সত্যি, তুমি না এলে প্ৰাণেই মারা পড়তাম আজ। পাপালোর কাঁধে। হাত রাখল। রবিন।
শ শ শ ঠোঁটে আঙুল রাখল পাপালো। ফিশার ব্যাটারা আসছে। দুটো মূর্তি এগিয়ে এসে দাঁড়াল জিমের কাছে। দুজনের হাতে দুটো বড় প্যাকেট, দশ লক্ষ ডলার।
সব ঠিক আছে? স্পষ্ট ভেসে এল ডিকের গলা। কোন গোলমাল নেই তো?
না, গোলমাল নেই, জবাব দিল জিম। শোন, আমার ভাগের টাকাটা দিয়ে দাও।
পরে, বলল বাড ফিশার। বোটে উঠে দেব। ডিক, জলদি করা। চল উঠে পড়ি।
পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে জিম। ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিল। বাড। এগিয়ে গেল বোটের দিকে।
বোটে উঠে পড়ল দুই ভাই।
আরে! চেঁচিয়ে উঠল বাড। বিচ্ছু দুটো কোথায়! জিম, তুমি ছেড়ে দিয়েছ ওদেরকে।
আমি ছাড়িনি! রেগে গিয়ে বলল জিম। যাবে কোথায়? আছে, দেখ!
নেই। কর্কশ গলা বাডের।
কই, দেখি, বলতে বলতে এগিয়ে এলো জিম। আলো ফেলল। বোটে। আরে, সত্যিই নেই দেখছি! গেল কোথায়! এক চুল নড়িনি। আমি জায়গা ছেড়ে।
দেখি, প্যাকেটটা দাও, হাত বাড়াল ডিক। জলদি নেমে গিয়ে ধাক্কা দাও। এখুনি পালাতে হবে।
কিন্তু আমার ভাগ? বলল জিম। দুটো বছর অপেক্ষা করেছি। পুরো দশ লাখ পেলেও আমার হাতের দাম হবে না। সেটা না হয় না-ই বললাম। তোমরা তো পালাবে, আমি যাব কোথায়? ছেলে দুটো পালিয়েছে। গিয়ে বলে দেবে সব। জেলে যাব তো!
সেটা তোমার ব্যাপার, হাত নেড়ে বলল ডিক। বাড, ধাক্কা দাও। সটাটারে চাপ দিল সে।
ধাক্কা দিতে গিয়েও থেমে গেল বাড। গায়ে ওপর ঘেষে এসেছে জিম। খবরদারা প্যাকেট দুটো দিতে বল ডিককে। নইলে…
ব্যাডা শোনা গেল ডিকের আতঙ্কিত চিৎকার। বাড, স্টার্ট নিচ্ছে না! জিম, ইঞ্জিনের কি করেছ?
আমি কিছু করিনি, জবাব দিল গার্ড।
ইঞ্জিন তো স্টার্ট নিচ্ছে না, এখন কি করব?
সেটা তোমাদের ব্যাপার। প্যাকেট দুটো দাও, জলদি!
