নেই ওখানে। জানালার ধারে সরে যাচ্ছে।
সর্বনাশ! হঠাৎ চিৎকার শোনা গেল মুসার। রবিন, জলদি কর! অন্ধকার…
তা কি করে হয়? হাতঘড়ির দিকে চাইল রবিন। এখনও এক ঘন্টা আলো থাকার কথা!
কি জানি! দেখে যাও!
জানালার ধারে সরে এল রবিন। ঠিকই, বাইরে গিরিপথে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। উঁচু পাহাড়ের ওপারে হারিয়ে গেছে সূৰ্য।
ভুলেই গিয়েছিলাম, রবিনের গলায় শঙ্কা, এসব পাহাড়ী অঞ্চলে সূর্য একটু তাড়াতাড়িই ডোবে।
চল, বেরিয়ে পড়ি, তাগাদা দিল মুসা। অন্ধকারে এখানে এক মুহূর্ত থাকতে রাজি নই আমি।
বারান্দায় বেরিয়ে এল ওরা। দুই প্ৰান্ত থেকেই সিঁড়ি নেমে গেছে। দেখতে ঠিক একই রকম। কাছের সিড়িটার দিকে এগিয়ে গেল ওরা। নামতে শুরু করল।
এক জায়গায় এসে শেষ হল সিড়ি। একটা হল ঘরে এসে ঢুকেছে। ওরা। আবছা অন্ধকার। এক নজর দেখেই বুঝল, এটা ইকো রুম নয়, অন্য ঘর। এক প্ৰান্ত থেকে সিড়ি নেমে গেছে।
এদিক দিয়ে যাইনি আমরা, বলল রবিন। চল ফিরি। ওপর তলায় উঠে অন্য সিড়ি দিয়ে নামব।
কি দরকার? বাধা দিল মুসা। ওই তো সিঁড়ি নেমে গেছে। নিশ্চয় নিচের তলায়ই নেমেছে।
অপ্ৰশস্ত সিঁড়ি। গায়ে গায়ে ঠেকে যায়। দ্রুত নেমে চলল। দুজনে। কয়েক ধাপ নেমেই সরু ছোট একটা প্যাসেজে শেষ হয়েছে সিঁড়ি। প্যাসেজের দুপাশে দেয়াল। ও মাথায় দরজা।
তাড়াতাড়ি দরজার কাছে চলে এল ওরা। ঘন হয়ে আসছে অন্ধকার। নব ঘুরিয়ে ঠেলা দিতেই দরজা খুলে গেল! ওপাশ থেকে আবার সিঁড়ি নেমেছে। মুসা চলে গেল ওপাশে। ছেড়ে দিতেই বন্ধ হয়ে যেতে চাইল স্প্রিং লাগানো পাল্লা। খপ করে আবার ধরে ফেলল। সে। রবিনও চলে এল এপাশে। পাল্লা ছেড়ে দিল মুসা।
দরজা বন্ধ হয়ে যেতেই গাঢ় অন্ধকার গ্ৰাস করল ওদেরকে।
চল ফিরে যাই। আবার বলল রবিন। এই অন্ধকারে অচেনা পথে চলতে মন সায় দিচ্ছে না।
ঠিকই বলেছ। এখন আমারও কেমন কেমন লাগছে! ফিরে যাবার জন্যে ঘুরে দাঁড়াল মুসা। দরজার নব ধরে মোচড় দিল। অন্ধকারে তার শঙ্কিত গলা শোনা গেল। ইয়াল্লা রবিন, নব ঘুরছে না! অটোমেটিক লকা পুশ বাটন ওপাশে। তাড়াহুড়োয় চাপ লেগে গেছে হয়ত!
তাহলে আর কি করা! গলা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল রবিন। না চাইলেও সামনেই বাড়তে হবে। আমাদের!
কিছুই দেখা যাচ্ছে না! দেখি, টর্চ জ্বলি …আরে, টর্চ কোথায় গেল আমার! …কোথায়! ..নিশ্চয়, মমি-কেসের ডালা তোলার সময় নামিয়ে রেখেছিলাম!
খুব ভাল করেছি! আমার টর্চাটাও নষ্টা এখন? কি উপায়?
কাচ ভেঙেছে, বালব তো ভাঙেনি। দেখি, টর্চটা দাও আমার হাতে, অন্ধকারে রবিনের বাহুতে হাত রাখল মুসা।
সঙ্গীর হাতে টর্চ তুলে দিল রবিন।
টর্চের গায়ে বার দুই থাবা লাগাল মুসা। জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিল বার কয়েক। সুইচ টিপল। জ্বলে উঠল বালব। নিভে গেল। আবার ঝাঁকুনি দিতেই আবার জ্বলল, মিটমিট করে। ম্লান আলো।
ঠিকমত ব্যাটারি কানেকশন পাচ্ছে না, মন্তব্য করল মুসা। তবে কাজ চালানো যাবে। এস, নামি।
ঘুরে ঘুরে নেমে গেছে সরু সিঁড়ি। আগে নেমে চলল। মুসা। তাকে অনুসরণ করল রবিন। শেষ হল সিঁড়ি। স্নান আলোয় দেখল, ছোট একটা ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে ওরা। দুদিকে দুটো দরজা। বেরোবে কোন দরজা দিয়ে?
সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা দরজার দিকে পা বাড়াল রবিন। সঙ্গে সঙ্গে তার বাহু খামছে ধরল মুসা। শুনিছা শুনতে পাচ্ছ।
কান পাতল রবিন। সে-ও শুনতে পেল।
বাজনা। মৃদু, কাঁপা কাঁপা, বহুদূর থেকে আসছে যেন। প্রোজেকশন রুমের ভাঙা অর্গান পাইপ বাজছো অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। রবিন। হঠাৎ করেই।