ওই কুকুরটার ছবি এঁকেছিলেন আপনার ভাই, জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ছবি নয়, মূর্তি। প্রতিকৃতি, বলল মিকো। কাঁচ আর স্ফটিকের বিশেষজ্ঞ বলা যেত তাকে। ওই জিনিস দিয়েই বানিয়েছিল।
অপূর্ব একটা শিল্পকর্ম ওই হাউণ্ডের মূর্তি, অনেকক্ষণ পর কথা বললেন অলিভার। আমার জন্যেই বানিয়েছিল। ওটা, জ্যাক। মাসখানেক আগে শেষ করেছিল কাজ। মূলার গ্যালারিতে একটা শো হওয়ার কথা ছিল তার শিল্পের। ওখানে দেখানর জন্যে রেখে দিয়েছিল মূর্তিটা। আমার কোন আপত্তি ছিল না। চুরি যাবে জানলে কি আর রাখতে দিতাম!
কাঁচের একটা কুকুর, না? বলল রবিন।
স্ফটিক, শুধরে দিলেন অলিভার। স্ফটিক এবং স্বর্ণ।
স্ফটিকও এক ধরনের কাঁচই, বলল মিকো। তবে স্পেশাল কাঁচ। অতি মিহি সিলিকার সঙ্গে লেড অক্সাইড মিশিয়ে তৈরি। সাধারণ কাঁচের চেয়ে ভারি, অনেক বেশি উজ্জ্বল। কাঁচ কিংবা স্ফটিক গলিয়ে নিয়ে কাজ করত আমার ভাই। বারবার গরম করে, বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে বানিয়ে নিত কোন একটা মূর্তি। ঘষেমেজে তারপর অ্যাসিডে চুবিয়ে মসৃণ করে নিত ওপরটা। এক অসামান্য সৃষ্টি ওই হাউণ্ড। সোনালি রঙে আঁকা চোখগুলো দেখে মনে হত একেবারে জ্যান্ত। দুই কশে ফেনাও তৈরি হয়েছে স্বর্ণ দিয়ে।
হয়ত আবার ফিরে পাওয়া যাবে ওটা, আশা প্রকাশ করল রবিন। ও ধরনের একটা জিনিস বিক্রি করা এত সহজ না।
কঠিনও না, বললেন অলিভার। এসব জিনিসের প্রতি যাদের লোভ আছে, যারা জ্যাক ইলিয়টকে চেনে, তারা ঠিকই কিনে নেবে।
পুরো ঘরটায় চোখ বোলাচ্ছে কিশোর। এখানেই কি কাজ করতেন তিনি? কাঁচ গোনর চুলা কোথায়?
এখানে না, জবাব দিল মিকো। পূর্ব লস অ্যাঞ্জেলেসে তার ওয়ার্কশপ। চব্বিশ ঘণ্টার বিশ ঘণ্টাই ওখানে কাটাত সে।
তার তৈরি আর কোন মূর্তি নেই। নিজের জন্যে কিছুই রাখেননি? নাকি ওয়ার্কশপে রয়ে গেছে?
