কি যেন ভাবল সিমনস। বলল, ঠিকই বলেছ। শুধু এভাবেই গুপ্তধন শিকারিদের হাত থেকে নিস্তার পাব আমরা। ডাক্তার রোজারকে বলে পাঠাব, স্থানীয় রেডিওতে গিয়ে ঘোষণা করুক, আগামী কাল গুপ্তধন খোঁজা চলবে ব্যাপক হারে। যে গুপ্তধন খুঁজে পাবে, পাঁচশো ডলার পুরস্কার পাবে সে আমাদের কোম্পানির কাছ থেকে। তবে, একটা শর্ত থাকবে, নাগরদোলা নাগরদোলার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। খুঁজেপেতে কিছুই না পেয়ে চলে যাবে ওরা। বুঝে যাবে, কোন গোপন ম্যাপ পাইনি আমরা, গুপ্তধন খুঁজতে আসিনি। তাহলে এভাবে লোককে আমন্ত্রিত করতাম না। আর কখনও আমাদের বিরক্ত করতে আসবে না ওরা। নিরাপদে এসকেপ ছবির শুটিং চালিয়ে যেতে পারব। মাঝে থেকে গুপ্তধন শিকারের ওপর চমৎকার একটা ছবিও তৈরি হয়ে যাবে। খুব ভাল বুদ্ধি
হুঁ-উঁ! ধীরে মাথা ঝাঁকালেন মিস্টার আমান। ঠিকই। তাহলে এখুনি ফোন করে সব কথা জানানো উচিত মিস্টার নেবারকে। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরলেন। রাত অনেক হয়েছে। আর জেগে থেকে না। শুতে যাও। সকালে উঠে দেখতে পাবে খেলা…
কিন্তু বাবা, পাপু… বলতে গিয়ে বাধা পেল মুসা।
ওই চোরটার কিছু শিক্ষা হওয়া দরকার, উঠে দাঁড়ালেন মিস্টার আমান। পিটার, চল যাই। ডাক্তার রোজারকেও খবর পাঠাতে হবে…
তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল দুজনে। উফফা বাঁচলাম আরাম করে হেলান দিয়ে বসল মুসা। কি ঘাবড়েই না গিয়েছিলাম! কিন্তু পাপুর ব্যাপারটা কি হবে? কানই দিল না বাবা!
বড়রা ছোটদের কথায় কান দেয় না, এটাই নিয়ম, ক্ষোভ প্ৰকাশ পেল রবিনের কথায়। তারা যা ভাবে, সেটাই ঠিক, আমাদের কথা কিছু না…। যাকগে, কিশোরের কথায় কান দিয়েছে ওরা, এটাই বাঁচোয়া। আমি তো কোন উপায়ই দেখছিলাম না. তুমি আবার কি ভাবতে শুরু
অত বেশি ভেব না, হাসল মুসা। মগজটাকে একটু বিশ্রাম দাও। নইলে বেয়ারিং জ্বলে যাবে…
কেশে উঠল কিশোর। থামল। স্বস্তি ফুটেছে চেহারায়।
কি, কিশোর? জিজ্ঞেস করল রবিন। প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছ মনে হচ্ছে?
কণ্ঠে বলল কিশোর।
পারছ। চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বলে ফেল! জলদি!
