হয়েছে ছাড়া শোনা গেল একটা গম্ভীর আদেশ। মেরে ফেলবে তো!
চমকে ফিরে চাইল তিন কিশোর। তাদের পেছনে কয়েক হাত দূরে এসে গেছে দুটো নৌকা। একটা নৌকায় দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ চীফ হোভারসন। এক হাতে রিভলভার, আরেক হাতে টর্চ।
ছাড়া আবার আদেশ দিলেন হোভারসন। এই জিম শুনতে পাচ্ছ।
ডিককে ছেড়ে দিল জিম। সরে যাবার তাল করছিল বাড, তাকে চেপে ধরল। দিল আরেক চুবানি।
হয়েছে হয়েছে। মেরে ফেলবে, ছেড়ে দাও! বললেন পুলিশ চীফ।
দুই ডাকাত আর জিমকে টেনে ডাঙায় তুলল। কয়েকজন পুলিশ। হাতকড়া পরিয়ে দিল।
ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ল দুই ফিশার। প্রচুর মার খেয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই।
তিন কিশোরের ওপর আলো ফেললেন হোভারসন। একটা কাজের কাজ করেছ তোমরা। পাপু, তুমি এখানে এলে কি করে?
প্ৰশংসা সব ওরই পাওয়া উচিত, চীফ, পাপালো কিছু বলার আগেই বলে উঠল রবিন। ও না এলে আমাকে আর মুসাকে মেরে পানিতে ফেলে দিত ডাকাতগুলো। কিন্তু আপনি এলেন কেন? আজি রাতেই ব্যাটারা টাকা নিতে আসবে জানতেন?
না, মাথা নাড়লেন হোভারসন। ব্যাটারা স্কেলিটন আইল্যান্ডে টাকা লুকিয়ে রেখেছে, কল্পনাই করিনি কখনও! কিশোর, তোমাদের বন্ধু কিশোর পাশা… মিনিট চল্লিশেক আগে ঝড়ের বেগে এসে ঢুকাল থানায়। অদ্ভুত এক গল্প শোনাল। বলল, ফিশার ব্যাটাদের বমল ধরতে হলে এখুনি যান। এমনভাবে বলল, ওর কথা বিশ্বাস না করে পারলাম না। তাড়াতাড়ি লঞ্চ নিয়ে ছুটে এলাম।
কিশোর কোথায়? জিজ্ঞেস করল মুসা।
লঞ্চে, বললেন চীফ। জোর করে রেখে এসেছি। গোলাগুলি চলতে পারে, তাই আনিনি।
১৯
বিশাল টেবিলে পড়ে থাকা মোহরের ছোট স্তূপের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছেন মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার।
গুপ্তধন তাহলে পেলো অবশেষে বললেন পরিচালক। সব পাওনি, ঠিক, তবে কিছু তো পেয়েছ।
মোট পঁয়তাল্লিশটা, বলল কিশোর। এখানে আছে তিরিশটা, মুসা। আর রবিনের ভাগের। ক্যাপ্টেন ওয়ান-ইয়ারের ধনরাশির তুলনায় কিছুই की।
তবু তো ধন, সোনার ডাবলুন, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। এখন বল, কেন মনে হল, লুটের টাকা স্কেলিটন আইল্যান্ডে লুকানো আছে?
