চোখ বড় বড় করে সুটটার দিকে চেয়ে আছে। রবিন। চমকে উঠল অট্টহাসির শব্দে। হো হো করে ঘর ফাটিয়ে হাসছে মুসা।
হাসিতে যোগ দিল না। রবিন। বেকায়দা ভঙ্গিতে পড়ে থাকা সুটের ধড়ের একটা ছবি তুলল। আরেকটা ছবি তুলল। মুসার।
যাক, বলল রবিন। ক্যাসলের এক ভূতের ছবি তুললাম। চেয়ারে দাঁড়িয়ে হাসছে। দেখে নিশ্চয় মজা পাবে কিশোর।
ক্যামেরাটা আমার হাতে থাকা উচিত ছিল, রবিন, চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল মুসা। কত হয়ে পড়ে যাচ্ছ তুমি। পেছনে তলোয়ার উচিয়ে আছে আর্মর সুট পরা এক মূর্তি। আহ, যা দারুণ একখান ছবি হত না আবার হাসতে লাগল সে।
আর্মর সুটটার দিকে একবার তাকাল রবিন। দৃষ্টি দিয়ে ওটাকে ভস্ম করার চেষ্টা চালাল যেন। ব্যর্থ হয়ে ফিরল দেয়ালে ঝোলানো ছবির দিকে। ক্যামেরা চোখের সামনে তুলে এনে শটাশট শাটার টিপে চলল। একের পর এক।
কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে মুসার দিকে ফিরল রবিন। হাসি। থামবে এবার? অনেক কাজ পড়ে আছে। ওই যে দরজাটা, চল ওঘরে ঢুকি। দরজার কপালে বসানো প্লেটের লেখা পড়ল, প্রোজেকশন রুম।
চেয়ার থেকে নেমে এল মুসা। বাবার মুখে শুনেছি, আগে বড় বড় অভিনেতার বাড়িতে নিজস্ব প্রোজেকশন রুম থাকত। ঘরে বসেই নিজের ছবি দেখত, বন্ধুদের দেখাত। চল দেখি ঘরটা।
হাতল ধরে জোরে টান দিল রবিন। ধীরে ধীরে খুলে গেল পাল্লা, যেন ওপাশ থেকে টেনে ধরে রেখেছে। কেউ। এক ঝলক হাওয়া এসে ঝাপটা মারাল গায়ে, নাকে এসে লাগল ভ্যাপসা গন্ধ। দরজার ওপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নিরেট অন্ধকার।
বেল্টে ঝোলানো টর্চ খুলে নিল মুসা। আলো ফেলল ভেতরে।
অন্ধকারের কালো চাদর ফুড়ে বেরিয়ে গেল আলোক রশ্মি। চোখের সামনে ভেসে উঠল প্রোজেকশন রুম। বেশ বড় একটা হলঘর। কয়েক সারিতে রাখা হয়েছে শখানেক চেয়ার! একপ্ৰান্তে দাঁড়িয়ে আছে বিরাট এক পাইপ অর্গান!
