হ্যাঁ, স্যার, বলল কিশোর। বুঝতে পারছি। আমাকে নিয়ে কেউ হাসােহাসি করলে, আমারও খুব খারাপ লাগে।
হাপ্তার পর হস্তা পেরিয়ে গেল, ফিসফিসিয়ে বলে চলল লোকটা। ঘর থেকে বেরোয় না জন। একে একে বিদায় করে দিল। চাকর-বাকিরদের। কি আর করব? ওর বাজার-সদাই আমিই করে। দিতে লাগলাম। চারদিক থেকে খবর আসছে তখন। ছবিটার ব্যাপারে। যেখানেই দেখানো হচ্ছে, হাসাহাসি করছে লোকে। অনেক বোঝালাম তাকে। লোকের কথায় কান দিতে মানা করলাম। কিন্তু কোন কাজ হল না, থামল প্রাইস।
অপেক্ষা করে রইল দুই গোয়েন্দা।
তারপর একদিন, আমাকে ডেকে, ছবিটার যে কয়টা প্রিন্ট আছে সব জোগাড় করে নিয়ে আসতে বলল জন। কেউ যেন আর দেখতে না পারে ছবিটা, কেউ যেন আর হাসাহাসি না করতে পারে। বেরোলাম। প্রচুর খরচ-খরচা করে কিনে নিয়ে এলাম সবকটা প্রিন্ট। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মারতেই যেন এই সময় এল ব্যাংকের সমন। অনেক টাকা ধার হয়ে গেছে। শোধ না দিতে পারলে ক্যাসলটা দখল করে নেবে ব্যাংক। টাকা-পয়সা জামাত না জন। এক হাতে আয় করত। আরেক হাতে খরচ করত। ভেবেছিল, বয়েস কম, খ্যাতি হয়েছে। অনেক সময় আছে টাকা জমানোর, বলে যাচ্ছে প্রাইস। একদিন, ক্যাসলের মেইন রুমে বসে আছি। দুজনে। আলোচনা হচ্ছে বাড়িটা রাখতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে। ও বলল, মরে গিয়ে হলেও বাড়িটা দখলে রাখবে সে। তার দেহ পচেগলে শেষ হয়ে যায় যাবে, কিন্তু প্ৰেতাত্মা বেরোবে না। ক্যাসল ছেড়ে।
চুপ করল প্রাইস। কালো কাচের ওপাশে আবছা চোখের দৃষ্টিতে নির্লিপ্ততা।
কেঁপে উঠল একবার মুসা, ইয়াল্লা! মরে তাহলে সত্যি সত্যিই ভূত হওয়ার ইচ্ছে ছিল ফিলবির!
তাই তো মনে হচ্ছে, বলল কিশোর। আচ্ছা, মিস্টার প্রাইস, ফিলবি তো খুব ভদ্র ছিল। এমন একজন লোকের প্ৰেতাত্মাও নিশ্চয় ভদ্রই হবে। লোককে সে ভয় দেখাচ্ছে, তাড়িয়ে দিচ্ছে ক্যাসল থেকে, বিশ্বাস হতে চায় না।
ঠিকই, একমত হল প্রাইস। আমার মনে হয় জন না, লোককে তাড়াচ্ছে অন্য প্ৰেতাত্মা। ওগুলো অনেক বেশি পাজী।
অন্য…! ঢোক গিলিল মুসা। বেশি পাজী!
হাঁ। বুঝিয়ে বলছি। তোমরা জান, পাহাড়ের তলায় সাগরের ধারে পাওয়া গেছে জন ফিলবির গাড়ি?
মাথা ঝোঁকাল দুই কিশোর।
তাহলে এ-ও জান, একটা নোট রেখে গেছে জন। লিখে গেছে, চিরকালের জন্য অভিশপ্ত করে রেখেছে টেরর ক্যাসলকে?
