এগিয়ে আসছে টেরিয়ার। হাতে একটা জুতোর বাক্স। গাড়িতে বসা দুই সঙ্গীর চোখ তার ওপর। তিন গোয়েন্দাও দেখছে তাকে। কাছাকাছি এসেই পকেটে হাত ঢোকাল সে। ঝটকা দিয়ে বের করে। আনল আবার। হাতে একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস। রাশেদ চাচা আর দুই বাভারিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাল। পাইপ অর্গানটা নিয়ে ব্যস্ত তারা। এখান থেকে তার কথা শুনতে পাবে না। বিশেষ কায়দায় ভুরু কুঁচকাল সে। গুরুগম্ভীর একটা ভাব ফুটিয়ে তুলল চেহারায়। ম্যাগনিফাইং গ্লাসের ভেতর দিয়ে পুরো ইয়ার্ডে চোখ বোলাল একবার। ভুল জায়গায় এসে পড়লাম না তো!
টেরিয়ারের অভিনয়ে খুব মজা পেল তার দুই সঙ্গী, হেসে উঠল হো হো করে।
কি চাই এখানে, শুটকি?
মুসার কথা যেন শুনতেই পেল না টেরিয়ার। ম্যাগনিফাইং গ্রাসের ভেতর দিয়ে তাকাল কিশোরের দিকে। অনেক কষ্টে যেন চিনতে পারল। গ্লাসটা আবার ভরে রাখল পকেটে। এই যে কিশোর হোমস, পৃথিবী বিখ্যাত গোয়েন্দা। দেখা করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। একটা কেস নিয়ে এসেছি আপনার কাছে, স্যার। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডও বিমূঢ় হয়ে গেছে, কোন সুরাহা করতে পারেনি। কেসটা। শেষ পর্যন্ত আপনার শরণাপন্ন হতে হল। নির্দয়ভাবে খুন করা হয়েছে বেচারাকে। আশা করি এই জটিল রহস্যের সমাধান করতে পারবেন। বাক্সটা বাড়িয়ে ধরল সে।
টেরিয়ারের বলার ভঙ্গিতে হেসে লুটোপুটি খেতে লাগল তার দুই বন্ধু।
বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে বাক্সের ভেতর থেকে। কি আছে, আন্দাজ করতে পারল তিন গোয়েন্দা। হাত বাড়িয়ে বাক্সটা নিল। কিশোর। ডালা খোলার আগে একবার চাইল টেরিয়ারের দিকে।
হাসছে টেরিয়ার। অপেক্ষা করছে।
ডালা খুলল কিশোর। নাকে এসে যেন বাড়ি মােরল পচা গন্ধ। বিরাট এক সাদা হঁদুর, পচে ফুলে ঢোল হয়ে আছে।
কি মনে হয়, মিস্টার হোমস? সামান্য সামনে বুকে এল টেরিয়ার। ভয়াবহ এই খুনের কিনারা করতে পারবেন? আসামীকে ধরতে পারলে বড় পুরস্কার পাবেন। পঞ্চাশটা স্ট্যাম্প।
হাসির রোল উঠেছে গাড়িতে।
আড়চোখে সেদিকে একবার চাইল কিশোর। চেহারায় কোন পরিবর্তন হল না। গম্ভীর চোখ মুখ, আস্তে করে মাথা ঝোঁকাল। গাড়িতে বসা টেরিয়ারের দুই বন্ধুকে শুনিয়ে জোরে জোরে বলল, আপনার মনের অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি, মিস্টার শুটকি। খুবই দুঃখ পেয়েছেন। পাবেনই তো? হাজার হোক, নিহত জীবটা আপনার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল।
হঠাৎ থেমে গেল হাসির শব্দ। সতর্ক হয়ে উঠেছে গাড়িতে বসা ছেলে দুটো। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে টেরিয়ারের।