আবার চেষ্টা করল ডিক, আবার, কিন্তু সন্টার্ট হল না ইঞ্জিন। অবাক হয়ে দেখল দুই গোয়েন্দা, নীরব হাসিতে ফেটে পড়ছে পাপালো।
কি হল! ফিসফিস করে বলল রবিন।
স্পার্কিং প্ল্যাগের তার ছিড়ে ফেলে দিয়েছি, বলল পাপালো। হারামজাদারা! এবার যাও! পালাও! ওই হারামির বাচ্চা ডিকই আমার নৌকা ভেঙেছে। ওই বোট দিয়েই। এইবার পেয়েছি কায়দায়। চল, ক্যাম্পে গিয়ে লোক ডেকে আনি।
উঠতে যাবে, এমন সময় কানে এলো ইঞ্জিনের শব্দ। বসে পড়ল আবার পাপালো, দ্বীপের দিকেই এগিয়ে আসছে একটা বড় মোটর লঞ্চ।
কাছে এসে গেল লঞ্চ। আলো জ্বলে উঠল, সার্চ লাইট। সোজা এসে পড়ল ফিসারদের বোটের ওপর।
এক লাফে বোট থেকে নেমে এলো ডিক। ছুটল। হকচকিয়ে গেল জিম। এই সুযোগে থাবা মেরে তার হাতের রিভলভার ফেলে দিল বাড। ভাইয়ের পেছনে ছুটল সে-ও।
আরে! বলে উঠল পাপালো। ব্যাটারা এদিকেই আসছে। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা! দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোল সে।
কাছে এসে গেল ডিক। আর দুকদম ফেললেই ঝোপ পেরিয়ে যাবে। ঠিক তার পেছনেই রয়েছে বাড।
দাঁড়িয়ে উঠে হঠাৎ সামনে পা বাড়িয়ে দিল পাপালো। হোঁচট খেল ডিক। হুমড়ি খেয়ে পড়ল মাটিতে। ভাইয়ের গায়ে হোঁচট খেল বাড। পড়ে গেল সে-ও।
ডিকের ওপর গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো পাপালো। একনাগাড়ে কিল ঘুষি মারতে লাগল। চেঁচাতে লাগল, হারামজাদা! আমাকে হাজতে পাঠিয়েছিলি! ডাকাতের বাচ্চা ডাকাত! চোর বানিয়েছিলি আমাকে…
উঠে দাঁড়াল বাড। পাপালোর চুল ধরে হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে আনল ভাইয়ের ওপর থেকে। চিত করে শুইয়ে ফেলল। পাথরে জোরে ঠুকে দিল মাথা। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পা তুলল পাপালোর বুক সই করে।
মাথা নুইয়ে ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত ছুটে গেলো মুসা। নিগ্রোর খুলি কতখানি শক্ত, তলপেটে অনুভব করল বাড। হুকক করে একটা শব্দ বেরোল মুখ থেকে। চিত হয়ে পড়ে গেল। তার ওপর পড়ল মুসা।
চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে উঠতে গেল ডিক, পারল না। পিঠের ওপর লাফিয়ে এসে বসেছে রবিন। আবার হাত-পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেল সে।
ঝাড়া দিয়ে গায়ের ওপর থেকে মুসাকে ফেলে দিল বাড। উঠে দাঁড়াল হাঁচড়ে-পাঁচড়ে। এই সময় এসে পড়ল জিম। জ্যাকেটের কলার চেপে ধরে সোজা করল বাডকে। ঠেলে নিয়ে চলল। সামনের দিকে। ষাঁড়ের জোর তার গায়ে। ওর এক হাতের সঙ্গেই পেরে উঠল না বাড।
ঠেলে বাডকে পানির ধারে নিয়ে চলল জিম। আমার সঙ্গে চালাকি দেখাচ্ছি। মজা!
বাডকে নিয়ে পানিতে পড়ল জিম। কোমর পানি। উঠে দাঁড়াল আবার। মাথা তুলল বাড। জ্যাকেটের কলার এখনও জিমের হাতে।
বাডকে ঠিকমত দম নিতে দিল না জিম। চুবাতে লাগল। একনাগাড়ে। রাগে পাগল হয়ে উঠছে সে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
রবিনকে গায়ের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেল ডিক। এবারেও পারল না। প্রায় এক সঙ্গে এসে হাজির হয়েছে মুসা আর পাপালো। দুহাতে ডিকের দুপা ধরে উচু করে ফেলল মুসা। টান দিল। হাত বাড়িয়ে একটা ছোট গাছের গোড়া ধরে ফেলল। ডিক। লাথি মেরে হাতটা সরিয়ে দিল পাপালো। এ হারামজাদাকেও পানিতে ফেল!
তিন কিশোরের সঙ্গে পেরে উঠলো না ডিক। হিড়হিড় করে টেনে তাকে পানির ধারে নিয়ে এলো ওরা।
বাডকে ছাড়ছে না। জিম। চোবাচ্ছে এখনও। মেরেই ফেলবে যেন। তার পাশেই ডিককে নিয়ে এসে পড়ল তিন কিশোর।
বাডকে ছেড়ে দিয়েই ডিকের ঘাড় চেপে ধরল জিম। তাকে চুবাতে শুরু করল।