আগে রাফাত চাচাকে ডেকে নিয়ে আসি, বলল রবিন।
দরকার নেই, মাথা নাড়ল জিম। ওঁরা ঘুমোক। আমরা বের করে। নিয়ে আসি আগে। টাকার বস্তা দেখিয়ে চমকে দেব ওঁদেরকে।
কিন্তু… বলতে গিয়েও থেমে গেল মুসা।
ঘুরে হাঁটতে শুরু করেছে জিম। ফিরে চেয়ে বলল, এসো আমার সঙ্গে।
অন্ধকারে দুপাশের গাছপালাগুলোকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। জিমের পিছু পিছু এগিয়ে চলেছে দুই গোয়েন্দা। কেন যেন খচখচ করছে দুজনের মন। এভাবে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না।
উফফা হঠাৎ শোনা গেল। রবিনের চিৎকার। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়া এসে জোরে কাঁধ খামচে ধরেছে। কেউ। মিস্টার রিভান! কে জানি… মুখ চেপে ধরল। কঠিন একটা থাবা।
পেছনে আরেকটা চাপা শব্দ শুনতে পেল রবিন। মুসার মুখও আটকে দেয়া হয়েছে, অনুমান করল।
ফিরে দাঁড়াল জিম। এগিয়ে এলো কাছে। কিন্তু এ-কি! সামান্যতম অবাক হল না তো! কোমরের খাপ থেকে রিভলভারও বের করল না! চমৎকার! বলে উঠল গার্ড। চেচামেচি করতে পারেনি।
আমরা করতে দিইনি বলে, বলে উঠল রবিনকে ধরে রাখা লোকটা। নৌকা দ্বীপে ভেড়াবে, এটাই তো বিশ্বাস হচ্ছিল না তোমার। আরেকটু হলেই তো দিয়েছিল! ক্যাম্পে নিয়ে ওদেরকে জাগালেই…
কিন্তু যেতে তো পারেনি, অস্বস্তি বোধ করছে জিম। এখন আর কোন ভয় নেই…
কে বলল তোমাকে? বলল মুসাকে ধরে রাখা লোকটা। টাকাগুলো নিয়ে কেটে পড়ার আগে নিরাপদ নই। যে-কোন মুহূর্তে যা খুশি ঘটে যেতে পারে! এই বিচ্ছ দুটোর ব্যবস্থা করা দরকার। চল, বেঁধে নৌকায় ফেলে রাখি। পরে দেখব, কি করা যায়।
ঠিক আছে, রাজি হল জিম। আচ্ছা, ডিক, টাকাগুলো কোথায়?
গুহায় রেখেছ?
ওসব জেনে কাজ নেই তোমার, ভারি গলায় বলল ডিক। সেটা আমাদের ব্যাপার।
আমারও! গম্ভীর কণ্ঠ জিমের। তিন ভাগের এক ভাগ আমার। তোমাদের মতই দুটো বছর অপেক্ষা করেছি। আমিও। বাঁ হাতটার কথা বাদই দিলাম। যদিও, এটা হারিয়েছি তোমাদের দোষে।
থাম! বড় বেশি কথা বল তুমি বলল রবিনকে ধরে রাখা লোকটা। তোমার ভাগ তুমি পাবে। এখন এক কাজ কর। গায়ের শার্টটা খুলে ছিড়ে ফেল। এ-দুটোকে বাঁধতে হবে।
কিন্তু…
জলদি করা ধমকে উঠল লোকটা।
শার্ট খুলে নিল জিম। ছিড়ে লম্বা লম্বা ফালি করতে লাগল।
ভাবছে রবিন। ডাকাতদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জিম। আমার কার লুট করতে সাহায্য করেছিল ডিক আর বাডকে। ওকে সন্দেহমুক্ত রাখতে পিস্তল দিয়ে বাড়ি মেরেছিল ডিক। আঘাতটা একটু জোরেই হয়ে গিয়েছিল। কাঁধের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। জিমের। ফলে অকেজো হয়ে গেছে বাঁ-হাতটা…
মুখের ওপর থেকে হাত সরে যেতেই চেঁচিয়ে উঠতে গেল রবিন। কিন্তু তার আগেই কাপড় গুজে দেয়া হল। মুখের ওপর দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে গিয়ে মাথার পেছনে বেঁধে দেয়া হল একটা ফালি। জিভ দিয়ে ঠেলে আর গোঁজটা খুলতে পারবে না সে। দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধে দেয়া হল এরপর।
