চেয়ারে বসা দ্বিতীয় লোকটির ওপর চোখ মুসার।
পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, বললেন মিস্টার আমান। ইনি মিস্টার হোভারসন। এখানকার পুলিশ-চীফ।
পরিচয়ের পালা শেষ হল। চেয়ারে এসে বসল। তিন গোয়েন্দা। নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে জানাল তাদের কাহিনী।
পাইপ দাঁতে কামড়ে ধরে চুপচাপ সব শুনলেন হোভারসন। হান্টের কথা আসতেই হাত তুললেন। হান্টা চেহারা কেমন?
জানাল ছেলেরা।
হুমম। চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন পুলিশ-চীফ। হান্ট গিল্ডার মনে হচ্ছে!
চেনেন নাকি? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার আমান।
ভালমত। কয়েকবার জেল খেটেছে। টাকার জন্যে পারে না, এমন কোন কাজ নেই। ধরতে পারলে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতাম!
আমারও কয়েকটা প্রশ্ন ছিল, গম্ভীর হয়ে বললেন মিস্টার আমান। জিজ্ঞেস করতাম, কি করে জানল, ছেলেরা আসছে? কি করে জানল, ওরা গোয়েন্দা? আর গতরাতে কেন নির্জন দ্বীপে ফেলে রেখে এল ওদের? ভাগ্যিস, পাপু খুঁজে পেয়েছিল! নইলে জানতেই পারতাম না আমরা!
ঠিক, সায় দিলেন চীফ। প্লেন থেকে নেমেছে ওরা, শুধু এটুকুই জেনেছিলাম। এরপর কি হয়েছিল, কিছুই বুঝতে পারিনি। রোড ব্যারিকেন্ড দিয়ে গাড়ি থামিয়ে কত লোককে যে জিজ্ঞেস করেছিলাম…।
পাপু কি করে জানল, তোমরা দ্য হ্যান্ডে আছ? মুসার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার আমান। কি বলেছে?
মুসা জানাল, একবার জিজ্ঞেস করেছিল, উত্তরটা এড়িয়ে গেছে পাপালো। পরে আর জিজ্ঞেস করার কথা মনে ছিল না। তারপর উঠল ভূতের কথা।
ভূত দেখেছিলো ভুরু কোঁচকালেন মিস্টার আমান। অসম্ভব! ঝড়ের রাতে নাগরদোলা চড়তে আসে। ভূত, এটা এ এলাকার একটা গুজব।
গুজবই বা বলি কি করে? বললেন হোভারসন। গত দুবছরে অনেকবার দেখা গেছে। ওই ভূত। ঝড়ের রাতে। জেলেরা দেখেছে। স্কেলিটন আইল্যান্ডের ধারে কাছে যেতে চায় না। এখন আর লোকে। থামলেন চীফ। হাসলেন। বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার কথা? বেরিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখুন লোককে। গতরাতেও দেখা গেছে ভূত, খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে। সারা গাঁয়ে। অনেকেই শুনেছে নাগরদোলা ঘোরার শব্দ। আলো দেখেছে স্পাইগ্লাস লাগানো টেলিস্কোপ দিয়ে, কেউ কেউ ভূতকেও দেখেছে। নাগরদোলার একটা ঘোড়ায় চেপে বসেছিল নাকি একটা সাদা মূর্তি। এই শেষ কথাটা অবশ্য বিশ্বাস করিনি। আমি…
কুসংস্কারে খুব বেশি বিশ্বাসী এ গাঁয়ের লোক, বললেন মিস্টার আমান। মাথা দোলালেন। বুঝতে পারছি, আজ আর কেউ যাবে না দ্বীপে কাজ করতে। বিপদেই পড়ে গেলাম দেখছি!
আগামীকালও কাউকে নিতে পারবেন বলে মনে হয় না, বললেন। হোভারসন। তো, মিস্টার আমান, আমি উঠি।। দেখি, হান্টকে ধরতে পারি। কিনা। কিন্তু একটা প্রশ্ন বেশি খচখচ করছে মনে, পাপু কি করে। জানল ছেলেরা দ্য হ্যান্ডে আছে?
