আপনি সবই জানেন, কাশি থামলে বলল কিশোর, তবু গোড়া থেকেই শুরু করছি। মাঝে অনেক দিন বিরতি দিয়ে, হঠাৎ করে আবার স্কেলিটন আইল্যান্ডে ভূতের উপদ্রব শুরু হল কেন? সিনেমা কোম্পানির ওপর ওই বিশেষ নজর কেন চোরের? প্লেন থেকে নামতে না নামতে কার কি এমন ক্ষতি করে ফেললাম, যে ঝড়ের রাতে দ্য হ্যান্ডে নির্বাসন দিয়ে আসা হল আমাদেরকে? সবগুলো প্রশ্নের একটাই সহজ উত্তরঃ কেউ একজন চায় না, স্কেলিটন আইল্যান্ডে লোক যাতায়াত করুক, কিংবা বাস করুক, কিংবা ওটার ব্যাপারে খোঁজখবর করুক। এবং সেটার প্রমাণও পেয়েছি। গতকাল বিকেলে ডাক্তার রোজারের চেম্বার থেকে ফিরছিলাম, হঠাৎ পাশের গলি থেকে বেরিয়ে এল। একজন লোক। ঢেঙা, রোগাটে, হাত উল্কি দিয়ে আঁকা জলকুমারীর ছবি…
ডিক, চোয়ালে হাত ঘষছেন। চীফ। ডিক ফিশারা মাত্র জেল থেকে বেরোল ব্যাটা, এরই মাঝে শুরু করে দিলা.ঠিক আছে বলে যাও।
দ্বীপগুলোর আশপাশে খুব বেশি ঘোরাফেরা করে পাপু, তাই তার নৌকা ভেঙে দেয়া হল, বলল কিশোর। শুধু তাই না, চক্রান্ত করে তাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করল।
কিন্তু কেন? প্রশ্ন করল রবিন।
সেটাই বুঝতে পারছি না, বলল কিশোর। তাহলে সব রহস্যেরই সমাধান হয়ে যেত।
হু-হা চিন্তিত দেখাচ্ছে হোভারসনকে। ব্যাপারটা ভাল করে ভেবে দেখব। এখন আমি উঠি।। দেখি, পাপুর কোন ব্যবস্থা করা যায়। কিনা। হাক স্টিভেন ওরা জামিন হতে রাজি আছে। কাগজপত্র তৈরি করতেও দেরি হবে না। জজ সাহেব একটা কাজে বাইরে গেছেন। তিনি ফিরে এলেই সই করিয়ে নেয়া যায়। হ্যাঁ, আমাকে না জানিয়ে কোন কিছু করে। বোসো না। বিপদে পড়ে যেতে পার। চলি, গুড বাই।
বেরিয়ে গেলেন হোভারসন।
তাড়াতাড়ি আবার মোহরগুলো থলেতে ভরে নিল মুসা। মুখ বেঁধে নিয়ে গিয়ে রেখে এল দোতলায়, নিজেদের ঘরে, সুটকেসে। ফিরে এল নিচের ঘরে।
ঘরে ঢুকল মিসেস ওয়েলটন। খাবার দেবে কিনা জানতে চাইল। দিতে বলল ছেলেরা।
টেবিলে খাবার দেয়া হল। খেতে বসল। ছেলেরা। কাছেই একটা চেয়ারে বসে এটা ওটা বাড়িয়ে দিচ্ছে মিসেস ওয়েলটন। বলি বলি করছে কি যেন। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে বলেই ফেলল, গুপ্তধন খোঁজার জন্যেই তাহলে এসেছে তোমরা। দেখলাম…
ঝট করে মাথা তুলল কিশোর। কি দেখেছেন?
সত্যি বলছি, চুরি করে কারও কিছু দেখার অভ্যোস নেই আমার। দেখতে এসেছিলাম, চীফ চলে গিয়েছে কিনা। দেখলাম, বসে আছে, পাশে একগাদা ডাবলুন। ভাবলাম, খুব জরুরী কোন কথা আলোচনা করছ তোমরা। বিরক্ত না করে চলে গেলাম।
একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করল তিন গোয়েন্দা। খাওয়া বন্ধ।
কাউকে বলেছেন একথা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কোন কথা?
