ওই যে, মিস্টার জন নেবার, ডিরেক্টর, বললেন মুসার বাবা। গতকাল এসে পৌঁছেছেন ফিলাডেলফিয়া থেকে। জরুরি কাজ সেরে আজই ফিরে যাবেন আবার।
হর্ন-রিমি চশমা পরা একজন লোক এগিয়ে আসছেন। বয়েস চল্লিশের কাছাকাছি। পেছনে তিনজন লোক। একজনের চুল ধূসর। সে গোয়েন্দা। আরেকজনের চুল সোনালি, নাবিকদের মত ছোট ছোট করে। ছাঁটা। যুবক। জোসেফ গ্র্যাহাম। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী এক লোক। চওড়া বুকের ছাতি। বাঁ হাতটা বুলছে বেকায়দা ভঙ্গিতে, বোঝাই যায়। অকেজো। কোমরে বুলছে রিভলভার। জিম রিভান, গার্ড।
আমাদের ক্যাম্প, তাঁবুগুলো দেখিয়ে বললেন মিস্টার আমান। বার্জে করে আনা হয়েছে ভারি মালপত্র। আমরা এখন লোক কম। কয়েকদিন পরে শুটিঙের কাজ শুরু হলেই আসবে। আরও অনেকে। আসবে দামি যন্ত্রপাতি। তখন আর ওই তাঁবুতে কুলাবে না। আরও কয়েকটা ট্রেলার দরকার পড়বে।
কাছে এসে গেলেন পরিচালক।
সরি, মিস্টার নেবার, বললেন রাফাত আমান, দেরিই হয়ে গেল।
না না, ঠিক আছে, হাত তুললেন পরিচালক। ছেলেদের দিকে একবার তাকালেন। আবার ফিরলেন মিস্টার আমানের দিকে। কিন্তু এখানকার অবস্থা তো বিশেষ সুবিধের মনে হচ্ছে না। সবই বলেছে। পিটার। আর হস্তখানেকের ভেতর নাগরদোলাটা ঠিক না করা গেলে, স্কেলিটন আইল্যান্ডের আশা বাদই দেব। ক্যালিফোনিয়ায় ফিরে গিয়ে স্টুডিওতেই একটা পার্ক সাজিয়ে নেব। নাগরদোলা আনা যাবে ভাড়া করে। তবে এখানে করতে পারলেই ভাল হত। সবকিছু আসল। তাছাড়া দ্বীপের দৃশ্য, উপসাগরের দৃশ্য, খুবই চমৎকার।
আশা করছি, ঠিক করে ফেলতে পারব, বললেন মিস্টার আমান। কাঠমিস্ত্রিকে খবর দিয়ে পাঠিয়েছি।
তা পাঠিয়েছেন, কিন্তু আসবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে, গম্ভীর গলায় বললেন পরিচালক। সারা শহর জেনে গেছে, গতরাতে ভূত দেখা গিয়েছে। নাগরদোলা ঘুরেছে।
ভূত ভূত ভূত! মুঠো হয়ে গেল মিস্টার আমানের হাত। চেহারা কঠোর। ওই ভূতের শেষ দেখে ছাড়ব আমি।
পায়ে পায়ে এসে পরিচালকের পেছনে দাঁড়িয়েছে জিম রিভান। আস্তে করে কেশে উঠল। মাফ করবেন, স্যার, গতরাতের ভূতটা বোধহয় আমিই।
৫
গত রাতে, খুলে বলল সব জিম, একা ছিলাম। আমি দ্বীপে। মিস্টার আমানের দিকে চেয়ে বলল, আপনারা সব চলে গেলেন ছেলেদেরকে খুঁজতে। পাহারা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ কানো এল মোটরবোটের শব্দ। চোরটোর এল মনে করে দেখতে চললাম। পার্কের কাছ দিয়ে চলেছি, হঠাৎ মনে হল নাগরদোলাটার কাছে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। এগোলাম। দৌড়ে চলে গেল একটা মূর্তি। তাড়া করলাম, কিন্তু ধরতে পারলাম না। কোথায় জানি লুকিয়ে পড়ল। অবাক হলাম! ব্যাটা নাগরদোলার কাছে কি করছিল? নতুন বসানো মোটরটা চুরি করতে আসেনি তো? পরীক্ষা করে দেখলাম মোটরটা। দুটো স্কু খোলা। হ্যাঁ মোটর চুরি করতেই এসেছিল। আবার স্কু টাইট দিয়ে সব ঠিক আছে কিনা দেখার জন্যে সুইচ টিপলাম। চালু হয়ে গেল মোটর, আলো জ্বলে উঠল, ঘুরতে লাগল। নাগরদোলা। ঠিক আছে সব। আবার অফ করে দিলাম মোটর। এটাই দেখেছিল লোকে।
কিন্তু ভূত বলে উঠলেন মিস্টার আমান। সাদা পোশাক পরা ভূত দেখেছে লোকে। এর কি ব্যাখ্যা?
