ইয়াল্লা! এখনও গা কাঁপছে মুসারী। গায়ে পড়লে টেরর ক্যাসলের ভূতের সংখ্যা আরও দুটো বাড়তা
দেখ দেখা মুসার হাত খামচে ধরে টান দিল কিশোর। ঢালের গায়ে ওই যে ঝোপটা, কে যেন নড়াচড়া করছে। ওর ভেতরো নিশ্চয় ব্যাটা শুটিকো। অন্য ধার দিয়ে ঘুরে আমাদের অলক্ষ্যে গিয়ে চড়েছে ওখানে। পাথর গড়িয়ে দিয়েছে আমাদের দিকে।
এবার আর ব্যাটাকে ছোড়ছি না। আমি, শার্টের হাতা গুটাতে লাগল মুসা। শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।
খাড়াই বেয়ে তাড়াহুড়ো করে উঠতে শুরু করল দুই গোয়েন্দা। আলগা পাথর আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জন্মে থাকা কাঁটা ঝোপ বাধা সৃষ্টি করছে। খানিকটা ওঠার পরেই দেখল। ওরা, দ্রুত সরে যাচ্ছে একটা মূর্তি, দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল একপাশে।
আরও দ্রুত ওঠার চেষ্টা করল। দুজনে। পাহাড়ের গা থেকে কানিসের মত বেরিয়ে থাকা বিরাট এক চ্যাপ্টা পাথরের কাছে এসে থমকে গেল। ওটা ডিঙানো সম্ভব না। ওখানেই দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল। দুজনে।
কানিসের মত পাথরটার একপাশে পাহাড়ের গায়ে বড়সড় একটা চৌকোণা গুহামুখ। গুহার নিচ থেকে টেনে সামনে বেরিয়ে আছে বড় আরেকটা চ্যাপ্টা পাথর, অনেকটা ঝোলা বারান্দার মত। আরাম করে বসা যাবে ওখানে। ওটার দিকে এগিয়ে চলল দুই বন্ধু।
প্রায় পৌঁছে গেছে বারান্দার কাছে, এই সময় মাথার ওপরে চাপা গভীর একটা শব্দ হল। তারপরই পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকির আওয়াজ। চমকে আবার চোখ তুলে চাইল দুজনেই। এবার আর একটা নয়, অসংখ্য পাথরের ধস নেমে আসছে।
বরফের মত জমে গেল যেন মুসা। কি করবে। বুঝে উঠতে পারল না।
কিন্তু বুদ্ধি হারাল না কিশোর। এক মুহূর্ত দ্বিধা করল। পরীক্ষণেই সঙ্গীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারল। ঝোলা বারান্দার ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল দুজনে। জোরে এক ধাক্কা দিয়ে মুসাকে গুহার ভেতরে ঠেলে দিল কিশোর। নিজেও গড়িয়ে চলে এল ভেতরে। দ্রুত গড়াতে গড়াতে গর্তের একেবারে শেষ সীমায় চলে এল দুজনে। ঠিক এই সময় প্রথম পাথরটা আঘাত হানল বারান্দায়। দেখতে দেখতে শুরু হয়ে গেল পাথরবৃষ্টি। ছোট, মাঝারি, বড়, সব রকমের, সব আকারের পাথর পড়ছে একনাগাড়ে।
বজ্রের গর্জন তুলে আছড়ে এসে বারান্দায় পড়ছে পাথর, কিছু গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে, কিছু যাচ্ছে আটকে, কিছু গড়িয়ে চলে আসছে ভেতরে। একটার পর একটা জমছে পাথর, দেয়াল উঠে যাচ্ছে গর্তের সামনের খোলা অংশে।
গর্তের শেষ মাথায় দেয়ালের গায়ে সেঁটে বসে রইল দুই বন্ধু। আলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তাদের চোখের সামনে থেকে, হারিয়ে যাচ্ছে আকাশ। কয়েক সেকেণ্ডেই পাহাড়ের ঢালে পাথরের কবরে আটকে গেল ওরা। জ্যান্ত কবর। আলো আর আকাশ পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে চোখের সামনে থেকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার।
৮
বাইরে ধীরে ধীরে কমে এল পাথর। ধসের গর্জন। স্তব্ধ হয়ে গেছে দুই বন্ধু। নিকষ। কালো অন্ধকার। গর্তের ভেতরে ছোট্ট পরিসর, বাতাসে। ভাসছে ধূলিকণা। দিম আটকে দিতে চাইছে।
কিশোরা কাশতে কাশতে বলল মুসা। ফাঁদে আটকে গেছি আমরা! আর বেরোতে পারব না! দম বন্ধ হয়ে মরব এবার!
