টি. সি… অবশেষে কথা ফুটল রবিনের মুখে। শুকনো গলা। মানে, টেরর ক্যাসল।
শুটকির কাজও হতে পারে, বলল কিশোর। সামান্য ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে তার চেহারা। সে-ই হয়ত পাঠিয়েছে বুড়িকে। কিন্তু টেরির এত বুদ্ধি, নাহা বিশ্বাস হচ্ছে না! মরা ইদুর এনে ইয়ার্কি মারা পর্যন্তই তার দৌড়।
কেউ… বলল মুসা। মানে, কিছু একটা চায় না, আমরা টেরার ক্যাসলে যাই। প্ৰথমে ফোনে হুশিয়ার করেছে। তারপর জিপসি বুড়ির ওপর ভর করে তাকে হাঁটিয়ে এনেছে। ইয়ার্ডে। তার মুখ দিয়ে নিজে কথা বলেছে। দুই সঙ্গীর দিকে চাইল সে। কেউ কিছু বলল না। মৌনতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে বলল, এরপর থেকে টেরর ক্যাসলের ধারে কাছে যাওয়াও আর উচিত না আমাদের। কি বল, রবিন?
ঠিক।
কিশোর?
ঠিক বেঠিক জানি না, তবে আবার যেতে হবে টেরর ক্যাসলে, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। লোক হাসাতে চাও? শুটকি কি বলে গেছে, মনে নেই? ভয় পেয়ে এখন পিছিয়ে গেলে থু থু দেবে সে আমাদের মুখে। সারা রকি বীচে। আমাদের গোয়েন্দাগিরির খবর রটিয়ে দিয়েছে। প্রথম কেসেই ফেল করলে মুখ টিপে হাসবে সবাই আমাদের দেখলে। পিছিয়ে আসার আর উপায় নেই। এগিয়ে যেতেই হবে।
চুপ করে রইল দুই সহকারী।
তাছাড়া, আবার বলল কিশোর, জিপসি বুড়ি এসে নতুন আরেক রহস্য যোগ করে দিয়ে গেল। বুঝতে পারছি, ঠিক পথেই এগোচ্ছি। আমরা।
মানে? জানতে চাইল মুসা।
এর আগে অনেকেই ঢুকেছে টেরর ক্যাসলে। এর রহস্য ভেদ করতে চেয়েছে। কাউকেই হুশিয়ার করা হয়নি আমাদের মত। এর একটাই মানে। ঠিক পথেই এগোচ্ছি। আমরা। টেরর ক্যাসলের আজব রহস্য ভেদ করে ফেলি, চায় না কেউ একজন।
বেশ, ধরে নিলাম তোমার কথাই ঠিক, বলল মুসা। তাহলেও আর এগুতে পারছি না। আমরা। তুমি পড়ে আছ বিছানায়। তোমার পা ভাল না হলে কাজে নামতে পারছি না। আর।
ভুল বললে, বলল কিশোর। বিছানায় শুয়ে আছি বটে, ব্রেনটা অকেজো হয়ে যায়নি, বরং ঠাণ্ডা মাথায় ভাবার সুযোগ পেয়েছি বেশি, আমি না হয় না-ই যেতে পারলাম, তোমরা যাও, আরেকবার ঘুরে এস ক্যাসল থেকে।
আমরা যাবা প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। মোটেই না। টেরর ক্যাসলের ওপর বড়জোর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারি। আমি। তার বেশি কিছু করতে পারব না।
খুব বেশি কিছু করতে হবেও না তোমাদেরকে, সহজ গলায় বলল কিশোর। একটা ব্যাপারে শুধু শিওর হয়ে আসতে হবে। অস্বস্তি বেড়ে আতঙ্কে রূপ নেয়। কিনা জানতে হবে, আর সে আতঙ্ক কতখানি তীব্র, তাও বুঝে আসতে হবে।
কতখানি তীব্র! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এখনও বোঝার বাকি আছে নাকি? আতঙ্কে হার্টফেল করতে বসেছিলাম গত বার, মনে নেই?
