এসে গেছি! বলে উঠল রবিন।
মোড় ফেরাল মুসা। জেটির কাছে গেল না। প্লেজার পার্কের দিকে এগিয়ে চলল।
ঘ্যাঁচ করে বালিতে এসে ঠেকাল নৌকার সামনের অংশ। লাফিয়ে নেমে পড়ল রবিন। মুসাও নামল। দুজনে টেনে নৌকাটাকে তুলে আনল ডাঙায়।
চল, পার্কের ভেতর দিয়ে এগেই, নিচু গলায় বলল মুসা। পার্ক পেরিয়ে পথে নামব, সেদিন যৌপথে গুহায় গিয়েছিলাম। খুব সাবধান। জিম টের পেলে চোঁচামেচি শুরু করবে।
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকাল রবিন। তবে সঙ্গে ও গেলে ভালই হত। …অন্ধকারে গুহাটা খুঁজে পাব তো?
মনে হচ্ছে পাব, জবাব দিল মুসা। দ্বিধা করল এক মুহূর্ত। গাঢ় অন্ধকার। নীরব-নিস্তব্ধ। সৈকতে ঢেউ আছড়ে পড়ার একটানা মৃদু ছলছলাৎ শব্দ নীরবতাকে আরও গভীর করে তুলেছে যেন। চল, এগোই।
আগে আগে চলেছে মুসা। মাঝেমাঝে টর্চ জ্বেলে দেখে নিচ্ছে সামনের পথ। এসে ঢুকাল পার্কে।
কালো আকাশের পটভূমিতে কিস্তৃত এক দানবের মত দেখাচ্ছে নাগরদোলাটাকে। পাশ কাটিয়ে নাগরদোলার কাছে চলে এলো দুজনে। মোড় ঘুরে এগোেল। পেছনের ভাঙা বেড়ার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
নাহ, একা যাব না ফিসফিস করে বলল মুসা। বাবাকে জগাব। গিয়ে। ভয় পাচ্ছি, তা নয়। আমাদেরকে বোডিং হাউস থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে, তবু বেরিয়েছি। কোন বিপদে পড়ার আগেই তাকে জানিয়ে রাখা ভাল।
ঠিকই বলেছ, সায় দিল রবিন। চল যাই। তাঁকে জানিয়ে গেলে আর কোন ভয় থাকবে না। আমাদের।
ক্যাম্পের দিকে পা বাড়াতে গিয়েই থমকে গেল দুজনে। ধড়াস করে উঠল। বুকের ভেতর।
কেউ এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে। বিশালদেহী কেউ। খবরদার! যেখানে আছ, দাঁড়িয়ে থাকা শোনা গেল গর্জন।
বরফের মত জমে গেল যেন দুই গোয়েন্দা।
আলো জ্বলে উঠল। সামনে চলে এল টর্চের মালিক। দুই কিশোরের মুখে আলো ফেলেই স্থির হয়ে গেল। অবাক কষ্ঠে বলে উঠল, আরে একি! তোমরা এত রাতে চোরের মত এখানে কি করছ?
দুজনের চোখের ওপর থেকে আলো সরাল জিম, নিচের দিকে ফেলল। ভাগ্যিস, মেরে বসিনি! এতরাতে এখানে কি করছ তোমরা?
অনুমান ঠিক কিনা দেখতে এসেছি।
দ্বীপের রহস্য অবাক কণ্ঠ জিমের। কি বলতে চাইছ?
সত্যিই গুপ্তধন লুকানো আছে। এখানে, বলল মুসা। কিশোরের তাই ধারণা।
গুপ্তধন! ছেলেদের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না যেন গার্ড। কিসের গুপ্তধন?
ওই যে… থেমে গেল মুসা। তার আগেই কথা বলতে শুরু করেছে রবিন। আপনার কথা থেকেই সূত্র খুঁজে পেয়েছে কিশোর।
আমার কথা থেকে। বিড়বিড় করল জিম। কিছুই বুঝতে পারছি না!
সেদিন সকালে বললেন না, বলল রবিন, দুই বছর আগে আর্মার্ড কার লুট করেছিল দুই ভাই? ডিক আর বাড ফিশার? যারা বাঁ হাত নষ্ট করে দিয়েছে। আপনার।
হ্যাঁ হ্যাঁ। কিন্তু তাতে কি?