সন্দেহের কথা? বললেন মিস্টার আমান। আমার কাছে চাকরির জন্যে এসেছিল একদিন। এখানকার লোকে ভাল চোখে দেখে না। ছেলেটাকে। ও নাকি চোর। এটা জেনে কাজ দিইনি। আমাদের জিনিসপত্র হয়ত ওই চুরি করে, কে জানে!
না, বাবা, জোরে মাথা নাড়ল মুসা, পাপু চোর না! গতরাতে অনেক কথা বলেছি। ওকে ভাল ছেলে বলেই মনে হল। অসুস্থ বাপের দেখাশোনা করে। সময় পেলেই উপসাগরে বেরিয়ে পড়ে নৌকা নিয়ে। মোহর খুঁজে বেড়ায়। না, পাপু খারাপ ছেলে না।
মুসা ঠিকই বলছে, সায় দিলেন পুলিশ-চীফ। ছেলেটাকে দেখতে পারে না লোকে, সেটা অন্য কারণে। এখানকার লোক বিদেশী পছন্দ করে না। ওদের ধারণা, যত কুকাজ, সব বিদেশীরা করে।
যা-ই বলুন, ছেলেটাকে সন্দেহ করি আমি, বললেন মিস্টার আমান। অসুস্থ বাপকে খাওয়ানোর জন্যেই হয়ত চুরি করে। একটা সৎ কাজ করতে গিয়ে আরেকটা অসৎ কাজের সাহায্য নেয়াকে ভাল বলা যায় না। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ছেলেরা, এসো যাই। এতক্ষণে হয়ত দ্বীপে গিয়ে বসে আছেন মিস্টার নেবার। চীফ, পরে আবার দেখা করব। আপনার সঙ্গে। আশা করি, হান্টকে ধরে জেলে পুরতে পারবেন।
কয়েক মিনিট পর। দ্রুতগতি একটা স্পীডবোটে বসে আছে তিন গোয়েন্দা। কঙ্কাল দ্বীপের দিকে ছুটে চলেছে বোট। ফিশিংপোর্টকে গ্রাম বলা হয়, আসলে ছোটখাটো শহর ওটা। ঘুরে দেখার ইচ্ছে ছিল ওদের, কিন্তু সময় মেলেনি।
রাতের বেলা অন্ধকারে কিছুই দেখেনি ছেলেরা। এখন দেখল, অসংখ্য ডক আর জেটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এদিক ওদিক। সেই তুলনায় নৌকা-জাহাজ অনেক কম। বুঝতে পারল, ওগুলো সব চলে গেছে উপসাগরের দক্ষিণে। ফিশিংপোটের সীমানা খুব বেশি বড় না। লোকসংখ্যা আগে অনেক ছিল, ইদানীং নাকি কমে গেছে। ব্যবসা ভাল না, থেকে কি করবে। লোকে?
কৌতূহলী চোখে কঙ্কাল দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। মাইলখানেক দূরে আছে এখনও। প্রচুর গাছপালা দ্বীপে। উত্তরপ্রান্তে একটা ছোট পাহাড়।
কঙ্কাল দ্বীপের দক্ষিণে একটা পুরানো জেটির গায়ে এসে ভিড়ল বোট। পাশেই খুঁটিতে বাঁধা আরেকটা মোটরবোট। একপাশ থেকে বুলিছে বিশেষ সিঁড়ি। স্কুবা ডাইভিঙের সময় খুব কাজে লাগে।
জেটির ধার থেকে পথ চলে গেছে। আগে আগে চললেন মিস্টার আমান। পেছনে তিন কিশোর। শিগগিরই একটা খোলা জায়গায় এসে পৌঁছুল ওরা। ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হয়ে জায়গাটা। একপাশে দুটো ট্রেলার দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় কয়েকটা তাঁবু খাটানো হয়েছে মাঝখানে।