কি কৌশল? জানতে চাইলেন পরিচালক।
আমরা যাব, কথাটা ছড়িয়ে পড়ল শহরে। জেনে গেল ডিক আর বাড। বুঝল, হান্টকে সরানোর এই সুযোগ। আমাদেরকে কিডন্যাপ করে। দ্য হ্যান্ডে রেখে আসতে ওকে পাঠাল ওরা। নিশ্চয় অনেক টাকা পেয়েছে, বোকার মত কাজটা করে বসল। হান্ট। ফিরে এসে সব কথা জানালাম আমরা পুলিশকে। পিছু লাগল পুলিশ। শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হল হান্ট। থামল কিশোর। তারপর আবার বলে চলল, হান্ট চলে গেল। সিনেমা কোম্পানি থেকেই গেল দ্বীপে। চুরি বন্ধ করা চলবে না। জিমকে ধরল দুই ভাই। সুন্দর সুযোগ। কোম্পানি একজন গার্ড চায়। জিম হলে খুব ভাল হবে। নিজেই চাকরির দরখাস্ত নিয়ে গেল জিম। হয়ে গেল চাকরি। ঘরের ইদুর বেড়া কাটতে লাগল। দ্বীপটার আশেপাশে খুব বেশি ঘোরাফেরা করে পাপালো। গুপ্তধন খুঁজে বেড়ায়। যদি কখনও গুহায় ঢুকে টাকার বাণ্ডিল দেখে ফেলে, এই ভয়ে তার ওদিকে যাওয়া বন্ধ করতে চাইল দুই ফিশার। গুজব রটিয়ে দিল, পাপালো চোর। সিনেমা কোম্পানির জিনিসপত্র সে-ই চুরি করে। তাকে দেখলেই লাঠি নিয়ে তাড়া করে জিম। এই সময় আমরা গিয়ে হাজির হলাম। জোর পেল পাপালো। শুধু গুজব রটিয়ে ওকে আর ঠেকানো যাবে না, বুঝতে পারল দুই ভাই। সময় মত জিম পেয়ে গেল পাপালোর ছুরিটা। জানাল দুই ডাকাতকে। সুযোগটা লুফে নিল ওরা। লেন্স চুরি করােল জিমকে দিয়ে, ট্রেলারের জানালা ভাঙল, মেঝেতে ছুরিটা ফেলে রাখা হল, লেন্সগুলো নিয়ে গিয়ে পাপালোর বিছানার নিচে রেখে দিয়ে এল ডিক কিংবা বাড। পরের দিন আরেকটা সুযোগ পেয়ে গেল ডিক। দ্য হ্যান্ডের দিকে গিয়েছে পাপালো, জানল কোনভাবে। পিছু নিল। ভেঙে দিয়ে এল নৌকাটা। ব্যস, একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেল। কোন কারণে যদি পাপালোকে ছেড়েও দেয় পুলিশ, ও আর গুপ্তধন খুঁজতে যেতে পারবে না। কিন্তু বড় একরোখা পাপালো হারকুস, ওকে শেষ অবধি ঠেকাতে পারল না। দুই ফিশার। ওরই জন্যে ধরা পড়েছে ওরা, প্ৰাণে বেঁচেছে মুসা আর রবিন।
হাঁ আস্তে মাথা ঝাঁকালেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। আচ্ছা, কিছু করে এসেছি। ওর জন্যে? সাহায্যের কথা বলছি।
আমাদের কিছু করতে হয়নি, কথা বলল মুসা। নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিয়েছে পাপু।
কি?
গুপ্তধন শিকারের ওপর যে ছবিটা করা হয়েছে, তাতে মূল ভূমিকা তার দেখানো হয়েছে। দ্য হ্যান্ডের গুহা থেকে ড়ুবে ড়ুবে মোহর তুলে আনছে সে, এই দৃশ্যের ছবিও তোলা হয়েছে। মিস্টার জন নেবারের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ মোটা অংকের পারিশ্রমিক দিয়েছে তাকে বাবা। ট্রেজার-হান্টার ছবিতে অভিনয়ের জন্যে।
খুব ভাল, খুব ভাল, খুশি হলেন পরিচালক। আর কিছু?
পরিবহন কোম্পানির দশ লাখ ডলার ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে পাপালোর কৃতিত্বই বেশি, বলল কিশোর। তাকে একটা পুরস্কার দিয়েছে কোম্পানি। পঁচিশ হাজার ডলার।
বাহ্, বেশ বড় পুরস্কার তো! বললেন পরিচালক।
বাবাকে নিয়ে দেশে ফিরে যাবে পাপালো, বলল কিশোর। ভালভাবে চিকিৎসা করবে। একটা বোট কিনে মাছের ব্যবসা শুরু করবে। আশা পূরণ হয়েছে তার।
হুমম, মাথা ঝোঁকালেন পরিচালক। তোমাদের এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী নিয়ে খুব ভাল একটা ছবি হবে। ভাবছি, পুরোটাই শুটিং করব। স্কেলিটন আইল্যান্ড আর আশেপাশের দ্বীপগুলোতে। যেখানে যা যা যেভাবে ঘটেছে, ঠিক তেমনি ভাবে। পাপালোর চরিত্রটা তাকে দিয়েই অভিনয় করালে কেমন হয়?
খুব ভাল হয়। একই সঙ্গে বলে উঠল তিন গোয়েন্দা।
ঘড়ি দেখলেন পরিচালক। ঠিক আছে। নতুন কোন রহস্যের খোঁজ পেলে জানাব।
ইঙ্গিতটা বুঝল তিন কিশোর। উঠে দাঁড়াল। মোহরগুলো টেনে নিলো মুসা। বেছে বেছে একটা ভাল মোহর-যেটা কম ক্ষয় হয়েছে, তুলে নিয়ে বাড়িয়ে ধরল। এটা আপনাকে দিলাম, স্যার। আপনার সংগ্রহে রেখে দেবেন।
থ্যাংক ইউ, মাই বয়, মোহরটা নিতে নিতে বললেন পরিচালক।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
হাতের তালুতে নিয়ে মোহরটার দিকে চেয়ে রইলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। বিড়বিড় করে বললেন, সত্যিকারের জলদস্যুর গুপ্তধন! হাসলেন আপন মনেই। দারুণ ছেলেগুলো কী সুন্দর সুন্দর কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে ভাবছি, এরপর কি আসাইনমেন্ট দেয়া যায় তিন গোয়েন্দাকে!