ধীরে ধীরে কমে এল শই শই, দূর থেকে দূরে মিলিয়ে গেল গুঞ্জন।
কি থেকে দূরে থাকব? রিসিভারের দিকে চেয়ে ওটাকেই যেন প্রশ্ন করল। কিশোর। তারপর আস্তে করে নামিয়ে রাখল ক্ৰেডলে।
দীর্ঘ এক মুহূর্ত কেউ কোন কথা বলল না। তারপর হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াল মুসা। বাড়ি যেতে হচ্ছে আমাকে। এই মাত্ৰ মনে পড়ল, জরুরি একটা কাজ ফেলে এসেছি।
আমি যাব, রবিনও উঠল। আমিও যাব তোমার সঙ্গে।
আমারও যাওয়া দরকার। মেরিচাচী হয়ত ভাবছেন, উঠে দাঁড়াল কিশোরও।
হুড়োহুড়ি ঠেলাঠেলি করে বেরুতে গিয়ে একে অন্যের গায়ে ধাক্কা খেল ওরা। কে কার আগে বেরোবে সেই চেষ্টায় ব্যস্ত।
বাক্য পুরো করতে পারেনি। অদ্ভূত গলাটা। কিন্তু বুঝতে একটুও অসুবিধে হল না ছেলেদের, আসলে কি বলতে চেয়েছে। ওটা।
বলতে চেয়েছেঃ টেরর ক্যাসল থেকে দূরে থাকার!
৭
সত্যিই, একটা সমস্যায়ই পড়া গেল বলল কিশোর।
পরদিন বিকেলে হেডকোয়ার্টারে বসে আছে দুই গোয়েন্দা। কিশোর বসে আছে তার সুইভেল চেয়ারে। পোড়া ডেস্কের এপাশে বসেছে মুসা। রবিন গেছে। লাইব্রেরিতে।
সমস্যা আসলে দুটো, আবার বলল গোয়েন্দাপ্রধান।
বলছি, কি করে সমাধান করবে সমস্যার? বলল মুসা। খুব সহজ। রিসিভার তুলে ফোন কর মিস্টার ক্রিস্টোফারকে। বলে দাও, তাঁর জন্যে ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজে বের করতে পারব না। আমরা। জানাও, একটার কাছে গিয়েছিলাম কোনমতে প্ৰাণ বাঁচিয়ে ফিরেছি। আর একবার ওটার কাছে ঘেষতে চাই না।
মুসার পরামর্শের ধার দিয়েও গেল না কিশোর। আমাদের প্রথম সমস্যা, বলল সে, জানা, কে ফোন করেছিল গতরাতে।
কে নয়, শুধরে দিল মুসা। বল কিসে। ভূত, প্ৰেতাত্মা, ওয়্যারউলফ, ভ্যাম্পায়ার!
ওদের কেউই টেলিফোন ব্যবহার করতে জানে না, মনে করিয়ে দিল কিশোর।
সে-তো পুরানো আমলের কথা। আমরা আধুনিক হয়েছি, ভূতেদেরও আধুনিক হতে দোষ কি? গতরাতে যে-ই ফোন করে। থাকুক, গলাটা মোটেই মানুষের মত মনে হয়নি আমার।
চিন্তিত দেখাল গোয়েন্দাপ্রধানকে। ঠিকই বলছি। আমরা তিনজন আর হ্যানসন ছাড়া কোন মানুষের জানার কথা না, গতরাতে টেরার ক্যাসলে গিয়েছিলাম।
প্ৰেতাত্মাদের জানতে বাধা কোথায়? প্রশ্ন রাখল মুসা।
তা নেই, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায় দিল কিশোর। তবে, দুর্গটা সত্যিই ভূতুড়ে কিনা দেখে ছাড়ব। জন ফিলবির ব্যাপারে আরও অনেক বেশি জানতে হবে। আমাদের। টেরর ক্যাসলে কারও প্ৰেতাত্মা থেকে থাকলে, ওরই আছে।
হ্যাঁ, এটা একটা কথার মত কথা বলেছ খুশি হয়ে বলল মুসা। এবার বল দ্বিতীয় সমস্যাটা কি?
