বোবা হয়ে গেছে যেন চার কিশোর। হাঁ করে চেয়ে আছে জোসেফের দিকে।
তোমার শয়তানী খতম, বলল জোসেফ। হোভারসনকে খবর দেয়া হয়েছে। ফিশিংপোর্টে ফিরে গিয়েই তার দেখা পাবে। কপালে তোমার অনেক দুঃখ আছে, পাপালো হারকুস, এই বলে দিলাম।
১৬
পাপালোকে পুলিশে দিল ওরা! বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল রবিন। কাজটা উচিত হয়নি।
হ্যাঁ, আস্তে মাথা দোলাল মুসা। আমার কিন্তু এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, লেন্সগুলো ও চুরি করেছে। কিশোর, তুমি কি বল?
কোন জবাব দিল না গোয়েন্দাপ্রধান, যেন শুনতেই পায়নি। দুই বন্ধুর কাছ থেকে দূরে, লিভিং রুমের আরেক প্রান্তে সোফায় বসে আছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন।
বিকেলের মাঝামাঝি। বাইরে ঝমোঝম বৃষ্টি। সারাদিন বাইরে বেরুতে পারেনি ওরা। বৃষ্টি না থাকলেও অবশ্য পারত না। মিস্টার আমানের কড়া নির্দেশঃ একা কোথাও যেতে পারবে না ওরা। যেতে হলে তাঁকে জানাতে হবে। লোক সঙ্গে দিয়ে দেবেন। গতকাল বিকেলে ছেলেদের অবাধ্যতার ওপর কড়া বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। আন্তরিক দুঃখিত হয়েছেন ওদের কাজে, সেটাও জানিয়েছেন বার বার।
কিশোরা গলা চড়িয়ে ডাকল মুসা। কি বলছি, শুনিছ? আমার ধারণা, লেন্স পাপু চুরি করেনি। তুমি কি বল?
কেশে উঠল কিশোর। এখনও পুরোপুরি যায়নি সর্দি।
না, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। পাপু চুরি করেনি। সাক্ষী প্রমাণ সব ওর বিরুদ্ধেই যাচ্ছে যদিও। ওর ছুরি পাওয়া গেছে ট্রেলারের ভেতর, তাজ্জব কান্ড!
দুই দিন আগে হারিয়েছিল ওটা, বলল রবিন। ও তাই বলেছে।
এখন কেউ বিশ্বাস করবে না একথা, বলেই আবার কাশতে লাগল কিশোর। কাশি থামলে বলল, ধরেই নিয়েছে সিনেমা কোম্পানি, তাদের সমস্যা শেষ। চোর ধরা পড়েছে, আর কি?
কঙ্কাল দ্বীপের রহস্যটা আসলে কি? জিজ্ঞেস করল রবিন। অনুমান করেছ কিছু??
কেউ একজন চায় না, কঙ্কাল দ্বীপে লোক যাতায়াত করুক, কিংবা বাস করুক, বলল কিশোর। এ-ব্যাপারে। আমি শিওর। কিন্তু কেন চায় না, বুঝতে পারছি না এখনও।
দরজায় টোকা পড়ল। সাড়া দিল মিসেস ওয়েলটন। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। পেছনে পুলিশ চীফ হোভারসন। রেনকোট থেকে পানি ঝরছে।
এই যে, ছেলেরা, বলল বাড়িওয়ালি, চীফ কথা বলতে চান তোমাদের সঙ্গে।
মিসেস ওয়েলটন, বলল হোভারসন, ওদের সঙ্গে একটু একা কথা বলতে চাই, প্লীজ…
ওহ, শিওর শিওর, দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল মিসেস ওয়েলটন।
রেনকোটটা খুলে দরজার পাশের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলেন চীফ। সোফায় বসলেন। সিগারেট বের করে ধরালেন ধীরেসুস্থে।
তারপর, ছেলেরা, কথা শুরু করলেন হোভারসন, পাপুর পজিশন খুব খারাপ। লেন্স দুটো পাওয়া গেছে। ওর বিছানার তলায়।
কিন্তু পাপালো চুরি করেনি, রাগ প্রকাশ পেল রবিনের গলায়। আমরা জানি, ও করেনি।
হয়ত করেনি, মাথা ঝোঁকালেন হোভারসন। কিন্তু সব সাক্ষীপ্রমাণ ওর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সবাই জানে, বাবার চিকিৎসার জন্যে গ্ৰীসে ফিরে যাবার জন্যে, পাগল হয়ে উঠেছে ও।
উঠেছে, ঠিক, বলল মুসা। কিন্তু সেজন্যে চুরি করবে না সে। তাছাড়া টাকা তার আছে। এবং আরও পাবার সম্ভাবনা আছে।
তাই। তিনজনের দিকেই একবার করে তাকালেন হোভারসন। ওর টাকা আছে? আরও পাবার সম্ভাবনা আছে! কি করে?