বেশ কিছু সংগ্রহ তার আছে। নিজের আর অন্যান্য শিল্পীদের তৈরি। এই ঘরেই রাখত ওগুলো। জ্যাকের মৃত্যুর পর, একে একে সব জিনিসই সরিয়ে নিয়ে। গেছি আমি নিরাপদ জায়গায়। শুধু ওই একটা জিনিসই বাকি ছিল। ব্যাপারটা নিতান্তই দুর্ঘটনা।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অলিভার।
আমার ভাইয়ের গ্যালারি শো শেষ হয়েছে মাত্র দুই দিন আগে, বলল মিকো। অনেকের কাছেই মূর্তি বিক্রি কিরেছিল জ্যাক। ভাল ভাল কয়েকটা জিনিস আবার কয়েকদিনের জন্যে চেয়ে এনে শোতে পাঠিয়েছিল। একে একে ওগুলো আবার যার যার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমি গত বিকেলে হাউণ্ডটা নিয়ে ফিরেছি মিউজিয়ম থেকে। এ ঘরে ঢুকেছি অন্য কারও কোন জিনিস রয়ে গেল কিনা, দেখার জন্যে। আসলে, আগে গিয়ে হাউণ্ডটা দিয়ে আসা উচিত ছিল ফ্র্যাঙ্ককে, তাহলে আর এ অঘটন ঘটত না।—যাই হোক, এসে ঢুকলাম। বইগুলো তুলে তুলে দেখছি, তলায়। কিছু পড়ে আছে কিনা। কিছুই পেলাম না। পায়খানা চাপল এই সময়। গিয়ে ঢুকলাম বাথরুমে। বাথরুম থেকেই একটা খুটখাট আওয়াজ শুনেছি। বেড়াল টেড়াল হতে পারে ভেবে বেশি আগ্রহ করলাম না। বাথরুম থেকে বেরোতেই দেখি, একটা লোক ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে। চোর ছাড়া কিছু না, ধরেই নিলাম। রাস্তার মোড়েই ছিল পুলিশ। ছুটে এল। উত্তেজনায় তখন ভুলেই গিয়েছিলাম মূর্তিটার কথা! ভয়।
বড় বেশি খামখেয়ালি করেছ তুমি, মিকো, গোমড়ামুখে বললেন অলিভার। তোমাকে সকালেই তো ফোনে বলেছিলাম, মূর্তিটা নিয়ে আগে আমার ওখানে চলে। যেও।
আর লজ্জা দিও না, ফ্র্যাঙ্ক। অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে মিকো, ভুলই হয়ে গেছে!
আর কেউ জানত, গতকাল কুকুরটা নিয়ে আসা হবে গ্যালারি থেকে? অলিভারের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। পৌঁছে দেয়া হবে আপনার ওখানে?
মাথা নাড়লেন অলিভার আর মিকো, দুজনেই।
জিনিসটীর বীমা করা ছিল? জানতে চাইল রবিন।
ছিল, কিন্তু তাতে কি? জবাব দিলেন অলিভার। তাতে তো আর জিনিসটা ফিরে পাওয়া যাবে না, টাকা পাওয়া যাবে। টাকা আমি চাই না। শিল্পের ক্ষতিপূরণ টাকা দিয়ে হয় না।
আঙুলের ছাপ বা চোখের অন্য কোন চিহ্ন খুঁজেছে পুলিশ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
গতরাতের অর্ধেকটাই ওসব খুঁজে পার করেছে পুলিশ, জবাব দিল মিকো। সারা ঘরে পাউডার ছড়িয়ে আঙুলের ছাপ খুঁজেছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি ওরা। এখন ফাইল ঘাটাঘাটি করছে। ওস্তাদ সব শিল্প-চোরের ছাপের সঙ্গে এ-বাড়িতে পাওয়া আঙুলের ছাপগুলো মিলিয়ে দেখছে।
কোন সম্ভাবনাই বাদ রাখে না পুলিশ, প্রশংসা করল কিশোর। সব ওরাই করছে, হাউণ্ড চুরির ব্যাপারে আমরা আর কি করব?
ঠিকই, মাথা ঝোকালেন অলিভার। উঠে পড়লেন। মিকো ইলিয়টের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন ওখান থেকে। নিজের বাড়িতে যাবেন।
চত্বরেই দেখা গেল মিসেস ডেনভারকে। ফুলের ঝাড় থেকে মরা পাতা বাছছে। ওকে অগ্রাহ্য করলেন অলিভার। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলেন ওপরে। পেছনে তিন গোয়েন্দা।
বসার ঘরে এসে ঢুকল ওরা। দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে বসলেন অলিভার।
পকেট থেকে ছোট জারটা বের করল কিশোর। কি আছে ওতে, জানাল প্রথমে। বলল, আপনার ডেস্কের ড্রয়ারের হাতল মাখিয়ে রাখব। তারপর বেরিয়ে যাব আমরা সবাই। কেউ ড্রয়ার খোলার জন্যে হাতল ধরলেই হাতে কালো দাগ পড়ে যাবে তার।
সেজন্যে বেরিয়ে যাবার দরকার নেই, বললেন অলিভার। আমি থাকলেও ঘরে ঢোকে সে। বন্ধ দরজা এমনকি দেয়ালও তার কাছে কোন বাধা নয়। ওগুলো গলেই চলে আসে স্বচ্ছন্দে। ড্রয়ারের সামান্য কাঠ ঠেকাতে পারবে না তাকে। হাতলে হাত দেয়ার দরকারই পড়বে না।