চল, ওপরে চলে যাই বলল কিশোর।
কিশোরের পিছু পিছু দোতলায় শোবার ঘরে এসে ঢুকল দুই সহকারী গোয়েন্দা। উত্তেজিত।
বল এবার, ঘরে ঢুকেই বলে উঠল রবিন।
নিজের বিছানায় গিয়ে বসল কিশোর। ক্যাপ্টেন এক কান-কাটা কোথায় ধরা পড়েছিল, মনে আছে? হস্তে। মোহরগুলো রেখে খালি সিন্দুকটা উপসাগরে ফেলে দিয়েছিল সে। দ্বীপে গিয়ে উঠেছিল। তারপর টিলার ওপরের গর্ত দিয়ে সব মোহর ফেলে দিয়েছিল নিচের গুহায়। এজন্যেই একটা মোহরাও খুঁজে পায়নি ব্রিটিশ যুদ্ধ-জাহাজের ক্যাপ্টেন। তাহলে আরও অনেক মোহর আছে গুহায়! উত্তেজনায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিয়েছে মুসার। পাপুর কথাই ঠিক
মনে হয় না, মাথা নাড়ল কিশোর। তিনশো বছর ধরে জোয়ার আসছে। গুহায়। নিশ্চয় বেশির ভাগ মোহরই বের করে নিয়ে গেছে খোলা সাগরে। ওপরে যা ছিল, পেয়ে গেছ। আর কিছু থাকলেও, বালির অনেক গভীরে ঢুকে গেছে। ওগুলো। খুঁজে পাওয়া কঠিন।
চেপে রাখা শ্বাসটা ফেলল মুসা। ঠিকই বলেছ। তবে আরও কিছু পাওয়া গেলে খুব ভাল হত, উপকার হত পাপুর। ওর বাবাকে গ্ৰীসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারত।
পাপালোর কথা উঠতেই আবার চুপ হয়ে গেল ওরা। বন্ধুকে সাহায্য করার কোন উপায় ঠিক করতে পারল না। বিষণ্ণ মুখে শুতে গেল।
শোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল মুসা আর রবিন। কিশোরের চোখে ঘুম এল না। ভাবনার ঝড় বইছে মাথায়। অনেক দিন পরে হঠাৎ আবার দেখা দিল কেন স্যালি ফ্যারিংটনের ভূত? কঙ্কাল দ্বীপে লোক যাতায়াত করলে কার কি অসুবিধে? তাদেরকে হস্তে ফেলে রেখে এসেছিল। কেন হান্ট গিল্ডার? কেন হুমকি দিল ডিক.ডিক.তড়িাক করে। লাফিয়ে উঠে বসল কিশোর। বুঝে গেছে!
মুসা, রবিন, জলদি ওঠা চেঁচিয়ে ডাকল কিশোর। রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি।
চোখ মেলল দুই সহকারী গোয়েন্দা। হাই তুলতে তুলতে তাকাল কিশোরের দিকে।
কি হয়েছে? ঘুমজড়িত গলায় জানতে চাইল মুসা। দুঃস্বপ্ন দেখেছ?
না উত্তেজিত কণ্ঠ কিশোরের। জলদি কাপড় পর কঙ্কাল দ্বীপ যেতে হবে! রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি।
লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসিল মুসা আর রবিন।
ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বল বল…
বলল কিশোর।
কিশোর, তোমার তুলনা নেই? বন্ধুর প্রশংসা না করে পারল না রবিন। ঠিক ঠিক বলেছ একেবারে খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে সব কিছু।
ইস্স্, একটা গাধা আমি রবিনের কথায় কান দিল না কিশোর। আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল জলদি যাও। আমিই যেতাম, কিন্তু সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা…
না না, তোমার যাবার দরকার নেই, হাত নেড়ে বলল মুসা। তুমি শুয়ে থাক। আমরাই পারব। কিন্তু বাবাকে জানালেই তো পারি। জিমকে নিয়ে তারাও আমাদের সঙ্গে গেলে…
না, মাথা নাড়ল কিশোর। আমার অনুমান ভুলও হতে পারে। তা হলে খেপে যাবেন রাফাত চাচা। তোমরা দুজনেই খুঁজে বের করগে আগে। পেলে, সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জানাবে তাদেরকে।
পাঁচ মিনিটেই কাপড় পরে তৈরি হয়ে গেল। রবিন আর মুসা। টর্চ নিলো দুজনেই। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল নিঃশব্দে।
শুয়ে পড়ল আবার কিশোর। ঘুম এলো না। ক্ষোভে-দুঃখে ছটফট করছে। কেন লাগল ঠাণ্ডা? কেন এই হতচ্ছাড়া সর্দি ধরে বসল। তাকে! নইলে তো রবিন আর মুসার সঙ্গে সে-ও যেতে পারত। রাতটা দ্বীপেই থেকে যেত। তারপর ভোর না হতেই গুপ্তধন শিকারিদের খেলা. গুপ্তধন শিকারি! আবার লাফিয়ে উঠে বসল কিশোর। ভুল হয়ে গেছে, মস্ত ভুল! ভয়ানক বিপদে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। রবিন আর মুসাকে! খুন হয়ে যেতে পারে ওরা, খুন…
১৭
গায়ের জোরে দাঁড় টানছে মুসা। প্রায় উড়ে চলেছে ছোট্ট নৌকা। এক জেলের কাছ থেকে নৌকাটা ভাড়া নিয়েছে সে। সামনের গলুইয়ের কাছে বসে আছে রবিন। চেয়ে আছে সামনের দিকে। তারার আলোয় অদ্ভুত দেখাচ্ছে কঙ্কাল দ্বীপকে।