সেজন্যেই রবিনকে যেতে বলছি। এবার সঙ্গে, বলল কিশোর। রিও একই অবস্থা হয়। কিনা, জানা দরকার। আরেকটা ব্যাপার। অবস্থাটা কতক্ষণ স্থায়ী হয়, জেনে আসতে হবে। মানে, ক্যাসলের বাইরে ঠিক কতদূরে এলে পরে এই আতঙ্ক চলে যায়, বুঝতে হবে।
এর আগের বারে ছিল পনেরো মাইল, জবাব দিল মুসা। বাড়িতে গিয়ে নিজের বিছানায় শোয়ার পর তবে গেছে।
এবারে গিয়ে শিওর হয়ে নাও, সত্যিই পনেরো মেইল কিনা, শান্ত গলা কিশোরের। আগের বারের মত পড়িমড়ি করে ছুটবে না। আস্তে আস্তে পিছিয়ে আসবে, ক্যাসলের বাইরে বেরোবে, পথে নামবে। খানিক পরে পরই থেমে বোঝার চেষ্টা করবে, আতঙ্ক চলে গেছে কিনা।
আস্তে আস্তে, শুকনো হাসি হাসল মুসা। আবার থামবও খানিক পর পর।
হয়ত আতঙ্কিতই হবে না, বলল কিশোর। কারণ এবারে যাচ্ছি। দিনের আলো থাকতে থাকতেই পরীক্ষা করবে ক্যাসলের ঘরগুলো। সাহসে কুলালে রাত নামার পরেও অপেক্ষা কোরো একটু। হ্যাঁ, আগামীকাল বিকেলেই যাচ্ছ তোমরা।
কি? রবিনের দিকে চেয়ে বলল মুসা। যাবে তো?
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। আগামীকাল হলে আমি পারছি না। লাইব্রেরিতে কাজ আছে। পরশু এবং তার পরদিনও পারব না।
আগামী দুতিন দিন আমারও কাজ আছে, বলল মুসা। বাড়িতে। আমিও যেতে পারছি না।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। হুমম, ভাবনার কথাই। তাহলে তো প্ল্যান বদলাতেই হচ্ছে!
ঠিক, খুশি হয়ে বলল মুসা। প্ল্যান বদলাতেই হচ্ছে।
বেশ, বলল কিশোর। এখনও দিনের আলো থাকবে কয়েক ঘন্টা। তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বেরিয়ে পড়। ঘুরে এস ক্যাসল থেকে।
১২
ধুত্তরি। মুখ গোমড়া মুসার। কখনও পারি না-ওর সঙ্গে। কথার প্যাঁচে ফেলে দিয়ে ঠিক কাজ আদায় করে নেয়।
ঠিক, সায় দিল রবিন। আর কিছু বলল না।
গিরিপথে এসে দাঁড়িয়েছে দুজনে। সামনেই পাহাড়ের ঢালে টেরার ক্যাসল আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। তেরছাভাবে রোদ এসে পড়েছে বিশাল টাওয়ারের গায়ে। পেঁচিয়ে ওঠা আঙুর-লতার ফাঁকে ফাঁকে শাৰ্শিভাঙা জানালার ফোকর, ভয়াবহ দানবের চোখ যেন।
শিউরে উঠল একবার রবিন। চল, ঢুকে পড়ি। সুরুজ ড়ুবতে বড়জোর আর দুঘন্টা। তারপর ঝাপাৎ করে নামবে অন্ধকার।
ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল দুজনে। মাঝামাঝি উঠে পেছনে ফিরে চাইল একবার মুসা। বাঁকের ওপারে। পাথরের স্তুপের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে রোলস রয়েস। অপেক্ষা করছে। হ্যানসন।
কি মনে হয়? উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল মুসা। এবারেও শুটকি ফলো করছে আমাদের?