রেনকোট পরেছিলাম, স্যার, বলল, গার্ড। হলুদ রঙের। হুডও ছিল মাথায়। দূর থেকে অন্ধকারে সাদা ধরে নিয়েছে লোকে।
হুঁ। মাথা ঝোঁকালেন মুসার বাবা। বুঝেছি। কিন্তু একটা কাজ ভুল হয়ে গেছে, জিম। সকালেই শহরে যাওয়া উচিত ছিল, তোমার। তুমিই গতরাতে নাগরদোলা ঘুরিয়েছ, জানিয়ে এলে ভাল করতে।
ঠিকই বলেছেন, স্যার, মাথা নিচু করে বলল জিম। ভুলই হয়ে গেছে।
এক কাজ কর, বললেন মিস্টার আমান। আরও দুজন গার্ড নিয়ে এসো ফিশিংপোর্টে গিয়ে। বুঝতে পারছি, একা কুলাতে পারবে না। চোর আবার আসবে। কয়েকজন যদি আসে, একা পারবে না। ওদের সঙ্গে। হ্যাঁ, জেলেফেলেদের কাউকে এনে না। ওগুলোকে বিশ্বাস নেই। নিজেরাই চুরি করে বসতে পারে। ভাল লোক আনবে।
চেষ্টা করে দেখব, স্যার।
চোরের ওপর চোখ রাখার জন্যে এনেছিলাম ছেলেদেরকে, পরিচালককে বললেন মুসার বাবা। কিন্তু হল না। সারা শহর জেনে গেছে, ওরা গোয়েন্দা। কি করে জানল, বুঝতে পারছি না।
মনে হয় আমি পারছি, স্যার, বলল জিম। ছোট্ট শহর ফিশিংপোর্ট। ঘটনা খুব বেশি ঘটে না। ওখানে। ছোটখাট কিছু ঘটলেই সেটা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। আপনি আর মিস্টার নেবার ফোনে আলাপ করেছেন। প্ৰযোজকের সঙ্গে। শুনেছে অপারেটর। ওই মেয়েগুলো কেমন হয়, জানেনই তো! কোন কথাই পেটে রাখতে পারে না। আর এত বড় একটা খবর, চুরি হচ্ছে সিনেমা কোম্পানির জিনিসপত্র। হলিউড থেকে গোয়েন্দা আসছে। তদন্ত করতে। কি করে চেপে রাখবে? আপনার ফোন ছেড়েছেন একদিকে, অন্যদিকে রঙ চড়িয়ে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে খবর পরিবেশন সারা হয়ে গেছে অপারেটরদের। দেখতে দেখতে ছড়িয়ে পড়েছে মুখরোচক খবর।
প্ৰায় গুঙিয়ে উঠলেন চীফ টেকনিশিয়ান। এসব হতচ্ছাড়া এলাকায় কাজ করাই মুশকিল! শেষ পর্যন্ত হলিউডেই বুঝি ফিরে যেতে হবে!
থাকতে পারলেই ভাল হত, রাফাত, বললেন পরিচালক। চেষ্টা করে দেখুন, নাগরদোলাটা ঠিক করতে পারেন কিনা। আমাকে এখুনি ফিরে যেতে হচ্ছে। এদিকটা সামলান, যেভাবে পারেন। জোসেফ, প্লীজ ফিশিংপোটে পৌঁছে দেবে আমাকে?