সন্দেহটা ঢোকাল স্কেলিটন আইল্যান্ডের ভূত, বলল কিশোর। ওসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। শুনেই বুঝলাম, দ্বীপে ভূত দেখা যাওয়ার পেছনে মানুষের কারসাজি রয়েছে। কেউ একজন চায় না, ওই দ্বীপে মানুষ যাতায়াত করুক। তখনই প্রশ্ন জাগল মনে, কেন? মূল্যবান কিছু রয়েছে? ক্যাপ্টেন ওয়ান-ইয়ারের গুপ্তধন? ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। এই সময় দ্য হ্যান্ডের নিচের গুহা আবিষ্কার করে বসল পাপালো। মোহর পেল ওখানে। বুঝে গেলাম, স্কেলিটন আইল্যান্ডে ওয়ান-ইয়ারের গুপ্তধন নেই। তাহলে? একসঙ্গে তিনটে কথা এল মনে। প্ৰায় বিশ বছর পরে হঠাৎ দেখা যেতে শুরু করেছে স্যালি ফ্যারিংটনের ভূত, বছর দুই আগে থেকে। ঠিক দুই বছর আগে লুট হয়েছে দশ লক্ষ ডলার। স্কেলিটন আইল্যান্ডের পাশে উপসাগরে ধরা পড়েছে দুই ভাই, ডিক আর বাড ফিশার। ক্যাপ্টেন ওয়ান-ইয়ারের ধরা পড়ার সঙ্গে কোথায় যেন মিল রয়েছে। একটু ভাবতেই বুঝে ফেললাম ব্যাপারটা। ক্যাপ্টেন ওয়ান-ইয়ার মোহর সাগরে ফেলে দেয়নি, লুকিয়ে ফেলেছিল। হ্যান্ডের গুহায়। ফিশাররাও টাকা পানিতে ফেলে দেয়নি, লুকিয়ে ফেলেছে স্কেলিটন আইল্যান্ডের গুহায়। ব্রিটিশ জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ফাঁকি দিয়েছিল ওয়ান-ইয়ার, একই কায়দায় পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছে ফিশাররা।
চমৎকার! বললেন পরিচালক। আরেকটা প্রশ্ন। ডিক আর বাড তো জেলে, ভূত সাজল কে?
হান্ট গিল্ডার, এটা আমার অনুমান, বলল কিশোর, জেলে দুই ফিশারের সঙ্গে দেখা করত সে। কোনভাবে ওকে নিয়মিত টাকা দেবার বন্দােবস্ত করেছিল দুই ভাই। বিনিময়ে মাঝে মাঝেই দ্বীপে গিয়ে ভূত সেজে জেলেদেরকে দেখা দিত হান্ট। আসল কারণটা নিশ্চয় জানত না, তাহলে টাকাগুলো খুঁজে বের করে নিয়ে চলে যেত।
যেমন যেত গার্ড জিম রিভান, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকাল কিশোর। জিম জানত না, দ্বীপেই লুকানো আছে টাকাগুলো। শুধু এটুকু জানত, কোথাও লুকিয়ে রেখেছে দুই ভাই। জেল থেকে বেরিয়ে এসে বের করবে। তার ভাগ তাকে দিয়ে দেবে।
যখন জানল, তার নাকের ডগায়ই রয়েছে টাকাগুলো, হেসে বলল রবিন, কি আফসোসই না করলা
হ্যাঁ, কিশোরের গলায় ক্ষোভ। নিশ্চয় দেখার মত হয়েছিল তার মুখের ভাবা সর্দির জন্যে তো যেতে পারলাম না…
সিনেমা কোম্পানির জিনিসপত্র চুরি করল কে? জিজ্ঞেস করলেন পরিচালক। জিম আসার আগেই তো শুরু হয়েছিল চুরি!
নিশ্চয় হান্ট, বলল কিশোর। চোর হিসেবে বদনাম আছে। ওর এমনিতেই। চুরি কুরতে গিয়ে ধরা পড়লে, ব্যাপারটাকে সাধারণ চুরি হিসেবেই নিত পুলিশ। অন্য কিছু সন্দেহ করত না।
কাজটা অন্যকে দিয়ে করানোর কি দরকার? বললেন পরিচালক। জেল থেকে তো বেরিয়েছে তখন দুভাই। ওরা করলেই পারত? আর এত সব ঝামেলার মধ্যে গেল কেন? চুপচাপ এক রাতে গিয়ে টাকাগুলো বের করে নিয়ে চলে আসতে পারত।
পারত না, বলল কিশোর। আমার ধারণা, হান্ট টাকার গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল। দুবছর ভূত সেজেছে সে। অনেক টাকা পেয়েছে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে। এত টাকা খামোেকা ব্যয় করেনি। ডিক আর বাড, এটা বুঝবে না, অত বোকা নয় সে। দুই ফিশারের ভয় ছিল, টাকা আনতে গেলে পিছু নেবেই হান্ট, দেখে ফেলবে। তখন তাকে একটা ভাগ দিতে হবে। হান্টের ব্ল্যাকমেলের শিকার হবারও ভয় ছিল ওদের। তাই তো কৌশলে সরাল ওকে।