আপনি আরও বলেছেন, রবিনের কথার খেই ধরল মুসা। কোস্ট গার্ডেরা দুজনকে ধরে ফেলে। উপসাগরে একটা বোটে ছিল দুই ভাই। কিছু ফেলছিল পানিতে। চোরাই টাকা ফেলেছিল ওরা, লোকের ধারণা।
তই তো করেছিল।
এবং, মুসার কথার খেই ধরল রবিন। ঠিক দুই বছর আগে থেকেই কঙ্কাল দ্বীপে আবার ভূতের উপদ্রব শুরু হল। টাকা লুট হল দুবছর আগে, স্কেলিটন আইল্যান্ডের পাশে ধরা পড়ল দুই ডাকাত, দীর্ঘ বিশ বছর পর আবার গোলমাল শুরু করল দ্বীপের ভূত। ভয় দেখাতে লাগল লোককে। ঘটনাগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার মিল যেন খুব বেশি। সন্দেহ জাগল কিশোরের।
এত ভণিতা না করে আসল কথা বলে ফেল তো! অধৈর্য হয়ে উঠেছে জিম।
বুঝতে পারছেন না এখনও? বলল মুসা। বোটে করে পালাতে গেল দুই ডাকাত, ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ। ওরা তখন স্কেলিটন আইল্যান্ডের কাছাকাছি। এত বুকি নিয়ে এতগুলো টাকা লুট করেছে, পানিতে ফেলে দেবে সহজে? মোটেই না। কোনভাবে বোটটা তীরে ভিড়িয়ে দ্বীপে উঠেছিল ওরা। টাকাগুলো লুকিয়ে রেখেছিল। তারপর বোট নিয়ে ভেসে পড়েছিল আবার। কোস্টগার্ডের বোট আসতে দেখে টাকা পানিতে ফেলার ভান করেছিল, ফেলেছিল আসলে অন্যকিছু। ভারি কিছু, যা সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গিয়েছিল। বিমল ধরা না পড়লে খুব বেশি দিন জেল হবে না, ঠিকই বুঝতে পেরেছিল ওরা। জেল থেকে বেরোলে আর কোন ভয় নেই। দ্বীপে এসে টাকাটা নিয়ে দূর কোন দেশে চলে যাবে। কেউ কিছু সন্দেহ করবে না। মাত্র হস্তাদুয়েক হল ছাড়া পেয়েছে ওরা। সেদিন কিংবা তার পরের দিনই এসে টাকা নিয়ে যেতে পারত, কিন্ত মুশকিল করেছে সিনেমা কোম্পানি। দিকে এলে ওদের চোখে পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। ডিক আর বাডকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে পুলিশের সন্দেহ জাগতে পারে। সে বুকি ওরা নেয়নি।
সর্বনাশা বলে উঠল জিম। কি গল্প শোনাচ্ছি। এখানেই টাকা লুকিয়ে রেখেছে ডিক আর বাডা কোথায়, কিছু বলেছে কিশোর?
কিশোরের ধারণা, বলল রবিন। শুকনো উচু কোন জায়গায় লুকানো হয়েছে। কাপড়ের ব্যাগে ভরা কাগজের টাকা, মাটির তলায় পুঁতে রাখলে পচে যাবে। শুকনো উচু সবচেয়ে ভাল জায়গা দ্বীপে….
গুহা! প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠল জিম। সেই পুরানো গুহার ভেতরো কোন তাকের পেছনের খাঁজো খাঁজের ভেতরে থলেগুলো ঢুকিয়ে সামনে কয়েকটা পাথর ফেলে রাখলেই কেউ দেখতে পাবে না! সন্দেহও করবে না কিছু!
কিশোরেরও তাই ধারণা, বলল মুসা। টাকাগুলো একমাত্র ওখানেই নিরাপদে থাকবে।
ইস্স্, অস্থির হয়ে উঠছে জিম, ফুটো বছর ধরে টাকাগুলো ওখানে রয়েছে। ঘুণাক্ষরেও মাথায় এলো না ব্যাপারটা যদি কোনভাবে বুঝতে পারতাম… ইস্স্! চল চল, দেখি, সত্যিই আছে নাকি…