বেচারার মৃত্যুর কারণ অনুমান করতে পারছি, আবার বলল কিশোর। বদহজম। খইল খেয়েছিল এক গরু বন্ধুর সঙ্গে, একই গামলায়। গরুটার নামের আদ্যাক্ষর দুটো জানি। টি ডি। ভুরিভোজনের পরই হয়তো টেরর ক্যাসলে গিয়েছিল, ভূতের তাড়া খেয়ে প্যাণ্ট নষ্ট করতে করতে ফিরেছে।
নিজেকে খুব চালাক মনে কর, না? হিসিয়ে উঠল টেরিয়ার।
বিশ্বাস হচ্ছে না? দাঁড়াও, দেখাচ্ছি, বলেই ঘুরল কিশোর। একছুটে গিয়ে ঢুকল ঘরে। কয়েক মুহূর্ত পরেই বেরিয়ে এল।
এই যে, আদ্যাক্ষর খোদাই করা আছে এটাতে, টর্চটা টেরিয়ারের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল কিশোর। আগে একটা এস থাকলেই তোমার পুরো নাম হয়ে যেত। শুটকি টেরিয়ার ডয়েল।
হা হা করে হেসে উঠল মুসা। টািৰ্চটা শুটকিকে দিয়েই দাও না, কিশোর। একটা এস বসিয়ে নেবে।
থাবা মেরে কিশোরের হাত থেকে টৰ্চটা নিয়ে নিল টেরিয়ার। ঘুরে দাঁড়াল। গটমট করে হেঁটে চলে গেল গাড়ির কাছে। ড্রাইভিং সিটে উঠে বসে ফিরে চাইল। আহাহা, তিন গোয়েন্দা! শুনলেই হাসি পায়! শহরের ছেলেদের কারই জানতে বাকি নেই ভড়ঙের কথা। কেউ হাসি ঠেকাতে পারছে না।
জবাবে তালে তালে হাততালি দিতে লাগল কিশোর, মুসা আর রবিন।
আরও খেপে গেল টেরিয়ার। রাগে ভাষা হারিয়ে ফেলল। ঝাল। মেটাল গাড়িটার ওপর। বন বন করে ঘুরে উঠল স্টিয়ারিং।। কৰ্কশ আর্তনাদ উঠল টায়ারের। ঘুরে গেল নীল স্পোর্টস কারের নাক। জোর এক ঝাঁকুনি খেয়েই লাফ দিল সামনে। তীব্ৰ গতিতে ছুটে চলে গেল।
লাইব্রেরিতে আমার কার্ড ও-ব্যাটাই চুরি করেছে, কথা বলল রবিন। আমরা কাজে নেমেছি, জেনে গেছে ব্যাটা।
জানুক, লোককে জানাতেই তো চাই আমরা, বলল কিশোর। তবে, কাজটা আরও জরুরি হয়ে পড়ল আমাদের জন্যে। প্রথম কেসে ফেল করা চলবে না কিছুতেই।
পেছনে ফিরে চাইল একবার কিশোর। পাইপ অর্গান নিয়ে ব্যস্ত এখন রাশেদ চাচা, বোরিস আর রোভার। চাচীকে দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চয় টেবিলে খাবার সাজাতে গেছেন।
একটু সময় পাওয়া গেল, বলল কিশোর। চল, লাঞ্চের ডাক পড়ার আগেই মীটিং শেষ করে ফেলি।
দুই সুড়ঙ্গের দিকে এগিয়ে চলল তিন গোয়েন্দা।
তাড়াহুড়ো করে এগোতে গিয়ে অঘটন ঘটাল কিশোর। মাটিতে পড়ে থাকা একটা আলগা পাইপে পা দিয়ে বসল। গড়িয়ে চলে গেল পাইপ। তাল সামলাতে না পেরে বেকায়দা ভঙ্গিতে পড়ে গেল সে।
তাড়াতাড়ি দুদিক থেকে গোয়েন্দা প্রধানকে তুলে বসাল রবিন আর মুসা।
প্ৰচণ্ড ব্যথায় দাঁতে দাঁত চেপে আছে কিশোর। আমার পা! …ভেঙেই গেছে বোধহয়। গুঙিয়ে উঠল সে। উফফ, এই যে, এখানে!
দেখা গেল, ইতিমধ্যেই ফুলে উঠতে শুরু করেছে ডান পায়ের গোড়ালির ওপরের গাঁট।