মুভি-থিয়েটারের মত সাজানো হয়েছে, বলল মুসা। অর্গানটা দেখেছ? রাশেদ চাচারটার চেয়েও অনেক বড়।
নিজের টর্চ খুলে আনল রবিন। সুইচ টিপল। আলো জ্বলল না। ভাল করে দেখে বুঝল, ভেঙে গেছে। কাচ। সে যখন মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল, বাড়ি লেগেছিল তখনই।
একটা টর্চের আলোই যথেষ্ট। প্রোজেকশন রুমের ভেতরে এসে ঢুকল দুজনে। এগোেল পাইপ অর্গানটার দিকে।
হাসাহাসি করে হালকা হয়ে গেছে মন।। ভয় কেটে গেছে। দুজনেরই। অর্গানের কাছে এসে দাঁড়াল ওরা।
ছাতের কাছাকাছি উঠে গেছে বিশাল পাইপগুলো। ধুলোবালি আর মাকড়সার জাল লেগে আছে। অর্গানের একটা ছবি তুলল রবিন।
আলো ফেলে ফেলে পুরো ঘরটা দেখল ওরা। যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চেয়ারগুলো। জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে ছাল-চামড়াগদি। ছবি দেখানোর পর্দার জায়গায় বুলিছে এখন কয়েক ফালি সাদা কাপড়। গুমোট গরম ঘরে।
এখানে কিছু নেই, বলল মুসা। চল, ওপরে যাই।
প্রোজেকশন রুম থেকে বেরিয়ে এল ওরা। ইকো হল পেরিয়ে এক প্রান্তের সিড়ির গোড়ায় চলে এল। উঠতে শুরু করল সিঁড়ি বেয়ে। আধাপাক ঘুরে দোতলায় গিয়ে শেষ হয়েছে সিঁড়ির আরেক মাথা। মাঝামাঝি উঠে থামল ওরা। ধুলোয় ঢাকা জানালার শার্শি দিয়ে বাইরে তাকাল। চোখে পড়ছে গিরিপথ।
আরও ঘন্টা দেড়েক আলো থাকবে, বলল রবিন। এরমধ্যেই দেখে নিতে হবে যা দেখার।
আগে জলদস্যুর ছবিটা ভালমত দেখি, চল, পরামর্শ দিল মুসা।
ব্যালকনিতে এসে থামল ওরা। দুজনেই ধরল। ছবির তার, টান দিল। ভীষণ ভারি ফ্রেম। দুজনে টেনে তুলতেও বেগ পেতে হল।
উঠে এল ছবি। ওটার ওপর টর্চের আলো ফেলল। মুসা। সাধারণ ছবি। তেল রঙে আঁকা, এজন্যেই আলো পড়লে সামান্য চকচক করে। রবিনের ধারণা হল, হয়ত বিশেষ কোন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে ছবির চোখের দিকে চেয়েছিল মুসা, চকচক করতে দেখেছিল। জ্যান্ত চোখ বলে মনে হয়েছিল তখন। সেটা তাকে বলল রবিন।
কিন্তু সন্দেহ গেল না মুসার। জ্যান্তই মনে হয়েছিল! কি জানি, ভুলও দেখে থাকতে পারি। যাকগে, আবার নামিয়ে রাখি ছবিটা, এস।
আবার আগের জায়গায় ছবিটা বুলিয়ে রাখল। ওরা। সরে এল ব্যালকনি থেকে। আবার চলে এল সিঁড়িতে।
সিঁড়ি ভেঙে উঠতেই থাকল। ওরা। একটু পরেই মোটা থামের মত একটা টাওয়ারের ভেতরে আবিষ্কার করল নিজেদেরকে। চারদিকে ছোট ছোট জানালা। বাইরে তাকাল। ক্যাসলের চুড়ার কাছে উঠে এসেছে ওরা। অনেক নিচে ব্ল্যাক ক্যানিয়ন। যতদূর চোখ যায়, শুধু পাহাড় আর পাহাড়।
আরো দেখেছা হঠাৎ বলে উঠল মুসা। একটা এরিয়্যালা টেলিভিশনের
চাইল রবিন। ঠিকই। ওদের একেবারে কাছের পাহাড় চুড়োয় দাঁড়িয়ে আছে একটা এরিয়্যাল। হয়ত পাহাড়ের ওপাশেই রয়েছে কোন বাড়ি। ভাল রিসিপশনের জন্যে এরিয়্যালটা লাগিয়েছে বাড়ির লোকো
পাহাড়ের মাঝে মাঝে অনেক গিরিপথ রয়েছে, দেখেছ? আঙুল তুলে একটা দিক দেখিয়ে বলল মুসা। ব্ল্যাক ক্যানিয়নের মত নির্জন নয় ওগুলো।
ডজন ডজন সরু গিরিপথ আছে। এদিকে পাহাড়ের ভেতরে ভেতরে, বলল রবিন। আমি ভাবছি। এরিয়্যালটার কথা। পাহাড়ের ঢাল কি খাড়া দেখেছ? ওতে চড়তে চাইলে… মনে হচ্ছে, ওদিক দিয়ে ঘুরে যেতে হবে।
আমারও তাই ধারণা, বলল মুসা। চল, নামি। এখানে আর কিছু দেখার নেই।
খানিকটা নেমে একটা বড় ঘরে এসে ঢুকাল ওরা। গাদা গাদা বই র্যাকে। লাইব্রেরি। এখানকার দেয়ালেও অনেক ছবি ঝোলানো, ইকো হলের ছবিগুলোর চেয়ে আকারে ছোট।