আমরা গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছি…
নাহ, এদিক ওদিক মাথা নড়ল মিসেস ওয়েলটন, তেমন কাউকে না। ফোনে শুধু আমার ঘনিষ্ঠ তিন বান্ধবীকে জানিয়েছি। আমারই মত কম কথা বলে। পেটে বোমা মারলেও আমারই মত মুখে তালা লাগিয়ে রাখবে। কাউকে কিছু বলবে না…
হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কয়েকটা মোহর পেয়েছে মুসা আর রবিন। তবে স্কেলিটন আইল্যান্ডে নয়।
আমাকে বোকা বানাতে পারবে না, ইয়ং ম্যান, নিজের বুদ্ধির ওপর খুব বেশি ভক্তি মিসেস ওয়েলটনের। আগামী কাল ভোর থেকেই লোক যেতে শুরু করবে। স্কেলিটন আইল্যান্ডে। গুপ্তধন খুঁজতে… বলতে গিয়েই থেমে গেল। মনে পড়ে গেছে, একটু আগে বান্ধবীদের প্রশংসা করে। বলেছে, মুখে তালা লাগিয়ে রাখবে ওরা। কথা ঘোরানোর চেষ্টা করল, মানে, আমি বলতে চাইছি, যদি আর কেউ শুনে ফেলে। আর কি! চীফ হোভারসনও তো জেনে গেল….
তিনি কাউকে বলবেন না, কথা দিয়েছেন, বলল কিশোর।
ওহ, আমি যাই। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল মিসেস ওয়েলটন। দুধ পুড়ে যাচ্ছে…
কাম সারছে কিশোরের মুখে শোনা বাঙালি বুলি ঝাড়ল মুসা। এতক্ষণে জেনে গেছে হয়ত আদেক শহর আগামী কাল ভোর হতে না। হতেই ভিড় লেগে যাবে কঙ্কাল দ্বীপে। শুটিঙের বারোটা বাজলা সব দোষ আমাদের!
এরপর রাফাত চাচাকে মুখ দেখাব কি করে আমরা বলল রবিন।
লোক ঠেকাতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ফিল্ম কোম্পানির! বলল মুসা। কিশোর, তুমি কিছু বল।
চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে কিশোর। নির্লিপ্ত। মুখ তুলল, একটা বুদ্ধি এসেছে আমার মাথায়। আগে খেয়ে নিই, তারপর বলছি। তোমরাও খেয়ে নাও।
শেষ হল খাওয়া। হাতমুখ ধুয়ে এসে বসল। আবার আগের জায়গায়।
কি বুদ্ধি, বল, জানতে চাইল মুসা।
খুলে গেল দরজা। ঘরে এসে ঢুকলেন মিস্টার আমান, পেছনে পিটার সিমনস।
মিস্টার আমান জানালেন, আগামী কাল সকালেই এসে পৌঁছুবেন। পরিচালক জন নেবার। এসকেপ ছবির শুটিং শুরু হবে।
আঁতকে উঠল মুসা আর রবিন।
কিশোর নির্লিপ্ত। ধীরে ধীরে জানাল, কি ঘটেছে। আগামী কাল সকালে কি ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে সিনেমা কোম্পানি।
মুখ কালো হয়ে গেল পিটার সিমানসের।
গেল, সব সর্বনাশ হয়ে গেলা প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার আমান। পিঙ্গপালের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে গুপ্তধন শিকারির দলা বলে কাউকে বোঝাতে পারব না, মোহর নেই কঙ্কাল দ্বীপে।
বলে বোঝানোর দরকার কি? বলল কিশোর।
ভুরু কুঁচকে গেছে, হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মিস্টার আমান।
একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়, বলল কিশোর। এক কাজ করলেই তো হয়। গুপ্তধন শিকারিদের ছবি তুলে নিন। কোথায় খুঁজছে, কি করছে। না করছে, সব। ট্রেজার হান্টার নাম দিয়ে কম দৈর্ঘ্যের একটা ছবি বানিয়ে ফেলুন। ভাড়া করে লোক এনে গুপ্তধন খোঁজার ছবি বানানো সম্ভব, কিন্তু এত নিখুঁত, এত জ্যান্ত হবে না।