একইভাবে মুসাকেও বাঁধা হল। পেছন থেকে দুই গোয়েন্দার জ্যাকেটের কলার চেপে ধরল। দুই ভাই।
এবার, বিচক্ষুরা, বলল ডিক, হাট। কোনরকম চালাকির চেষ্টা করবে না। দুঃখ পাবে তাহলে।
জোর ধাক্কায় প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ার উপক্রম হল, কিন্তু কলার ধরে আছে ডিক, পড়ল না রবিন। পাশে চেয়ে দেখল, একই ভাবে ধাক্কা খেয়ে এগোচ্ছে মুসা।
দ্বীপের অন্য প্ৰান্তে নিয়ে আসা হল ওদেরকে। সৈকতে বিছিয়ে আছে পাথর। তীরের কাছে নোঙর করা একটা বড় মোটর বোট।
ওঠা। রবিনের কাঁধে ধাক্কা মারাল ডিক। উঠে পড়ল দুই গোয়েন্দা। ইঞ্জিনের সামনের খোলা জায়গাটুকুতে নিয়ে আসা হল ওদেরকে।
বস, বসে পড়া কাঁধে চাপ পড়ল। রবিনের। বাড, দড়ি বের করা তো। শক্ত করে বাঁধতে হবে, যেন পালাতে না পারে।
কাছেই পড়ে আছে বোট বাঁধার দড়ি। অনেক লম্বা। হ্যাঁচকা টান দিয়ে মুসাকে চিত করে শুইয়ে ফেলল বাড। দড়ি তুলে নিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলল। মুসার পা। বাড়তি অংশটুকু দিয়ে রবিনের পা বাঁধল। আরেক টুকরো দড়ি এনে দুজনের বুকে বুক লাগিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধল।
ব্যস ব্যস, বলল ডিক ফিশার। আর ছুটতে পারবে না। চল, তাড়াতাড়ি করতে হবে। এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছি। গুপ্তধন, হঁহা খোঁজার জন্যে যে-কোন সময় চলে আসতে পারে ব্যাটারা
বোট থেকে নেমে গেল দুই ফিশার।
তুমি এখানেই থাক, জিম, শোনা গেল ডিকের কথা। চোখ রাখ চারদিকে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে প্যাঁচার ডাক ডাকবে।
ছেলে দুটোকে কি করবে? জিমের গলা। ওরা বলে দেবে সব! আমি…
বলবে না, কেমন অদ্ভুত শোনাল ডিকের গলা। খানিক পরেই ফিরে আসছি আমরা। বোট নিয়ে চলে যাব। তখন ওদের নৌকাটা উল্টো করে ভাসিয়ে দেবে। আগামী কাল ওভাবেই পাওয়া যাবে ওটা। লোকে ধরে নেবে কোন কারণে সাগরে ড়ুবে মরেছে…
বুঝেছি, বুঝেছি, বলে উঠল জিম।
পায়ের শব্দ কানে এল, দুজোড়া।। চলে যাচ্ছে। তারপর নীরবতা। কথা বলার চেষ্টা করল রবিন। পারল না। অদ্ভুত একটা চাপা। আয়োজ বেরোল শুধু। বাঁধন খোলা যাবে না। বাঁচার উপায় নেই।
১৮
কি ভীষণ বিপদে পড়েছে, বুঝতে অসুবিধে হল না দুই গোয়েন্দার।
ভাবছে। রবিন, ঠিকই অনুমান করেছে কিশোর। কঙ্কাল দ্বীপের ওই পুরানো গুহাতেই লুকানো আছে টাকাগুলো। কিন্তু দুই ফিশারের সঙ্গে জিমেরও যোগসাজশ আছে, একথা কিশোরও কল্পনা করেনি। আজ রাতেই টাকা নিতে আসবে দুই ডাকাত, এটাও ভাবেনি। আগামী কাল ভোর থেকেই শুরু হবে গুপ্তধন খোঁজা, নিশ্চয় ঘোষণা করা হয়েছে রেডিওতে। দ্বীপের কোন জায়গা খোঁজা বাদ রাখবে না ওরা। কেউ না। কেউ আবিষ্কার করে ফেলবে টাকার থলেগুলো। তাই, বুকি নিয়েও চলে এসেছে ওরা। টাকাগুলো বের করে নিয়ে যাবার জন্যে। যাবার আগে ওকে আর মুসাকে…