মুখ ফসকে কথা বেশি বলে ফেলেছে, এখন আর ফেরার পথ নেই। মোহরের কথা বলতেই হবে চীফকে। তবু চুপ করে রইল মুসা।
ছেলেরা, আবার বললেন হোভারসন, পাপুকে আমি পছন্দ করি, তার ভাল চাই। এখন বলত, সত্যি সত্যি কি ঘটেছিল গতকাল। বিপদে পড়েছি, এবং উদ্ধার করে আনা হয়েছে, ঠিকই। কিন্তু কেন পড়েছ বিপদে? কেন গিয়ে ঢুকেছ ওই সুড়ঙ্গে। শুধুই কৌতূহল? নিশ্চয় না। হয়ত তোমাদের ভয়, গুপ্তধনের কথা ফাঁস হয়ে গেলে দলে দলে ছুটে আসবে লোক। শুটিঙে বিন্ন ঘটাবে। কিন্তু পাপুর দিকটাও ভেবে দেখতে হবে তোমাদের। ওকে হাজত থেকে বের করে আনতে চাও না?
দ্বিধা করছে তিন গোয়েন্দা। শেষে মন স্থির করে নিল কিশোর। হ্যাঁ, স্যার, চাই। মুসার দিকে ফিরল। থলেটা নিয়ে এসো।
দোতলায় চলে গেল মুসা। পাপালোর থলেটা নিয়ে ফিরে এল। থলের মুখ খুলে হোভারসনের পাশে ঢেলে দিল মোহরগুলো। মৃদুটুংটাং আওয়াজ তুলে সোফায় পড়ল পয়তাল্লিশটা স্প্যানিশ ডাবলুন।
বড় বড় হয়ে গেল হোভারসনের চোখ। মাই গাডা জলদস্যুর গুপ্তধন। পাপু পেয়েছে?
পাপু, মুসা আর রবিন, বলল কিশোর। দ্য হ্যান্ডের গুহায়। ফিরে গিয়ে আরও খোঁজার ইচ্ছে আছে পাপালোর। সেজন্যেই গোপন রেখেছি ব্যাপারটা।
হুমমা ঝট করে চোখ তুললেন হোভারসন। আমিও তোমাদের দলে। মোহর পেয়েছ, কাউকে বলব না।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, স্যার, আগের কথার খেই ধরল রবিন, টাকার জন্যে চুরি করার দরকার নেই পাপুর।
কিন্তু, বললেন হোভারসন, তাতে প্ৰমাণ হয় না, পাপু চুরি করেনি। মোহরগুলো পাওয়া গেছে লেন্স চুরি যাবার পর। পাপালো তখন জানত না, মোহর পাবে।
ঠিকই বলেছেন পুলিশ চীফ। মুখ কালো করে ফেলল। আবার রবিন। সজোরে পকেটে হাত ঢোকাল মুসা।
রুমাল বের করা নাক মুছল কিশোর। তারপর বলল, রাফাত চাচা, মিস্টার সিমনস আর মিস্টার গ্র্যাহামের ধারণা স্কেলিটন আইল্যান্ডের রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে। তাঁরা মনে করছেন, যত নষ্টের মূলে ছিল ওই পাপু। কিন্তু, তাঁরা ভুল করছেন। সমস্ত শয়তানীর পেছনে রয়েছে অন্য কেউ। ঘটনাগুলো সব খতিয়ে দেখলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। গোড়া থেকেই শুরু করছি. কেশে উঠল সে।