ভীষণ ব্যথা! বিকৃত হয়ে গেছে কিশোরের মুখ। উফফ, বোধহয় ডাক্তারই ডাকতে হবে!
১১
দুই দিন পর।
বিছানায় পড়ে আছে কিশোর। সেদিন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সারাদিন আটকে রাখলেন ডাক্তার। পায়ের এক্সরে করলেন। তারপর কি একটা তরল পদার্থে পা ভিজিয়ে রাখতে দিলেন। বিকেলের দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে সে।
ডাক্তার অভয় দিয়েছেন, শিগগিরই আবার দৌড়াতে পারবে কিশোর। সারাদিন বিছানায় পড়ে না থেকে একটু একটু হাঁটাচলা করতেও বলেছেন।
ওঠার চেষ্টা করে কিশোর, পারে না। একটু নড়াচড়া করলেই প্ৰচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়।
মনে স্বস্তি নেই গোয়েন্দা প্রধানের। দেরি হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয় আর অপেক্ষা করবেন না মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার। হয়ত ইতিমধ্যেই একটা ভূতুড়ে বাড়ি ঠিক করে ফেলেছেন তিনি।
কাজে নামতে না নামতেই এই অঘটন। এর চেয়ে বড় অস্বস্তিকর কারণ আর কি হতে পারে তিন গোয়েন্দার জন্যে?
কিশোরের বিছানার পাশে মলিন মুখে বসে আছে মুসা আর রবিন।
এখনও ব্যথা করে? জানতে চাইল মুসা।
করে, বলল কিশোর। আক্কেল হয়েছে আমার। এত অসাবধান কেন হলাম? পা-টা যে ভাঙেনি এই যথেষ্ট। যাক গে। এখন আসল কথায় আসছি। ওই টেলিফোন কল, ওটার তো কোন সুরাহা হল না। হ্যানসনের সঙ্গে আলাপ করেছি। ও জানিয়েছে, সে রাতে টেরার ক্যাসল থেকে ফেরার পথেও নাকি কে অনুসরণ করেছিল আমাদেরকে। শুটকি হতে পারে।
সহজেই পারে, সায় দিল রবিন। ওই ব্যাটা জানে, টেরর ক্যাসলের ব্যাপারে আমরা কৌতুহলী।
আমার বিশ্বাস হয় না, এদিক ওদিক মাথা নাড়ল মুসা। গলার স্বর এভাবে বদলে ফেলার ক্ষমতা ওই ব্যাটার নেই। অন্য কেউ করেছে। মানুষ হয়ে থাকলে, মন্তবড় অভিনেতা ওই লোক।
ঠিক, বলল কিশোর। তবে সবই অনুমান। একটু থেমে বলল, নিজের চোখে না দেখলে, ভূতে ফোন করেছে এটা মোটেই বিশ্বাস করব না। আমি।
তা না হয় হল, অনিশ্চিত রবিনের গলা। ধরে নিলাম ভূতে করেনি ফোন। কিন্তু তোমাদের ওপর পাথর ফেলল কে?
ঠিক, রবিনের কথায় জোর পেল মুসা। পাথর ফেলল কে?
আপাতত ওটা নিয়ে ভাবছি না, বলল কিশোর। তবে আমার ধারণা, ভূত নয়। শুটকিও না! এর পেছনে অন্য কেউ রয়েছে।
কে? জানতে চাইল মুসা।
জানলে তো বলতামই। আরও কিছু ঘটনা না ঘটলে জানা যাবে না। হ্যারি প্রাইসের লোকটা যাক। কেন মিছে কথা বলল লোকটা? ঝোপ কাটছিল না, তবু কেন বলল কাটছিল? লেমোনেডের কথাই ধর। সাজিয়েই রেখেছিল। টেবিলে। ফ্রিজ থেকে বরফও বের কয়েক ন জানত, আমরা যাব। অবাক লাগছে না?
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা।
মাথা চুলকাল মুসা। বিড়বিড় করল, খালি প্যাঁচ। বাড়ছেই! সুরাহা হবার কোন লক্ষণই দেখছি না!