আবার মাথা ঝোঁকাল দুই গোয়েন্দা। দুজনেই চেয়ে আছে প্রাইসের মুখের দিকে।
পুলিশের ধারণা, বলল প্রাইস। ইচ্ছে করেই পাহাড়ের ওপর থেকে গাড়ি নিয়ে পড়েছে জন। আমিও তাদের সঙ্গে একমত। সেই যে সেদিন কথা হয়েছিল ক্যাসলে, তারপর আর কোনদিন ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। আমাকে প্ৰতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছে জন, কোন দিন যেন আর টেরর ক্যাসলে না। ঢুকি। হ্যাঁ, কোন কথা থেকে যেন…
অন্য প্ৰেতাত্মার কথা বলছিলেন, মনে করিয়ে দিল কিশোর। খুব খারাপ।
হ্যাঁ, খারাপ প্ৰেতাত্মা, বলল প্রাইস। সারা দুনিয়ার বিখ্যাত সব ভূতুড়ে বাড়ি থেকে মালমশলা জোগাড় করে এনে দুর্গ সাজিয়েছে জন। জাপানের এক ভূতুড়ে মন্দির থেকে এনেছে কাঠ। ভূমিকম্পে ধসে পড়েছিল ওই মন্দির। ভেতরে যে কয়জন লোক ছিল, সব মারা গিয়েছিল ইট কাঠ চাপা পড়ে। ইংল্যান্ডের এক ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাসাদ থেকে এসেছে কিছু লোহার বরগা। ওই বরগীর একটাতে দড়ি বেঁধে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল এক সুন্দরী মেয়ে। ধসে পড়ার আগে নাকি প্রায় রাতেই মেয়েটার প্ৰেতাত্মা ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত প্রাসাদের ছাতে। রাইন নদীর ধারের এক পোড়ো দুর্গের পাথর কিনে এনে লাগানো হয়েছে টেরর ক্যাসলে। ওই দুর্গের ভাঁড়ারে নাকি আটকে রাখা হয়েছিল এক পাগলা বাদককে। আটকে থেকে না খেয়ে মরে গেছে লোকটা। তারপর থেকেই গভীর রাতে দুর্গের ভেতর থেকে ভেসে আসত মিষ্টি হালকা বাজনা।
খাইছে!। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসার। দেশ-বিদেশের কুখ্যাত সব ভুতকে এনে টেরর ক্যাসলে তুলেছে জন। ওরা তো লোককে ভয় দেখিয়ে তাড়াবেই। গলা টিপে আজও মারেনি কাউকে, এটাই আশ্চর্য!
কেউ গিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে হয়ত মারবে, ফিসফিসিয়ে বলল প্রাইস। তবে আমি যা জানি, কেউ যায় না টেরর ক্যাসলের ধারে কাছে। চোর-ডাকাত ভবঘুরেরা পর্যন্ত এড়িয়ে চলে। মাসে একবার করে। ওদিক থেকে ঘুরে আসি আমি। পুরানো বন্ধুকে মনে রাখি। কোন বারই কাউকে ক্যাসলের কাছেপিঠে দেখিনি।
ওরা ক্যাসলে গিয়েছিল, বলল না কিশোর। আচ্ছা, অনেক কাহিনীই তো শোনা যায় ক্যাসলের ভূত সম্পর্কে। গভীর রাতে নাকি পাইপ অর্গান বাজে, নীল ভূত দেখা যায়। কতখানি সত্যি, বলতে পারেন?
আমিও শুনেছি ওসব কিচ্ছা। বাজনা শুনিনি কখনও, কোন ভূতকে দেখিনি। তবে জন বলত, প্রোজেকশন রুম থেকে গভীর রাতে নাকি ভেসে এসেছে বাজনা। কয়েকবার এই ঘটনা ঘটে যাবার পর একদিন অর্গানের ইলেকট্রিক কানেকশন কেটে রাখল। বন্ধ করে। রাখল প্রোজেকশন রুমের দরজা। কিন্তু লাভ হল না কিছু। সে-রাতেও ঠিক শোনা গেল সেই বাজনা।
ঢোক গিলিল মুসা।
চশমা খুলে নিল প্রাইস। দুই কিশোরের দিকে চেয়ে চোখ মিটমিট করছে। টেরির ক্যাসলে ভূত আছে কি নেই, জানি না। আমি, ফিসফিস করে বলল সে। তবে, আমাকে ঢুকতে বললে ঢুকব না। রাতে ক্যাসলের দরজার ওপাশেই যাব না। লক্ষ-কোটি টাকা দিলেও না।
১০
কিশোর! ডাক শোনা গেল মেরিচাচীর। এদিকে আয়। রডগুলো বেড়ার ধার ঘেঁষে তুলে রাখবি? মুসা.রবিন, তোমরা একটু সাহায্য কর বন্ধুকে।