নাকে রুমাল চাপা দাও, জলদি বলল কিশোর। শিগগিরই নেমে যাবে ধূলিকণা। অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে সঙ্গীর কাঁধ চেপে ধরল। সে। ভেব না, দম বন্ধ হয়ে মরব না। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এই গুহা। আমি দেখেছি, এক পাশের দেয়ালে বড় একটা ফাটল আছে। কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে জানি না। তবে ওটা দিয়ে বাতাস চলাচল করে। শুটিকোকে ধন্যবাদ। ওর সৌজন্যেই একটা টর্চ আছে এখন আমার পকেটে।
ঠিকই, শুটকোকে ধন্যবাদ, ব্যঙ্গ করল মুসা। ওর সৌজন্যেই এই কবরে আটকেছি। আমরা ইসস, বগাটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম। এখন। সরু ঘাড়টাই মটকে দিতাম!
কিন্তু ও-ই করেছে। কাজটা, কোন প্রমাণ নেই। পাথরের ধস কেন নেমেছে কিছুই জানি না। আমরা এখনও, বলতে বলতেই টর্চের বোতাম টিপে দিল কিশোর। গাঢ় অন্ধকার চিরে দিল তীব্র আলোর রশ্মি।
আলো ফেলে দেখল কিশোর। ফুট ছয়েক উঁচু গুহাটা, পাশ চার ফুট মত। এক পাশের দেয়ালে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নয় দশ ইঞ্চি চওড়া একটা ফাটল। বিরবির করে বাতাস আসছে ওপথে। কিন্তু ওদিক দিয়ে বেরোনো যাবে না।
বিরাট এক পাথর আটকে গেছে। গর্তের মুখে। ওটার আশপাশে ওপরে ছোট বড় আরও পাথর ঠেসে আটকেছে, তার ওপর জমেছে বালি আর মাটি।
হুমম। খুব সুন্দর ভাবেই পাথরের দেয়াল উঠেছে, যেন ভাল একটা কাজের কাজ হয়েছে এমনি ভঙ্গিতে বলল কিশোর।
এখনও বড় বড় কথা গেল না তোমারা মুসার গলায় ক্ষোভ। বলে ফেললেই হয় ভালমত আটকে গেছি। আমরা। আর বেরোতে পারব না।
সেটা বলতে যাব কেন? এখনও জানি না বের হতে পারব। কিনা। এস ঠেলা লাগাই। যদি নাড়াতে পারি…
গায়ের জোরে ঠেলা লাগাল দুজনে। এক চুল নড়ল না। পাথর। হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়ল। ওরা বিশ্রাম নিতে।
হ্যানসন নিশ্চয় আসবে। কেঁদেই ফেলবে যেন মুসা। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাবে না। আমাদের। শেষে পুলিশে খবর দেবে। পুলিশ আসবে, বয় স্কাউটরা আসবে, খোঁজাখুঁজি হবে প্রচুর। আমরা চোঁচালেও সে আওয়াজ বাইরে যাবে না। তারমানে আর কোন দিনই… চুপ করে গেল সে।
কিশোর শুনছে না কথা। মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতের টর্চের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে গুহার পেছন দিকটা। তীক্ষ্ণ চোখে সেদিকেই চেয়ে আছে সে।