ঠিক এই সময় ঘরে এসে ঢুকলেন মেরিচাচী দাঁড়ালেন। এখন কেমন লাগছে রে?
ভাল, দায়সারা জবাব দিল কিশোর। তাদের আলোচনায় বাধা পড়েছে। চাইছে মেরিচাচী চলে যাক এখন।
গেলেন না চাচী। বিছানার পাশে বসে কিশোরের আহত জায়গায় হাত রাখলেন। ব্যথা লাগে এখনও?
না।
হেসে ফেললেন চাচী। আমাকে তাড়াতে চাইছিস, না?
না, ইয়ে…মানে… ধরা পড়ে গিয়ে আমতা আমরা করতে লাগল কিশোর।
একটা কথা জানাতে এসেছি, বললে চাচী। আরও আগেই বলতাম। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম। ইস্স্, কি ভাবনায়ই না ফেলে দিয়েছিলি! বাবা-মা হারা ছেলেটার জন্যে ভাবনার অন্ত নেই তাঁর।
চাচী, কি বলবে, বলে ফেল না? তাড়া দিল কিশোর।
গতকাল সকালে এক বুড়ি এসেছিল। তুই তখন ঘুমিয়েছিল। সে এক আজব বুড়ি!
আজব বুড়ি, সতর্ক হয়ে উঠল কিশোর।
চাচীর কথায় আগ্রহী হয়ে উঠছে মুসা আর রবিনও।
এক জিপসি বুড়ি।
জিপসি বুড়ি! পিঠ সোজা হয়ে গেছে মুসা আর রবিনের। কিশোরও বালিশে পিঠ রেখে আধশোয়া হল। ব্যথা ভুলে গেছে।
তারপর?
দরজায় টোকা দিল বুড়ি। খুললাম। ভেতরে ডাকব কি ডাকব। না ভাবছি, এই সময়ই তোর নাম বলল সে। পা মাচকানোর কথা বলল। ভবিষ্যদ্বাণী করলঃ সাবধান না হলে আরও বড় বিপদ হবে। তোর। এর আগে কখনও দেখিনি ওকে। তোর নাম জানল কি করে, পা মাচকানোর খবর পেল কোথায়, ঈশ্বরই জানে!
সাবধান হতে বলেছে এক জিপসি বুড়ি। একে অন্যের দিকে চাইছে তিন গোয়েন্দা।
ভেতরে ডাকলাম বুড়িকে, আবার বললেন মেরিচাচী। এল। বসল। ঝোলার ভেতর থেকে কয়েকটা তাস বের করল। বুঝলাম, তাসের ম্যাজিক জানে বুড়িটা। তাস চালাচালি করে লোকের ভবিষ্যৎ জানতে পারে। এসবে কোনদিনই বিশ্বাস নেই। আমার। কিন্তু বুড়িটা যেভাবে বলল, অবিশ্বাসও করতে পারলাম না। তিনবার তাস চালল সে তোর নাম করে। তিন বারে তিনটে কথা বললঃ টি সি থেকে দূরে থাকতে হবে তোকে। পা মাচকানোর পেছনে টি সি রয়েছে। এরপরও যদি টি সি-কে এড়িয়ে না চলিস, আরও বিপদ হবে তোর।
তুমি কিছু বললে না?
কি আর বলব? হেসে উড়িয়ে দিয়েছি বুড়ির কথা। একটু যেন ক্ষুন্ন হল সে। ঝোলার ভেতরে তাসগুলো ভরে উঠে চলে গেল। কিছু একটা দেখেছি। ওর চোখে, খটকা লেগেছে মনে। …কিশোর, বাপ, একটু সাবধানে থাকিস তুই কি জানি, কিছু ঘটেও যেতে পারে। উঠলেন চাচী। তোরা কথা বল। আমি যাই। কাজ পড়ে আছে ওদিকে।
বেরিয়ে গেলেন মেরি চাচী। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। নিচে নেমে যাচ্ছেন তিনি।
চাচী বেরিয়ে যাবার পরও অনেকক্ষণ কোন কথা বলতে পারল না। তিন গোয়েন্দা। একে অন্যের দিকে চেয়ে রইল।