এমন কাউকে খুঁজে বের করা, যে জন ফিলবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছে।
কিন্তু সে-তো অনেক বছর আগের কথা! তেমন কাকে পাব আমরা?
অনেক আর কত? আত্মহত্যা না করলে এখনও বেঁচে থাকতে পারত জন ফিলবি। তার সঙ্গী-সাখীদের অনেকেই নিশ্চয় বেঁচে আছে এখনও। হলিউডে খোঁজ করলে তেমন কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবই আমরা।
তা হয়ত পেয়ে যাব।
আমার মনে হয়, ফিলবির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি বলতে পারবে তার ম্যানেজার, মিস্টার ফিসফিস।
মিস্টার ফিসফিসা প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এটা আবার কেমন নাম?
ডাক নাম। লোকে ওই নামেই ডাকত। আসল নাম হ্যারি প্রাইস। এই যে, ওর ছবি।
একটা কাগজ সহকারীর দিকে ঠেলে দিল গোয়েন্দাপ্রধান। একটা ছবি, তার নিচে কিছু লেখা। পুরানো একটা খবরের কাগজ থেকে ফটোকপি করে এনেছে। রবিন। ছবিতে দুজন লোক। একজন লম্বা, হালকা-পাতলা, পুরো মাথায় টাক। হাত মেলাচ্ছে তার চেয়ে সামান্য বেঁটে একটা লোকের সঙ্গে। মাথায় ঘন চুল। হাসিখুশি সুন্দর চেহারা। টাকমাথা লোকটার চোখ দেখলেই ভয় লাগে, গলায় একটা গভীর কাটা দাগ।
ইয়াল্লা! বিস্মিত মুসা। এই জন ফিলবির আসল চেহারা! খামোকাই ছদ্মবেশে অভিনয় করেছে। আসল চেহারা দেখালেই ভয় বেশি পেত লোকো এই চোখ আর গলার কাটা কলজে কাঁপিয়ে দেয়।
ভুল করছি। ও নয়, জন ফিলবি হল অন্য লোকটা। চেহারা সুন্দর, হাসিটাও আন্তরিক।
খাইছে আরও বিস্মিত হল মুসা। ওই লোকটা ফিলবি। ভূত-প্ৰেত। আর দানবের অভিনয় করতা এত সুন্দর মানুষটা।
হ্যাঁ। ব্যক্তিগত জীবনে নাকি খুবই লাজুক লোক ছিল ফিলবি। তাছাড়া তোতলাতো। বন্ধু-বান্ধব ছিল না বললেই চলে। কি করে জানি ফিসফিসের সঙ্গে ভাব হয়ে গিয়েছিল, শেষে ম্যানেজার নিযুক্ত করে ফেলল। লোকে আগে ঠিকাত ফিলবিকে। ফিসফিস ম্যানেজার হওয়ার পর আর পারেনি।
স্বাভাবিক। মন্তব্য করল মুসা। সামনে না করে কার বাপের সাধ্য। করলেই তো ছুরি বের করবে।
ওকে খুঁজে পেলে কাজ হত। অনেক কিছু জানতে পারতাম ফিলবির ব্যাপারে।
কি করে ওর খোঁজ পাওয়া যাবে, কিছু ভেবেছ?
টেলিফোন গাইড।
গাইডের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল দুই গোয়েন্দা। শেষ অবধি নামটা খুঁজে পেল মুসা।
এই যো চেঁচিয়ে উঠল মুসা। হ্যারি প্রাইস। আটশো বারো উইন্ডিং ভ্যালি রোড। ফোন করবে ওকে?
না, লোক জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ওর সঙ্গে দেখা করব। আমরা, টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল কিশোর। গাড়ি দরকার।
গাড়িটা পাওয়ায় খুব উপকার হয়েছে! কিশোরের দিকে চেয়ে বলল মুসা, আচ্ছা, তিরিশ দিন শেষ হয়ে গেলে কি করব, বল তো?
সে তখন দেখা যাবে। বুদ্ধি একটা ভেবে রেখেছি…হ্যালো। …কিশোর পাশা। …গাড়িটা চাই, এখুনি। রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। চল, উঠি।। চাচীকে বলতে হবে, রাতে দেরি করে খাব।